মোহামেডানের সহকারী কোচকে পাঠানো নিষেধাজ্ঞার চিঠি

২৫ মে হকি ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির সভায় খেলোয়াড়, কোচ ও কর্মকর্তাদের সতর্ক থেকে শুরু করে আজীবন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত এসেছিল। আর্থিক জরিমানাও করা হয়েছিল কয়েকটি ক্লাবকে। এক মাসেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর গত দুই-এক দিন ধরে কেউ কেউ হোয়াটসঅ্যাপে সেই শাস্তির চিঠি পেয়েছেন।

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রাসেল খান বাপ্পি সদ্য সমাপ্ত প্রিমিয়ার বিভাগ হকি লিগে গোলরক্ষক কোচ ছিলেন মোহামেডান ক্লাবের। তিনিও ৫ ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন। সেই চিঠি গতকাল হোয়াটসঅ্যাপে পেয়ে চরম বিরক্তি ও নানা প্রশ্ন উত্থাপন প্রকাশ করেছেন বাপ্পি, ‘ফেডারেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাস্তির চিঠি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছে। এ রকম গুরুত্বপূর্ণ চিঠি কি হোয়াটসঅ্যাপে দেওয়ার বিষয়? এটা ক্লাব বা সরাসরি ব্যক্তির ঠিকানায় হার্ড কপি প্রেরণ করবে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা তার পক্ষের কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে রিসিভ করবে। এটা তো একেবারে সাধারণ অফিসিয়াল বিষয়। আর যে চিঠি দিয়েছে সেখানেও বেশ কয়েকটি বানান ভুল। ডিসিপ্লিনারি সংক্রান্ত চিঠিরই ডিসিপ্লিন নেই।’

ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক আরিফুল হক প্রিন্স লিগে মোহামেডানের ম্যানেজার ছিলেন। তিনি ক্লাব কর্মকর্তা হিসেবে আগামী ৪ বছর নিষিদ্ধ হয়েছেন ডাগআউটে। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ স্বাক্ষরিত চিঠি ৮ জুনের। আজ (বৃহস্পতিবার) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাপে চিঠি পাওয়ায় ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের সমালোচনাই করলেন যুগ্ম সম্পাদক, ‘জিমি লিগে এক ম্যাচ খেলতে পারেনি, সেই চিঠি ক্লাবে সঙ্গে সঙ্গে পাঠিয়েছিল ফেডারেশন। আর একজন যুগ্ম সম্পাদক চার বছর ক্লাবের হয়ে ডাগআউটে থাকতে পারবে পারবে না, সেই চিঠি এক মাস পর ক্লাবে না দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে প্রেরণ করল। এতেই প্রমাণ হয় সাধারণ সম্পাদকের সাংগঠনিক অদক্ষতা।’

বাংলাদেশ হকির অন্যতম আইকন রাসেল মাহমুদ জিমি। তিনিও হোয়াটসঅ্যাপে চিঠি পেয়েছেন। অনেকে হোয়াটসঅ্যাপে পেলেও আবার এখনও অনেকেই পাননি। পুলিশ ক্লাবের কোচ মাকসুদ আলম হাবুল ২ ম্যাচ, উষা ক্লাবের ম্যানেজার ওয়াজিদ হোসেনকে সতর্ককরণ ও আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। হাবুল, ওয়াজিদ ও আজাদ স্পোর্টিংয়ের সাধারণ সম্পাদক মান্নান একই সুরে বলেন, ‘ফেডারেশন থেকে এখনও কোনো চিঠি পাইনি।’

জরিমানা, ম্যাচ ও বাৎসরিক নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ৫ জন আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্তও এসেছিল ২৫ মে’র নির্বাহী সভায়। মোহামেডানের কোচ গোপীনাথান, ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজেদ এ আদেল, সাবেক সদস্য তারেক আদেল, মিতুল ও মোহামেডানের পরিচালক জামাল রানা হকি অঙ্গন থেকে আজীবন নিষিদ্ধ হয়েছেন। তারেক আদেল ফেডারেশন থেকে এখনও কোনো চিঠি পাননি। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত আক্রোশেই আজীবন নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমি এখনও কোনো চিঠি পাইনি।’

হকি তো বটেই, বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে এক সভায় ৩১ জনের অধিক শাস্তির সিদ্ধান্ত প্রদানের ঘটনা একেবারেই বিরল। ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে কারা আছেন, কোন ধারায় শাস্তি দিয়েছেন এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেক। শোকজ বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কয়েক বছর মেয়াদে কিংবা আজীবন নিষোধাজ্ঞার সিদ্ধান্তে ক্রীড়াঙ্গনে তীব্র সমালোচনা চলছে এখনও। এরপর নতুন আলোচনা সেই শাস্তির চিঠি এখনও না পাওয়া।

হকি ফেডারেশন থেকে দেওয়া ৩১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির নোটিশ

হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদের দাবি– সংশ্লিষ্টদের চিঠি অনেক আগেই প্রেরণ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে বিদেশি খেলোয়াড় ও কোচদের যে মেইল রয়েছে সেই মেইলে পাঠিয়েছি, শাস্তিপ্রাপ্ত খেলোয়াড় ও কোচদের চিঠি এশিয়ান হকি ফেডারেশনেও দেওয়া হয়েছে। দেশি খেলোয়াড় ও কোচদের আমাদের কাছে যে স্থায়ী ঠিকানা রয়েছে, সেই ঠিকানায় চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে।’ 

২৫ মে নির্বাহী সভায় সিদ্ধান্ত হলেও বেশ কয়েকটি চিঠিতে ইস্যু তারিখ ৮ জুন দেখা গেছে। শাস্তিপ্রাপ্ত কয়েকজনের স্থায়ী ঠিকানা পুরান ঢাকায়। যা হকি ফেডারেশন থেকে বেশ কাছেই। দুই সপ্তাহ পর চিঠি স্বাক্ষরিত/ইস্যু হলেও শাস্তিপ্রাপ্তদের কেউ এখন পর্যন্ত চিঠি হাতে-কলমে/সশরীরে বুঝে পেয়েছেন বলে জানা যায়নি। সম্প্রতি কেউ কেউ হোয়াটসঅ্যাপে পাচ্ছেন, অনেকে আবার তাও পাচ্ছেন না। বিদেশি খেলোয়াড় ও কোচরা আদৌ পেয়েছেন কি না এটি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

খেলোয়াড়, কোচ ও কর্মকর্তারা অভিযুক্ত/শাস্তি পেয়েছেন ক্লাবের কর্মকাণ্ডে। সেই শাস্তির চিঠি ক্লাবে না গিয়ে ব্যক্তির ঠিকানায় প্রেরণ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। ব্যক্তিগত ঠিকানায় প্রেরণ করলেও গুরুত্বপূর্ণ চিঠির প্রাপ্তি স্বীকারও নেই ফেডারেশনের কাছে। এই প্রসঙ্গে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ফেডারেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অবশ্যই প্রাপ্তি স্বীকারযোগে চিঠি প্রেরণের ব্যবস্থা করা উচিৎ ছিল। কাউন্সিলরশিপ চিঠি প্রেরণ করলে আমরা প্রাপ্তি স্বীকার পাই, এই চিঠির ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিৎ ছিল।’

হকি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা হলেও এখনও মূলত অপেশাদার। তাই হকি ফেডারেশনের প্রশাসনিক কাজও খুব পেশাদারিত্ব নেই। দেশের অন্যতম শীর্ষ ও পেশাদার ক্রীড়া সংস্থা বাফুফেও এই সংক্রান্ত বড় অপেশাদার উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল। ২০২৩ সালের ১৪ এপ্রিল ফিফা বাফুফের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে ২ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল। বাফুফে ১৭ এপ্রিল জরুরি সভায় সোহাগকে ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকাণ্ড থেকে ভবিষ্যতে সম্পৃক্ত না করার সিদ্ধান্ত নেয়। আজীবন নিষেধাজ্ঞার সেই চিঠি বাফুফে ইস্যু করেছিল ৫৮ দিন পর ১৪ জুন। 

এজেড/এএইচএস