বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) বাস্কেটবল কোচ খালেদ মাহমুদ আকাশ। গত বছর আগস্টে পারিবারিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর এটাই আকাশ ও আঞ্জুমান আরা খানম মাহজাবিনের প্রথম ঈদ। বিশেষ এই মুহূর্তে দুইজন দুই জায়গায় অবস্থান করছেন। 

আকাশ ভারতে ডিপ্লোমা ইন কোচিং বাস্কেটবল কোর্স করছেন। সেই কোর্স সম্পন্ন করতে ব্যাঙ্গালুরুতে আছেন। তার স্ত্রী মাহজাবিন ঢাকায় মিরপুরে। ফলে ঈদের পর প্রথম ঈদ দুই জন ভিন্ন জায়গায়। আগেও একা ঈদ করলেও এবার শূন্যতা অনুভব করছেন অনেক আকাশ, ‘আসলে বিয়ের পর প্রথম ঈদ স্ত্রী ছাড়া উদযাপন করা খুবই কঠিন। যখন ভারতে আসার সিদ্ধান্ত হয়, তখন ওর খুব মন খারাপ হয়েছিল। পরবর্তীতে আমার ভবিষ্যত ও ক্যারিয়ারের বিষয় চিন্তা করে হাসিমুখেই বিদায় দিয়েছিল।’

বিয়ের পরপরই এই কোর্সে আসার ইচ্ছে ছিল না আকাশের। তবে অনেকটা কাকতালীয়ভাবেই এই কোর্সে অংশগ্রহণ এই বাস্কেটবল তারকার, ‘এই ডিপ্লোমায় ভারত ও বাংলাদেশের অনেকেই পরীক্ষায় দিয়েছিল। আমার পরিকল্পনা ছিল আরো একটু পরে করার। এমনি শখের বশে পরীক্ষা দেই। ভারত-বাংলাদেশ মিলিয়ে আমি প্রথম হয়ে যাই পরীক্ষায়। ফলে তখন আর এড়ানোর সুযোগ ছিল না।’

ভিসা জটিলতায় আকাশের ভারতে পৌঁছাতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। রমজান মাস পুরোটাই আলাদা কেটেছে দু’জনের। ইফতারের সময় স্ত্রীকে অনেক মিস করেছেন আকাশ, ‘আমাদের মাত্রই বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর গত কয়েক মাস আমরা একসঙ্গেই ছিলাম। হঠাৎ এই বিচ্ছিন্নতায় দুই জনেরই মন খারাপ। ইফতারে ও অনেক আইটেম তৈরি করে ছবি পাঠায়। ছবিতেই সান্ত্বনা খুঁজে নেই।’

আকাশের স্ত্রী মাহজাবিন গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজীতে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। মে মাসে মাস্টার্সে ভর্তি হবেন। বিয়ের আগে খেলাধূলায় তেমন আকৃষ্ট করতো না তাকে। তবে বিয়ের পর আকাশের সঙ্গে ধানমন্ডি বাস্কেটবল কোর্টে খেলা দেখতে গিয়েছিলেন কয়েকবার। আকাশের কর্মস্থল বিকেএসপির কোয়ার্টারে উঠেছিলেন এই মার্চেই। কোয়ার্টারে উঠার কিছু দিন পর আবার বাসায় ফেরায় খানিকটা বিষণ্ণ আকাশের স্ত্রী, ‘বিকেএসপিতে মাত্র আমরা সংসার শুরু করেছিলাম। তখনই ও দেশের বাইরে গেল। এজন্য আবার বাবার বাসায় ফিরতে হলো।’

ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই কোর্স এত দিন অনলাইনে করলেও সম্প্রতি তিনি ভারত থেকেই অংশগ্রহণ করছেন। এই কোর্স আরো কয়েক মাস চলবে। ফলে কোরবানির ঈদও ভারতে করার সম্ভাবনা আকাশের, ‘এখন পর্যন্ত যে সূচি তাতে কোরবানির ঈদও এখানে করতে হতে পারে। ছুটির কোনো সম্ভাবনা তৈরি হয়নি।’

এক সময় বাস্কেটবল বাংলাদেশের জনপ্রিয় খেলা ছিল। এখন কালের বিবর্তনে জনপ্রিয়তা ও মানে পিছিয়ে পড়েছে। আকাশ বিকেএসপিতে বাস্কেটবলে ভর্তি হয়েছিলেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে জাতীয় দলে খেলেন। খেলাধূলার পাশাপাশি পড়াশোনাও করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী শিক্ষা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। ঢাকসু নির্বাচনে ক্রীড়া সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছিলেন। বয়স এখনো ত্রিশের নিচে থাকলেও কোচিংয়ে এসেছেন আকাশ। এর কারণ সম্পর্কে বলেন, ‘বাংলাদেশে বাস্কেটবলের কাজের সুযোগ কম। বিকেএসপিতে নিয়োগ হয় অনেক দিন পরপর। আমার মাস্টার্সের পরপর বিকেএসপিতে বাস্কেটবল নিয়োগের প্রজ্ঞাপন হই। সব কিছু বিচার বিবেচনা করেই কোচিংয়ে এসে পড়ি।’

কোচিংয়ে আসলেও তিনি এখনো খেলা ছাড়েননি। গত বছর প্রিমিয়ার লিগেও খেলেছেন এবং দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন।

এজেড/এটি