ছবি: বামে মামুন, ডানে কামাল

ক্লাব কাপ হকির আজ দুই সেমিফাইনাল। মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ঢাকা মেরিনার ইয়াংস ও উষা ক্রীড়া চক্র। এই ম্যাচে প্রথমবারের মতো দুই ডাগ আউটে থাকবেন দুই বন্ধু রফিকুল ইসলাম কামাল ও মামুনুর রশীদ। 

খেলোয়াড়ি জীবন থেকেই দু’জনের বন্ধুত্ব। খেলা ছাড়ার পর সেই বন্ধুত্বটা আরো প্রগাঢ হয়েছে। প্রায় দেড় যুগ মামুন-কামাল জুটি ছিল উষার ডাগ আউটে। উষার ঘরের ছেলে মামুন এবার মেরিনার্সের কোচ আর কামাল উষার ম্যানেজারই রয়েছেন।

সেমিফাইনালের বাইরে দুই বন্ধুর ভিন্ন দ্বৈরথটাও আলোচিত। উষার ম্যানেজার কামাল বলেন, ‘আমাদের জন্য একটু ভিন্ন অভিজ্ঞতাই। দীর্ঘদিন আমরা এক সঙ্গে পরিকল্পনা করছি। আজ দুই জন দুই পাশে থাকব। দুই জন এখন দুই দলে হলেও আমাদের সঙ্গে প্রতিদিনই নানা বিষয়ে কথা হয়।’ মেরিনার্সের কোচ মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আসলেই বিষয়টি আমাদের দুই জনের জন্যই বিশেষ। কখনো এমন ঘটেনি, যা আজ ঘটবে। মাঠের দ্বৈরথটা সাময়িক, বন্ধুত্ব চিরদিনের।’

 বা থেকে চার হকি তারকা (আব্দুস সাদেক, ফয়সাল আহসান উল্লাহ, মামুনুর রশীদ ও কামাল)।

কামালের বেড়ে উঠা পুরান ঢাকায়। আরমানিটোলা স্কুল থেকেই হকির হাতেখড়ি তার। জয়পুরহাটের মামুনের হকির আগমন বিকেএসপির মাধ্যমে। ১৯৮৯ সালে জাতীয় দলে অভিষেক মামুনের। বছর তিনেক পর কামালের। বন্ধুত্বের শুরুর স্মৃতি স্মরণ করলেন মামুন এভাবে, ‘১৯৯০-৯১ সময়ে কামালের সঙ্গে পরিচয়। ১৯৯৩ সালে জাতীয় দলের ক্যাম্পে আসলে ঘনিষ্ঠতা শুরু হয়। তাই ক্যাম্পে আসার পরপরই আমাদের বন্ধুত্ব শুরু। আমরা এক সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় দল, ক্লাবে খেলেছি। পুরান ঢাকার অন্যদের চেয়ে কামালের ভিন্নতা অনেক। বিশেষ করে মানুষকে আপন করে নেয়ার অনেক ক্ষমতা তার।’ 

আশি-নব্বইয়ের দশকে হকি মানেই পুরান ঢাকা। কামাল পুরান ঢাকায় বেড়ে উঠেও দূরের জেলা জয়পুরহাটের মামুনের সঙ্গে হয়েছে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব। নিজের বন্ধুত্ব সম্পর্কে বলেন, ‘পুরান ঢাকায় হকির পরিবেশেই আমি বেড়ে উঠেছি। ব্যক্তি জীবনে ফয়সাল ( আরেক সাবেক হকি খেলোয়াড় ) আর হকিতে মামুন দুইজনই আমার সেরা বন্ধু। মামুন খেলোয়াড়,কোচ হিসেবে যেমন বড় মাপের, বন্ধু হিসেবেও এর চেয়ে আরো অনেক বড়। ’

দুই জনই বাংলাদেশের হকির বড় তারকা। কামাল ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গোলের পর গোল করেছেন। খেলা ছেড়েছেন অনেক দিন আগে। এখনো হকির সুপারস্টার তকমা কামালের সঙ্গে। মামুন ডিফেন্ডার হয়েও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ভিন্ন উচ্চতায়। দেশের গন্ডি পেরিয়ে এশিয়ান হকি একাদশেও খেলেছেন। হকির দুই সুপারস্টারের বন্ধুত্বের গল্প গোটা ক্রীড়াঙ্গনেই।

মামুন তার ক্যারিয়ারের দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন আবাহনীর জার্সিতে। শেষ দুই মৌসুম উষায় খেলে অবসর নিয়েছেন। এখান থেকেই কোচ মামুনের যাত্রা শুরু। অনেকটা ফুটবলার ইমতিয়াজ সুলতান জনির মতো। সোনালী সময় আবাহনীতে খেলে মোহামেডান থেকে অবসর নিয়ে সাদা-কালো দলের কর্মকর্তা হওয়া।

উষা কামালের পাড়ার ক্লাবই। আবাহনী-মোহামেডানের টান উপেক্ষা করে দীর্ঘদিন এখানেই খেলেছেন কামাল। মাঝে মেরিনার্স-মোহামেডানে খেললেও ক্যারিয়ারের ইতি ঘটিয়েছেন উষাতেই। খেলা ছাড়ার পর থেকে ম্যানেজারের দায়িত্বে কামাল। কামাল-মামুন উষার কোচ-ম্যানেজার জুটিও দীর্ঘ দিন পেরিয়েছে। বিকেএসপির কোচ থাকলেও মামুনকে ঘরোয়া হকিতে বিশেষ পরিচয় দিয়েছে উষা। 

২০১৮ সালের দলবদলে উষা অংশগ্রহণ করেনি। মামুন ঐ বছর কোচিংও করাননি। ২০২১ সালেও হকি লিগে খেলেনি উষা। ঐ বছর মামুন মেরিনার্সে কোচিং করিয়ে হকির ইতিহাসে ক্লাব কাপ ও লিগ চ্যাম্পিয়ন করান। ২০১৮ সালে ফেডারেশনের সঙ্গে মনোমালিন্যে উষা দলবদল না করায় প্রথম বিভাগে অবনমিত হয়। গত বছর প্রথম বিভাগ থেকে উষাকে চ্যাম্পিয়ন করিয়ে মামুনই আবার প্রিমিয়ারে ফিরিয়েছেন। উষাকে মামুন ফেরালেও মামুন আর উষায় ফিরেননি। 

তাই আজ মেরিনার্স-উষা মুখোমুখিতে দুই বন্ধুর দ্বৈরথ। এ দিন আবার দুই যুগ আগে ফিরে গেলেন মামুন,’ কামাল দুর্দান্ত স্কোরার। আবাহনীতে যখন খেলতাম,তখন পরিকল্পনা থাকত কিভাবে কামালকে আটকাব। অনেক দিন পর আজ আবার অন্য ভূমিকায় কামালের বিপক্ষে পরিকল্পনা করতে হবে।’

মেরিনার্স মোহামেডানকে গ্রুপ ম্যাচে ৫ গোল দিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে। অন্য দিকে উষা আবাহনীর বিপক্ষেও বড় ব্যবধানেই হেরেছে। আজকের ম্যাচের আগে উষায় ভারতীয় খেলোয়াড় যোগ দেয়ায় হাল্কা করে দেখছেন না মেরিনার্সের কোচ, ‘সেমিফাইনাল সম্পূর্ণ ভিন্ন ম্যাচ। এখানে আগের ম্যাচের পারফরম্যান্স কোনো ভাবেই বিবেচ্য নয়। উষা আগের ম্যাচে বড় ব্যবধানে হারলেও এই ম্যাচে ফিরে আসার সম্ভাবনা আছে।’ কামালও বন্ধুকে সমীহ করে বলছেন, ‘মেরিনার্স বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। মামুন অত্যন্ত ভালো কোচ। এরপরও আমরা তাদের সঙ্গে ভালোই প্রতিদ্বন্দ্বীতা করব।’

মেরিনার্স-উষার ম্যাচের পরপরই আরেক সেমিফাইনালে নামবে দুই ঐতিহ্যবাহী দল আবাহনী-মোহামেডান। ঐ ম্যাচেও রয়েছে দুই বন্ধুর লড়াই। ফেডারেশনের দুই যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব এহসান রানা আবাহনীর ও আরিফুল হক প্রিন্স মোহামেডানের টেন্টে থাকবেন। দুই জনই বিকেএসপিতে এক সঙ্গে বেড়ে উঠা। ব্যক্তি জীবনে ঘনিষ্ঠ বন্ধু থাকলেও দুই জনের দুই ক্লাবের দ্বৈরথ অবশ্য পুরনোই। 

এজেড/জেএ