চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিজেদের শেষ ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখের মুখোমুখি হওয়ার আগেই অনেকটা অনুমিত ছিল বার্সেলোনার ভাগ্য। কোচ জাভি হার্নান্দেজ যতোই বলুন, আমার দল যে কাউকে হারাতে পারে; মাঠে বার্সার কঙ্কালসার রূপটাই যেন ফুটে উঠল। বায়ার্নের মাঠে হারল ৩-০ গোলে। বিদায় নিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে, তাতে দলটা ১৭ বছর পর চলে গেল ইউরোপায়।

মাঠে দলের পারফর্ম্যান্স তথৈবচ। রক্ষণ যেন বেহুলার বাসর, আক্রমণ যেন ঢাল তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দার। এমন কিছু দিনে আর যাই হোক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যায় না। কথাটা প্রতিপক্ষ ফরোয়ার্ড থমাস মুলারই যেন চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন। বললেন, ‘টেকনিক্যালি তাদের দলটা ভালোই। তবে আমার মনে হয়, তাদের শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে খেলার তীব্রতাটাই নেই।’

কথাটা একটু ভিন্নসুরে ঝরল বার্সা কোচের কণ্ঠেও। জাভির ভাষ্য, ‘আমরা ম্যাচে প্রতিপক্ষের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে চাই। কিন্তু আজ উল্টোটাই হয়েছে। এটা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, আর আমরা কিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে পারছি না!’

এমন হারকে দলের ‘নতুন দিনের সূচনা’ বানানোর তাগিদও দিলেন কোচ জাভি, ‘নিজেদের কাছ থেকে আরও বেশি করে চাইতে হবে আমাদের। আমরা বার্সেলোনা। ক্লাবের গতিপথ ও আরও অনেক কিছু পাল্টে দিতে এই ম্যাচটাই টার্নিং পয়েন্ট হওয়া উচিত। কিন্তু এটাই আমাদের বাস্তবতা। এটাই সে পরিস্থিতি যাতে আমরা আছি। আমরা এই পরিস্থিতিটাকে সম্মানের চোখেই দেখছি, আজ একটা নতুন যুগ শুরু হলো, নতুন একটা পর্বের শুরু হলো।’

২০০৮ থেকে ২০১৯ এ বার্সেলোনা রীতিমতো লিগে আধিপত্য বিস্তার করেছে, দাপট দেখিয়েছে ইউরোপেও। সেই বার্সেলোনাই এবার খেলবে ইউরোপা লিগে। এমন পরিস্থিতিতে খুব রাগ হচ্ছে জাভির। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের বাস্তবতা আর এটা আমাকে খুবই রাগান্বিত করে। তবে এর মুখোমুখি হতে হবে আমাদের, আর কোনো বিকল্প নেই। আমি এমন একটা কঠিন বাস্তবতা দেখেছি, যা খেলোয়াড় হিসেবে দেখেছিলাম।’

পরিস্থিতিটা এমন দাঁড়িয়েছিল, তাকিয়ে থাকতে হয়েছিল বেনফিকা-ডিনামো কিয়েভ ম্যাচের দিকে। এটাই জাভিকে দিচ্ছে ভিন্ন এক অনুভূতি। বললেন, ‘এ অনুভূতিটা অসহায়ত্বের। বার্সেলোনাকে ফিরিয়ে আনতে আমাদের অনেক কঠিন পরিশ্রম করতে হবে।’

ইউরোপা বার্সেলোনার অবস্থান নয় মোটেও, কথাটা কয়েকবার করেই বললেন জাভি। জানালেন শূন্য থেকে শুরু করার প্রত্যয়, ‘একেবারে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে আমাদের। আমাদের লক্ষ্যটা হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ইউরোপা নয়। কঠোর পরিশ্রম করতে হবে, আমি ব্যর্থতা শব্দটা পছন্দ করি না।’

ক্লাবের প্রতি নিজের নিবেদনটা জানালেন তিনি বললেন, ‘আমি ক্লাবটাকে ভালোবাসি, আমি কাজ করবো, আর আমি আমার জীবনটাও দিয়ে দেব এতে।’ খেলোয়াড়ি জীবনে সেটা দেখিয়েছেন, এবার আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন। হয়তো শিষ্যদের অনুপ্রাণিত করতেই, কড়া বাস্তবতা বুঝে শিষ্যরা এবার নতুন প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হলেই হয়।

এনইউ/এটি