সৌদি আরবের রেফারির বাঁশির সঙ্গে সঙ্গে মাঠে সেজদাহ দেন মালদ্বীপ ফুটবলাররা। গ্যালারিতে স্বাগতিক সমর্থকদের উল্লাস। ডাগ আউট থেকে কোচরা ছুটে যাচ্ছেন মাঠে। খেলোয়াড়রা ল্যাপ অফ অনার দিলেন মাঠ জুড়ে। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে বাংলাদেশকে হারালেও তাদের উচ্ছ্বাসটা মনে হয় যেন ফাইনাল পৌঁছানোর।

আজকের দিনে এমন উচ্ছ্বাস অবশ্য বেশি নয়। কারণ আজ (বৃহস্পতিবার) মালদ্বীপের জাতীয় দিবস। তার ওপর আবার আগের ম্যাচ হেরেছিল। সব মিলিয়ে বাংলাদেশকে ০-২ গোলে হারিয়ে মুক্তি মিলল আশফাক-আকরামদের। 

প্রথমার্ধ দুর্দান্তভাবে রক্ষণ সামলে গোলশূন্য রাখেন জামালরা। দ্বিতীয়ার্ধে আর ক্লিনশিট রাখতে পারেননি তারা। ৫৪ ও ৭৫ মিনিটে দুই গোল হজম করে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ০-২ গোলের হার নিয়ে মালে স্টেডিয়াম ছাড়তে হয়। 

এই হারে তিন ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের পয়েন্ট চার। গাণিতিকভাবে এখনো আছে ফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা। সেক্ষেত্রে ১৩ অক্টোবর নিজেদের শেষ ম্যাচে নেপালকে হারাতে হবে পাশাপাশি নির্ভর করতে হবে অন্য ম্যাচের দিকেও। আজ মালদ্বীপের বিপক্ষে ন্যূনতম এক পয়েন্ট পেলেও জামালরা ফাইনালের পথে এক পা দিয়ে রাখতে পারতেন। 

হারলেই বাজবে বিদায়ের ঘণ্টা এমন সমীকরণ নিয়ে খেলতে নেমেছিল স্বাগতিক মালদ্বীপ। হাজার আটেক সমর্থকদের ক্রমাগত চাপ সামলে ৪৫ মিনিট গোলশূন্য রেখেছিল অস্কারের শিষ্যরা। দ্বিতীয়ার্ধে দুই ডেডবলে দুই গোলে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ।

স্বাগতিকরা দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আরেক পরিবর্তন করে মাঠে নামে। বাংলাদেশের ওপর আরো চাপ দিয়ে খেলে। ফল পায় ৯ মিনিট পর। ৫৪ মিনিটে কর্নার থেকে লিড। বক্সে জটলার মধ্যে মালদ্বীপ ফরোয়ার্ড হামজা ব্যাকভলি করেন। গোলরক্ষক জিকোর সামনে এক ড্রপ খেয়ে বল জালে প্রবেশ করে। 

বল গোললাইন অতিক্রমের সঙ্গে সঙ্গে মালে স্টেডিয়াম, ‘মলদ্বীবস, মলদ্বীবস' ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে স্টেডিয়াম। আগের ম্যাচে দশ জন নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে সমতা এনেছিল বাংলাদেশ। এই ম্যাচে এমন কিছু হবে সেই প্রত্যাশা ছিল ফুটবলপ্রেমীদের। সেটা পূরণ করতে পারেননি জামালরা। গোল তো দূরের কথা, মালদ্বীপকে তেমন  বিপদে ফেলতে পারেননি তারা। উল্টো ৭৪ মিনিটে স্বাগতিকদের আরেকটি পেনাল্টি উপহার দেয়। বক্সের মধ্যে মিডফিল্ডার সোহেল রানা মালদ্বীপের ফরোয়ার্ডকে পেছন থেকে ধাক্কা দেন। চতুর ফরোয়ার্ড পড়ে গিয়ে পেনাল্টি আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গে বাঁশি বাজিয়েছেন সৌদি রেফারি। অভিজ্ঞ ফুটবলার আলী আশফাক আলতো শটে ডান পাশ দিয়ে জিকোকে পরাস্ত করতে ভুল করেননি। ম্যাচ সেরাও হয়েছেন তিনি। 

দুই গোলে পিছিয়ে এর পর কয়েক হাজার দর্শকের ক্রমাগত চাপ। এই দুই মিলিয়ে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা মেজাজ হারিয়েছেন। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াসহ অনেকে হলুদ কার্ড দেখেছেন।

কোচ অস্কার এক গোলে পিছিয়ে পড়ার পর এক সঙ্গে তিনটি পরিবর্তন করেন। সুমন রেজা, জুয়েল রানা ও মাহবুবুর রহমান সুফিল তিন ফরোয়ার্ডকে নামিয়েও আক্রমণের উন্নতি ঘটাতে পারেননি। একরাশ হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশকে। 

তারপরও অস্কারের বাংলাদেশ মালদ্বীপে সর্বশেষ ম্যাচের বড় হারের লজ্জা থেকে রক্ষা করেছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ এই স্টেডিয়ামে ০-৫ গোলে হেরেছিল। আজকের ম্যাচে রক্ষণ আরো একটু জমাট হলে এক পয়েন্ট নিয়ে বেরিয়ে আসা অসম্ভব ছিল না। ২০০৩ সালের পর মালদ্বীপকে না হারাতে পারার অপেক্ষাটা আরো দীর্ঘ হলো।

এজেড/এমএইচ/এমএইচএস