চেলসির সাবেক ম্যানেজার আব্রাহাম গ্র্যান্ট হঠাৎ এক সংক্ষিপ্ত সফরে বাংলাদেশে এসেছেন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির সাথে আলোচনার পর সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন চেলসির এই সাবেক ম্যানেজার। 

আব্রাহাম গ্র্যান্টের সংবাদ সম্মেলন মানেই যেন ঘুরে ফিরে ২০০৮ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল। জোসে মরিনিও বরখাস্ত হওয়ার পর তার উপর চেলসির দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি চেলসিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে তুলেছিলেন। মস্কোর লুঝনিকির সেই অল ইংলিশ ফাইনালে চেলসি ম্যানইউয়ের সঙ্গে টাইব্রেকারে হেরে যায়। বাংলাদেশে এসেও সেই ফাইনাল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। 

সেই প্রসঙ্গে আব্রাহাম গ্র্যান্ট বলেন, ‘আমি যেখানেই যাই ২০০৮ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল নিয়ে আলোচনা হয়। টাইব্রেকারের সেই ফাইনাল আমি ভুলে যেতে চাইলেও মানুষ ভুলে যায়নি। আমাকে বারবার মনে করিয়ে দেয়। ওই ম্যাচে চেলসিই ভালো খেলেছিল। চেলসির শিরোপা জেতা উচিত ছিল।’ 

সেই ম্যাচে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো প্রথমে গোল করে ম্যাচে লিড এনে দেন ম্যানইউকে। পরবর্তীতে ল্যাম্পার্ড চেলসির হয়ে সমতা আনেন। চেলসির ফরোয়ার্ড দিদিয়ের দ্রগবা সেই ম্যাচে লাল কার্ড দেখেন। মস্কোয় সে রাতে বৃষ্টি পড়ছিল অঝোরে। পিচ্ছিল মাঠে টাইব্রেকারে শট নিতে এসে টেরি পড়লেন পিছলে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের আইকনিক সব মুহূর্তের ছোট্ট তালিকাতেও ঢুকে গিয়েছিল সেটা। সব কিছু মিলিয়ে ফাইনালটা বেশ নাটকীয় ছিল। এই প্রসঙ্গে আব্রাহাম বলেন, ‘ম্যাচে অনেক ঘটনা ছিল। কিছু বিষয় আমাদের অনুকূলে ছিল না। পেনাল্টি/টাইব্রেকার লাগত না। আগেই চেলসি চ্যাম্পিয়ন হতে পারত।’  

২০০৮ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের পর অবশ্য বড় কোনো ক্লাবের দায়িত্ব আর পাননি গ্রান্ট। মাঝে কিছু দিন ঘানার কোচ ছিলেন। সর্বশেষ ভারতের নর্থইস্ট উইনাইটেডে কাজ করেছেন। দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল সম্পর্কে তার বক্তব্য, ‘ফুটবলের ভাষা সারা বিশ্বে প্রায় একই। এই অঞ্চলে আর্থিক কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। চেলসির মতো বড় ক্লাবগুলোতে অনেক কিছুই করা যায়। সেখানে আর্থিক সামর্থ্য অনেক বেশি।’

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে আব্রাহাম গ্র্যান্ট/ঢাকাপোস্ট

বাংলাদেশ ফুটবল দলের খেলা মাঝে মধ্যে টেলিভিশনে দেখলেও সরাসরি কোনো মন্তব্যে যাননি এই ফুটবল ব্যক্তিত্ব, ‘বাংলাদেশের খেলা দেখেছি টেলিভিশনে। এক ম্যাচ ভালো আবার এক ম্যাচ খারাপ হতে পারে। এটা বড় দলগুলোরও হয়।’ বাংলাদেশের ফুটবলে মেধা থাকলেও এর সঠিক বিকশিত হয়না। বাফুফে আব্রাহাম গ্র্যান্টের মাধ্যমে ফুটবলের মেধাগুলো সঠিকভাবে বিকশিত করতে চায়। আব্রাহাম গ্র্যান্ট সেই আশ্বাসই দিলেন, ‘আমার যতটুকু ফুটবল জ্ঞান আছে তা আমি দেয়ার চেষ্টা করব। খুবই স্বল্প সময়ের সফর। আমি এখনো বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো মতো জানি না। দুই দিনে আরো জানার চেষ্টা করব।’ 

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন গ্র্যান্টের এই সফরের প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা সারা বিশ্বে অনেকের সাথেই যোগাযোগ করি ফুটবল উন্নয়নের জন্য। তার (গ্র্যান্টের) সাথে অনেকের যোগাযোগ রয়েছে। আমরা বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আলাপ আলোচনা করছি।’ 

বাংলাদেশের ফুটবলে বিভিন্ন প্রকল্প দেখাশোনার জন্য রয়েছেন বৃটিশ টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি। হঠাৎ তাহলে এই চেলসি ম্যানেজারের আগমন কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা তার কাজে সন্তুষ্ট। সে তার মতো কাজ করছে। আব্রাহামের বিষয়টি ভিন্ন।’ 

আব্রাহাম গ্র্যান্ট আগামী পরশু দিন ফিরে যাবেন। আজ ও আগামীকাল বাফুফে একাডেমি এবং বিভিন্ন বিষয় পরিদর্শন করবেন। পরিদর্শনের পর তার সঙ্গে কাজ করা বাংলাদেশে থাকা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিকে মতামত ব্যক্ত করবেন। 

এজেড/এনইউ