স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে অনেক ফেডারেশন প্রীতি ম্যাচ বা টুর্নামেন্ট আয়োজন করে। আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসে অবশ্য ক্রীড়াঙ্গনে তেমন কর্মসূচি দেখা যায় না। হকি ফেডারেশন আগে ফেব্রুয়ারি মাসে টুর্নামেন্ট আয়োজন করত। যার নাম শহীদ স্মৃতি হকি টুর্নামেন্ট। 

সাবেক হকি খেলোয়াড় ও বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সিনিয়র সদস্য মোঃ ইউসুফ আলী বলেন, ‘স্বাধীনতা পর থেকে হকি ফেডারেশন ভাষা শহীদদের স্মরণে শহীদ স্মৃতি হকি টুর্নামেন্ট আয়োজন শুরু করে। প্রথম দিকে নিয়মিত ছিল এরপর মাঝে বিরতি ছিল এরপর আবার অনিয়মিতভাবে হয়েছে।’

১৯৭৩ সাল থেকে ৮১ পর্যন্ত নিয়মিত ছিল এই টুর্নামেন্ট। এরপর নানা বিরতির মধ্য দিয়ে গেছে টুর্নামেন্টটি। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২০ সালে। চলতি বছর এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল হকি ফেডারেশনের লিগ কমিটি। ফেব্রুয়ারি মাসেই কয়েকটি ক্লাবের দাবির প্রেক্ষিতে শহীদ স্মৃতি টুর্নামেন্টের পরিবর্তে আগামীকাল থেকে ক্লাব কাপ দিয়ে শুরু হচ্ছে হকির নতুন মৌসুম। 

জাতীয় দলের সাবেক তারকা খেলোয়াড় রফিকুল ইসলাম কামাল বলেন, ‘আমাদের ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে এই টুর্নামেন্ট খেলেছি। বেশ আকর্ষণীয় টুর্নামেন্ট ছিল। হঠাৎ এটি অনিয়মিত ও জৌলুসহীন হয়ে পড়ে। এবার আশা করেছিলাম হবে শেষ পর্যন্ত হচ্ছে না।’ সত্তর-আশির দশকে শহীদ স্মৃতি টুর্নামেন্টে আবাহনী-মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। পরবর্তীতে এই টুর্নামেন্ট সার্ভিসেস দল নির্ভর হয়। মাঝে মধ্যে স্কুল হকিও হয়েছে শহীদ স্মৃতি নামে। 

হকি ফেডারেশন ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে অন্য কোনো ফেডারেশন ভাষা দিবস উপলক্ষে কোনো আয়োজন করতে দেখা যায়নি। স্বাধীনতা-বিজয় দিবস উপলক্ষে ফেডারেশগুলোর পাশাপাশি জেলা-বিভাগীয় পর্যায়েও প্রীতি ম্যাচ - টুর্নামেন্ট হয়৷ ভাষা দিবসে তেমনটি হয় না। সাম্প্রতিক সময়ে ঘরোয়া ফুটবল লিগে বসুন্ধরা কিংস ভাষা শহীদদের স্মরণে বাংলা জার্সি পড়ে খেলেছে। বিপিএল ক্রিকেটেও জার্সিতে বাংলা ব্যবহার ও ধারাভাষ্যকারদের পোষাকেও ভাষার মাসে স্মরণ করতে দেখা গেছে। অন্য ফেডারেশনের মধ্যে কেউ ব্যানার টানায় আবার কোনো ফেডারেশন কিছুই করে না। 

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন মোঃ আলমগীর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক পরিচালক। তৃণমূলের পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ের ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা। ভাষা দিবসে ক্রীড়াঙ্গনে পালন সম্পর্কে এই সংগঠক বলেন, ‘ক্রীড়াঙ্গনে এই দিবসে তেমন কর্মকাণ্ড পরিলক্ষিত হয় না। ২১ ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পেয়েছে। ক্রীড়াঙ্গনের পক্ষ থেকেও এই দিনটি উদযাপন বা আয়োজন করা যায়। এজন্য অবশ্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনা ও নির্দেশনা প্রয়োজন।' 

১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। তাই এই দিন অনেকটা শোকের আবহে আচ্ছন্ন ছিল দীর্ঘদিন। এই বিবেচনায় এই দিনে ক্রীড়াঙ্গনে তেমন আয়োজন থাকে না বলে ধারণা ক্রীড়াঙ্গনের অনেকের। তবে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতির পর ক্রীড়াঙ্গনেও দিনটি বিশেষভাবে পালন করতে পারে বলে ধারণা পোষণ করেন অনেকে। 

ক্রীড়াঙ্গনে অনেক স্টেডিয়াম-স্থাপনায় রাজনৈতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নামে রয়েছে। সারা দেশ জুড়ে দু'টির বেশি স্টেডিয়ামে ভাষা সৈনিকদের নামকরণের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। কয়েক বছর আগে ফেনী জেলা স্টেডিয়ামের নামকরণ হয়েছে ভাষা শহীদ আব্দুস সালামের নামে। আর কুমিল্লা জেলা স্টেডিয়ামের নাম দেয়া হয়েছে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে। তিনিই মূলত ভাষা আন্দোলনের ভিত গড়েছিলেন। ১৯৪৮ সালে গণপরিষদে তিনি এক সংশোধনী প্রস্তাবে বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষার দাবি উত্থাপন করেছিলেন।

এজেড/এফআই