উড়তে থাকা ইতালিকে মাটিতে নামিয়ে এনে স্পেনের ‘প্রতিশোধ’
তিন মাস আগে ইউরোর সেমিফাইনালেও ইতালিকে প্রায় বোতলবন্দি করেই রেখেছিল স্পেন। কিন্তু দলের তথৈবচ ফিনিশিং জয়ের পথ আগলে দাঁড়িয়েছিল সেদিন। তা না হলে ‘প্রতিশোধের’ কথাই আসতো না উয়েফা নেশন্স লিগের সেমিফাইনালে। ইতালির কাছে সেবার টাইব্রেকারে হেরে ইউরো যাত্রা শেষ হয়েছিল স্পেনের।
তবে সেই সেমিফাইনালে যাই হোক, তার পুনরাবৃত্তি ঘটল না নেশন্স লিগের শেষ চারে। বুধবার রাতে তাদের ২-১ গোলে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে ষষ্ঠ ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে কোচ লুইস এনরিকের দল। তাতে নিজেদের মাঠেই বিশ্বরেকর্ড ৩৭ ম্যাচের অপরাজেয় যাত্রা শেষ হয়ে গেল ইউরো চ্যাম্পিয়নদের।
বিজ্ঞাপন
সেই সেমিফাইনালের সঙ্গে এই লড়াইয়ের মিল একটা জায়গায় ছিল অবশ্য। সেই ম্যাচে বলের দখলে ছিল স্পেনের রাজত্ব, বলের দখলে ছিল ম্যাচের ৭১.২ শতাংশ সময়। ‘লা ফিউরিয়া রোহা’রা এদিনও বলের দখল রাখল সত্তরেরও বেশি শতাংশ সময়; বরং এদিন তা বাড়ল আরও, স্পেনের পায়ে বল ছিল ৭৪.২ শতাংশ সময়! কোচ মানচিনির অধীনে ইতালির বিপক্ষে এর চেয়ে বেশি বলের দখল নেই আর কারও!
নিজেদের মাঠ সান সিরোয় প্রথম সুযোগটা অবশ্য ইতালিই পেয়েছিল। ফেদেরিকো কিয়েসার দূরপাল্লার শটটা রুখে দেন স্প্যানিশ গোলরক্ষক উনাই সিমন। শুরুর নড়বড়ে সময়টা কাটিয়ে স্পেন এরপর ফিরে আসে ম্যাচে। ১৫ মিনিটে পায় ম্যাচের প্রথম বড় সুযোগটা, মার্কোস আলনসোর ক্রস দারুণ জায়গায় পেয়ে যায় পাবলো সারাবিয়াকে। কিন্তু তার শটটা অবশ্য ঠেকিয়ে দেন আলেসান্দ্রো বাস্তোনি।
গোলের অপেক্ষা শেষ হতে সময় নেয়নি খুব একটা। মিনিট দুয়েক পরই মিকেল ওইয়েরজাবালের বাড়ানো বলে গোল করেন ফেরান তরেস। গোলটায় কোচ লুইস এনরিকের কৌশলের কৃতিত্বও আছে বৈকি। খেলার শুরু থেকে ডান প্রান্তে আক্রমণের ঝড় তোলা স্প্যানিশরা এ গোলটা পেয়েছে প্রান্ত বদলের সুবাদে। ক্রমাগত ডানঘেঁষা সব আক্রমণের ফলে ইতালিও বাম প্রান্ত অরক্ষিত রেখেই রক্ষণকাজ সারছিল, হঠাৎ প্রান্তবদলে অনেকটাই খেই হারিয়ে ফেলে দলটি। মার্কোস আলনসো আর ওইয়েরজাবালকে দিয়ে বসে অনেকখানি ‘স্পেস’, যারই ফলশ্রুতিতে এই গোল।
এর একটু পর জিয়ানলুইজি ডনারুমার ভুলে আরও এক গোল হজম করেই বসেছিল ইতালি, লিওনার্দো বনুচ্চির কল্যাণে কোনোক্রমে রক্ষা পায় কোচ রবার্তো মানচিনির শিষ্যরা। ৩৪ মিনিটে ফেদেরিকো বের্নাদেস্কির শট উনাই সিমনের হাত ছুঁয়ে প্রতিহত হয় পোস্টে, ফলে অল্পের জন্য ইতালি বঞ্চিত হয় গোল থেকে। এর কিছু পরই লরেঞ্জো ইনসিনিয়ে দারুণ এক সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি, গোল করতে পারেননি সিমনকে একা পেয়েও। ইতালিরও আর সমতা ফেরানো হয়নি।
ইতালির মরার ওপর খাঁড়ার ঘাঁ হয়ে আসে ৪২ মিনিটে বনুচ্চির দ্বিতীয় হলুদ কার্ড। আজ্জুরিরা হয়ে পড়ে দশ জনের দল। এর একটু পর দলটা যখন দ্বিতীয় গোল হজম করল, তাতেও ছিল তার দায়। প্রথম গোলের দুই কুশীলব ওইয়েরজাবাল আর তরেস ইতালি বক্সে পেলেন একরাশ ফাঁকা জায়গা, যা বনুচ্চি থাকলে হয়তো পেতেন না দু’জনে। ওইয়েরজাবালের ক্রস থেকে তরেসের দারুণ গোলে স্পেন বিরতির আগেই পায় দুই গোলের লিড। এই গোলে অনেক অচেনা পরিস্থিতিরও মুখোমুখি হয় স্বাগতিকরা, গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি ডনারুমার অভিষেকের পর যে একবারও ম্যাচে দুই গোল হজম করেনি দলটি!
দুর্দশাটা বাড়তে পারত আরও। ৬৩ মিনিটে ইয়েরেমি পিনোর ক্রসটা প্রথম দুই গোলের কারিগর ওইয়েরজাবাল যদি লক্ষ্যে রাখতে পারতেন তাহলে। এর মিনিট পনেরো পর আরও একটা সুযোগ আসে স্পেনের সামনে। কিন্তু আলনসোর শটটা ঠেকিয়ে দলকে এ যাত্রায় গোল হজমের হাত থেকে রক্ষা করেন ডনারুমা।
৮২ মিনিটে কর্নার পেয়েছিল স্পেন। কিন্তু সে থেকে গোল তো করতে পারেইনি দলটি, উল্টো প্রতি আক্রমণে গোল হজম করে বসে তারা। ইতালি রক্ষণ বলটা বিপদমুক্ত করার পরই প্রতি আক্রমণে উঠে আসেন কিয়েসা। গোলমুখ থেকে সিমনকে বেরিয়ে আসতে দেখে বাড়ান লরেঞ্জো পেল্লেগ্রিনিকে, আলতো ট্যাপ ইনে ব্যবধান কমান তিনি।
তবে বাকি সময়ে স্পেনকে চাপে রাখলেও সমতাসূচক গোলটা আর পায়নি ইতালি। ফলে ৩৭ ম্যাচ পর অজেয় যাত্রা থামে দলটির। আর ইউরো সেমির ‘শোধ’ তুলে স্পেন চলে যায় উয়েফা নেশন্স লিগের ফাইনালে। আজ দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের মধ্যকার লড়াইয়ে জয়ী দলের বিপক্ষে আগামী রোববারের ফাইনাল খেলবে এনরিকের শিষ্যরা।
এনইউ