অনূর্ধ্ব-২১ হকি পুরুষ দল সিঙ্গাপুর থেকে এএইচএফ কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফিরল মাত্র। সেই দলের অধিকাংশ খেলোয়াড় নিয়েই বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন তাইওয়ানে সিনিয়র দলের আমন্ত্রিত টুর্নামেন্টে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ২৬-৩১ জুলাই তাইওয়ানে আমন্ত্রণমূলক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে জাপান, কোরিয়া, চীনসহ এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশের অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে। 

এ টুর্নামেন্ট উপলক্ষ্যে ৭-৮ জুলাই হকি দলের ক্যাম্প শুরু হবে। ওই ক্যাম্পে সিঙ্গাপুরে খেলে আসা অ-২১ দলের সঙ্গে সিনিয়র ৬-৭ জন খেলোয়াড়কে ডাকবে ফেডারেশন। সেই সিনিয়র তালিকায় নেই দেশের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় রাসেল মাহমুদ জিমি, পুষ্কর ক্ষিসা মিমোসহ আরও কয়েকজন। পারফরম্যান্সের চেয়ে তাদের না থাকার কারণ ‘শৃঙ্খলা’। 

তাইওয়ান দল প্রসঙ্গে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ বলেন, ‘কয়েক মাস পরই জুনিয়র এশিয়া কাপ। ওই টুর্নামেন্টে শীর্ষ চারের মধ্যে থাকতে পারলে জুনিয়র বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ রয়েছে। তাই আমরা সিঙ্গাপুরের চ্যাম্পিয়ন দলকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। এর সঙ্গে কয়েকজন সিনিয়র। যারা শৃঙ্খলাজনিত কারণে শাস্তি পেয়েছেন, তাদের জাতীয় দলে বিবেচনা করা হয়নি। গত বছর এশিয়ান গেমসে মিমো-জিমি ছাড়া বাকি সবাই থাকছেন তাইওয়ানের প্রাথমিক দলে।’

রাসেল মাহমুদ জিমি, মিমোসহ আরও কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড় প্রিমিয়ার লিগে ম্যাচের কিছু ঘটনার জন্য ফেডারেশন থেকে শাস্তি পেয়েছেন। ঘরোয়া লিগে ক্লাবের ম্যাচের জন্য শাস্তি পেলেও সেই নিষেধাজ্ঞার কোপ পড়েছে জাতীয় দলেও। ফুটবলেও জিকো, তপুরা মদকাণ্ডে ক্লাব থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার পর বাফুফে জাতীয় দলে ডাকেনি। বাফুফে এ নিয়ে একটি প্রজ্ঞাপনই জারি করেছিল। এবার হকি ফেডারেশনও সেই পথে হেঁটেছে। 

জিমো-মিমোর মতো তারকা না থাকলেও, ঢাকা লিগের অন্যতম সেরা পারফর্মার সোহানুর রহমান সবুজ, রোমান সরকার ও মাহবুব দলে আছে। তারা জার্মান লিগ খেলেছেন। সেই লিগে তাদের দল চ্যাম্পিয়নও হয়েছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে দেশে ফিরে জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।

ফুটবলে প্রাথমিক দল, একাদশ গঠন, খেলোয়াড় পরিবর্তন সব কিছুই করেন হেড কোচ। ক্রিকেট ও হকিতে প্রাথমিক দল ডাকেন নির্বাচক কমিটি। দেশের অন্যতম তৃতীয় খেলায় এক বছরের বেশি সময় নেই কোনো নির্বাচক কমিটি। হকি ফেডারেশনের বর্তমান কমিটির মেয়াদ এক বছরের বেশি পেরিয়ে গেলেও নির্বাচক কমিটি গঠন হয়নি। এই প্রসঙ্গে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের নির্বাচক কমিটিসহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয়নি। গত এক বছরের মধ্যে আমাদের নির্বাহী কমিটির সভা মাত্র তিনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এক সভায় নির্বাচক কমিটি নিয়ে আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পায়নি। অ্যাডহক ভিত্তিতে কয়েকজন বিশেষভাবে দায়িত্ব পালন করছে। সামনের নির্বাহী কমিটির সভায় আম্পায়ার, নির্বাচকসহ আরও কয়েকটি কমিটি গঠন হবে।’ 

নির্বাচক কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে না থাকলেও যুগ্ম সম্পাদক এহসান রানা, সদস্য খাজা তাহের লতিফ মুন্না, কোষাধ্যক্ষ মাহমুদুল হক এবং পদাধিকার বলে সাধারণ সম্পাদক অ্যাডহক ভিত্তিতে কাজ করছেন। হকি অঙ্গনের গুঞ্জন– তিন জনই সাধারণ সম্পাদকের অত্যন্ত আস্থাভাজন এবং সাধারণ সম্পাদকের পছন্দ-অপছন্দই বেশি প্রাধান্য পায় সেখানে।

জাতীয় হকি দলের সাবেক কোচ গেরহার্ড পিটার সম্প্রতি বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। আসন্ন তাইওয়ান সফরে হেড কোচ হিসেবে যাবেন তিনি। এর আগে তিন-চার দিনের মধ্যেই আসবেন বাংলাদেশে। তার সহকারী থাকবেন আশিকুজ্জামান। মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে হবে অনুশীলন। টুর্নামেন্টের আয়োজক তাইওয়ান আবাসন, খাবার ও স্থানীয় যাতায়াত ব্যয় বহন করবে। বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন বিমান ভাড়া জোগাড়েই ব্যতিব্যস্ত বলে জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক, ‘দুই সপ্তাহ ক্যাম্প করলে কয়েক লাখ টাকা প্রয়োজন। আর বিশ জনের দলের জন্য বিমানভাড়াই ২০ লাখ টাকার ওপর। সেই অর্থ যোগাড়ের চেষ্টা করছি।’ 

এজেড/এএইচএস