তুরস্কে বাস স্টেশনকে বলে ওটোগার। কোনিয়ার ওটোগারে গিয়ে চমকে যাবার মতো পরিস্থিতি। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বাস স্টেশন মানেই ভিড়, কোলাহল। কোনিয়া বাস স্টেশন এর সম্পূর্ণ বিপরীত! সুনসান নীরবতা, বাস আসছে, যাত্রী উঠছে, ছেড়ে যাচ্ছে কোনো হইচই নেই। 

কোনিয়া বাস স্ট্যান্ড বেশ বড়। সেখানে ৪০ টির বেশি নাম্বার রয়েছে। প্রতি নাম্বারের সামনে বাসগুলো এসে অপেক্ষা করে। সেখান থেকে ইস্তাম্বুল, আঙ্কারা, ইজমির, আন্তালিয়া সহ বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ত্যাগ করে। এক নাম্বার থেকে আরেক নাম্বারের দূরত্ব কয়েক মিটার হলেও নেই কোনো হুড়োহুড়ি। 

বাস, রেল স্টেশন মানেই অসংখ্য মানুষের ভিড় এবং নোংরা পরিবেশ। উপমহাদেশের মানুষের মনে এই চিত্র আঁকা। তুরস্কের বাস স্টেশন সেই চিত্র বদলে দিয়েছে। কোনিয়া বাস স্টেশন অত্যন্ত পরিপাটি। একদম ঝকঝকে, চকচকে। নোংরা চোখেই বাঁধল না। শুধু কোনিয়া স্টেশন নয়, ইস্তাম্বুল আসার পথে যে কয়েকটি স্টেশন চোখে পড়েছে সব জায়গায় একই চিত্র। 

ইসলামিক সলিডারিটি গেমসের পর্দা নেমেছে। গেমসে আসা অনেকেই কোনিয়া থেকে ইস্তাম্বুলের পথে। তুরস্কে এসে ঐতিহাসিক ইস্তাম্বুলে সবাই এক বার হলেও ঢুঁ মারতে চায়। তাই কোনিয়া থেকে ইস্তাম্বুলগামী যাত্রীর চাপ ছিল বেশি। 

কোনিয়া থেকে ইস্তাম্বুলের দূরত্ব ৭০০ কিলোমিটারের বেশি। বেশ দূরের পথ। এত দূরের পথ বাস ভ্রমণে ক্লান্তি আসা স্বাভাবিক। সেখানেও ধারণা বদলে দিয়েছে। বাস কোনিয়া ছাড়ার সময় থেকে ইস্তাম্বুল পৌঁছানো পর্যন্ত একই গতিতে এগিয়েছে। কখনো গতি কম-বেশি হয়নি। 

৭০০ কিলোমিটার পথ চলায় কানে হর্ণের শব্দ আসেনি একবারও। মহাসড়কে গাড়ির পর গাড়ি চলছে। কেউ কারোর চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে, পাশ কাটিয়ে আগে যেতে হবে এমন মানসিকতাও নেই। ফলে এত লম্বা পথ ভ্রমণে কখনো হার্ডব্রেকের ঝক্কিও পোহাতে হয়নি। 

বাসের অভ্যন্তরেও রয়েছে যাত্রীদের আরামদায়ক ব্যবস্থা। ক্লান্তি যেন ভর না করে এজন্য প্রতি সিটের সামনে রয়েছে ডিসপ্লে। পছন্দ মতো গান, সিনেমা দেখার সুযোগ। লম্বা ভ্রমণে ঘুম তাড়ানোর জন্য কফি,জুস সহ নানা খাবার আইটেম রয়েছে ঘণ্টায় ঘণ্টায়। এরপরও ঘুম আসলে প্রতিটি আসনই স্লিপিং মুডে নেয়ার সুব্যবস্থা রয়েছে। 

কোনিয়া থেকে ইস্তাম্বুল পৌঁছাতে প্রায় দশ ঘন্টার পথ বাসে। সুন্দর রাস্তা, বাস চালানোর ধরন ও বাসের মানে তেমন ক্লান্তি ভর করে না যাত্রীদের শরীরে। এরপরও সবাই বাসের চেয়ে ট্রেনে ভ্রমণের চেষ্টাই বেশি করেন। ট্রেনের ভাড়া ও সময় উভয়ই বাসের চেয়ে কম। ফলে ট্রেনের টিকেটের চাহিদা সব সময় তুঙ্গে থাকে। 

এজেড/এটি/এনইউ