টাইবেকারে জোড়া সেভ, শহীদুল তাই বনে গেলেন আবাহনীর উল্লাসের মধ্যমনি/বাফুফে

নাটকীয়তা বললে বোধ হয় বিশেষণে ঘাটতি পড়ে যায়, কম হয়ে যায় অতি নাটকীয় আখ্যা দিলেও। দুটো ভিন্ন অতিরিক্ত সময়ে দুই গোল করে খেলার দৈর্ঘ বাড়ালো দুটো ভিন্ন দল, মাঝে একবার রেফারিও বদল হতে দেখল কমলাপুর স্টেডিয়াম। মূল সময়ে হলো তিন পেনাল্টি, ছয় গোল। তাতেও ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে আলাদা করা গেল না আবাহনী ও সাইফ স্পোর্টিংকে, ৩-৩ ড্রয়ে শেষ হলো মূল ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা।

ম্যাচ গড়ালো টাইব্রেকারে, শেষটা হলো জামাল ভূঁইয়ার পেনাল্টি সেভে। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা এক ম্যাচের দেখাই মিলল ফেডারেশন কাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে। এমন রোমাঞ্চকর এক ম্যাচের টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে জিতে তিন বছর পর আবারও ফেড কাপের ফাইনালে উঠে গেছে আবাহনী। 

নির্ধারিত সময় ম্যাচের স্কোরলাইন ছিল ২-২। অতিরিক্ত সময়ে ৩-৩।  অতিরিক্ত সময়ের চতুর্থ মিনিটে রাকিব হোসেনের গোলে আবাহনী লিড নেয়। নির্ধারিত সময়ের মতো অতিরিক্ত সময়ও খেলায় নাটকীয়তা ছিল বেশ। অতিরিক্ত সময়ের দশ মিনিটের সময় রেফারি সায়মুন সানি পায়ে ব্যথা অনুভব করে মাঠ ছেড়ে দেন। তার পরিবর্তে মাঠে নামেন চতুর্থ রেফারি নাহিদ। সানি চতুর্থ রেফারির দায়িত্ব পালন করেন।

অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে নাইজেরিয়ান এমফোনের শট নিশ্চিত গোল বাচিয়ে দেন আবাহনীর গোলরক্ষক শহিদুল আলম সোহেল। জোরালো শট তিনি বাঁ হাত দিয়ে সেভ করেন। ১২০ মিনিটে অসাধারণ আরও একটি সেভ করেন সোহেল। অতিরিক্ত সময়ের চার মিনিট ইনজুরি সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে সাইফ স্পোর্টিংয়ের বদলি ফুটবলার সাজ্জাদ গোল করলে ম্যাচ টাইব্রেকারে যায়৷ সাইফ স্পোর্টিং যেমন অতিরিক্ত সময়ের অন্তিম মুহূর্তে গোল করে ম্যাচ নিয়েছে টাইব্রেকারে, আবাহনীর দেখানো পথে। এর আগে নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে আবাহনী গোল করে ম্যাচকে অতিরিক্ত সময় নেয়৷

ম্যাচের সবচেয়ে নাটকীয় মুহূর্ত ছিল ৮০ মিনিটে। সাইফ স্পোর্টিং নিজেদের দ্বিতীয় পেনাল্টি পায়। যদিও এই পেনাল্টি নিয়ে আবাহনীর খেলোয়াড়রা যথেষ্ট প্রতিবাদ জানিয়েছিল। তাদের দাবি ছিল সাইফের খেলোয়াড়কে ফাউল নয় এমনিতেই বক্সের মধ্যে পড়ে গেছেন। সাইফের নাইজেরিয়ান এমেকা সেই পেনাল্টি থেকে প্রথম দফায় গোল করলেও রেফারি পুনরায় মারার নির্দেশ দেন। শট নেয়ার আগেই খেলোয়াড়রা ঢুকে পড়েছিলেন বক্সে। পুনরায় নেয়া শটেও এমেকা গোল করেন কিন্তু তিনি সঠিক নিয়মে শট না নেয়ায় কার্ড দেখেন ও পেনাল্টি শটই বাতিল হয়। ঘরোয়া ফুটবলে এমন কিছুর দেখা মেলে না হরহামেশাই। 

সাইফ সেই পেনাল্টি থেকে গোল করতে পারলে ম্যাচে ৩-১ গোলের লিড পেত, তাতে ম্যাচটাও চলে যেত আবাহনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে। সেই লিড না নিতে পারায় উল্টো চাপে পড়ে আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানীর দল। ম্যাচে অনেক সময় নষ্ট হওয়ায় রেফারি ৮ মিনিট ইনজুরি সময় দেন। সেই সময়ের তৃতীয় মিনিটে আবাহনীর কোস্টারিকার ফুটবলার ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস গোল করে ম্যাচকে অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যান। ৮০ মিনিটে পেনাল্টি শট ঠিকঠাক না নেওয়ার আফসোসে পোড়ে সাইফ স্পোর্টিং। 

এর আগে সাইফ স্পোর্টিং দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে লিড নিয়েছিল এই পেনাল্টি থেকেই। সেই পেনাল্টি থেকে এমেকা দারুণভাবে গোল করেছিলেন। ম্যাচের প্রথম ও আবাহনীর প্রথম গোলটিও পেনাল্টি থেকে। আট মিনিটে বক্সের মধ্যে আবাহনীর ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেনকে ফেলে দেন মঞ্জুর হোসেন মানিক। মিডফিল্ড থেকে বক্সের মধ্যে বল ফেলে আবাহনী। মঞ্জুর হোসেন মানিক প্রথমে বল ক্লিয়ার করতে পারেননি। সেই বল বাম প্রান্ত দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। এমন মুহূর্তে রাকিব পেছন থেকে বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে আসেন। মানিক সজোরে বলে শট নিতে গিয়ে রাকিবকে ফাউল করেন। রেফারি সায়মুন সানি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। আবাহনীর অধিনায়ক রাফায়েল অগাস্তো পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি। ১৯ মিনিটে নাইজেরিয়ান এমেকা সাইফকে ম্যাচে ফেরান।

আবাহনী এই ম্যাচে তাদের ব্রাজিলিয়ান ডারিয়েলটনকে ছাড়া খেলতে নেমেছিল। দ্বিতীয়ার্ধে ব্যথা পেয়ে উঠে যান আরেক ব্রাজিলিয়ান রাফায়েল অগাস্তো। আগের ম্যাচে শেখ জামালকে ০-৬ গোলে উড়িয়ে দেয়া আবাহনীকে আজ চেনায় যায়নি। অনেক ভুল পাস এবং অপরিকল্পিত ফুটবল ছিল। অন্য দিকে সাইফ স্পোটিং যথেষ্ট পরিকল্পিত ফুটবল খেলেছে। তবে শেষ হাসি হেসেছে আবাহনীই। তিন বছর পর উঠে গেছে ফাইনালে। তাতে লিগ শুরুর আগে দলটির জোড়া শিরোপাজয়ের আশাটাও টিকে রইলো দারুণভাবে।

এজেড/এনইউ