ছোট্ট মালদ্বীপ যেভাবে পেছনে ফেলল বাংলাদেশকে
দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে এক সময়ের দাপুটে দুই দেশের একটি ছিল বাংলাদেশ। ভারত তাদের জায়গা ধরে রাখলেও বাংলাদেশ এক যুগের বেশি সময় সেই জায়গা হারিয়েছে। বাংলাদেশের সেই জায়গা নিয়েছে দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ।
আয়তন, জনসংখ্যা, ফুটবল অবকাঠামো সব সূচকেই বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে মালদ্বীপ। এরপরও ফুটবল র্যাংকিং ও সাফের শিরোপা বিচারে সেই দেশটি বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে।
বিজ্ঞাপন
মালদ্বীপের সাবেক ফুটবলার ও কোচ মোহাম্মদ নিজাম মালদ্বীপের পাশাপাশি বাংলাদেশের ফুটবলেও কাজ করেছেন। দুই দেশের ফুটবল ও ফুটবলারদের সম্পর্কে তার সম্যক ধারণা। সেই ধারণা থেকে নিজাম দুই দেশের পার্থক্য নিরূপণ করতে গিয়ে প্রথমে বলেন, ‘মালদ্বীপে মেধাবী ফুটবলারের সংখ্যা অনেক বেশি। আলী আশফাক কিংবদন্তি পর্যায়ের এছাড়া আকরাম, আলী ফাসির যারা রয়েছে তারাও অত্যন্ত উঁচু মানের। ফুটবলারদের মানগত দিক থেকে মালদ্বীপ বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে।’
নিজামের কথার সত্যতা মেলে পরিসংখ্যানেও। বাংলাদেশ দল মালদ্বীপের বিপক্ষে সর্বশেষ জিতেছিল ২০০৩ ঢাকা সাফে। সেই ম্যাচে মালদ্বীপকে হারিয়ে বাংলাদেশ সাফ জেতে। ওই টুর্নামেন্টে ছিলেন না আলী আশফাক-ফাসিররা। আলী আশফাকরা খেলার পর থেকে বাংলাদেশ আর মালদ্বীপকে হারাতে পারেনি। অথচ আশির দশকে মালদ্বীপকে বাংলাদেশ হেসেখেলে হারিয়েছে। ১৯৮৫ সাফ গেমসে মালদ্বীপকে বাংলাদেশ ৮-০ গোলে হারিয়েছে। আর সেই মালদ্বীপের বিপক্ষে বাংলাদেশ ২০১৬ সালে ০-৫ গোলে হেরেছে।
মেধাবী ফুটবলার এমনিতে তৈরি হয় না। ভালো কোচিং ও সুন্দর পরিকল্পনা প্রয়োজন। এ দিকেও বাংলাদেশের চেয়ে মালদ্বীপ এগিয়ে বলে মনে করেন নিজাম, ‘আশি নব্বইয়ের দশকে আমরা ফুটবলে পিছিয়ে ছিলাম। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে আমরা ফুটবল উন্নয়নে হাত দেই। বিশেষ করে তৃণমূল ফুটবলে।সেই তৃণমূল ফুটবল থেকে মেধাবী ফুটবলাররা জাতীয় দলে আসছে। সেই সফল পাচ্ছি।’
বাংলাদেশের ফুটবলে সোনালী অতীতের সময় আবাহনী-মোহামেডান একাডেমি তৈরি, খেলোয়াড় সৃষ্টিতে মনোযোগ ছিল না। এখন বসুন্ধরা কিংস মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করছে কিন্তু তারাও একাডেমির দিকে উদাসীন। এই একাডেমিতে জোর দিয়ে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলছেন বলে মনে করেন সাইফ স্পোর্টিংয়ে কাজ করা সাবেক এই কোচ, ‘আমাদের প্রিমিয়ার লিগের আট ক্লাব। আট ক্লাবেরই একাডেমি রয়েছে। প্রতি ক্লাবের তরুণ খেলোয়াড় রয়েছে। এই তরুণ ফুটবলারই আগামীর মালদ্বীপ ফুটবলের তারকা।’
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন সভাপতি সব সময় বলে এসেছিলেন একাডেমি ও খেলোয়াড় তৈরি ক্লাবগুলোর কাজ। মালদ্বীপে এখন এটি ক্লাবগুলো করলেও শুরুর দিকে একাডেমিতে সহায়তা করত ফেডারেশন, ‘৫-৬ বছর যাবত ক্লাবগুলো নিজেরাই একাডেমি পরিচালনা করছে। এর আগে ফেডারেশন থেকে ক্লাবগুলোর একাডেমির জন্য সমান বরাদ্দ থাকত। এখন ক্লাবগুলো নিজস্ব অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনায় নিজেরাই ইয়ুথ টিম চালায়।’
বর্তমানে টিসি স্পোর্টসের কোচ হিসেবে কাজ করা নিজাম কোচিং করিয়েছেন মালদ্বীপের যুব ফুটবলেও। বাংলাদেশের বিপক্ষে ডাগ আউটে দাড়িয়েছেন অনেক সময়। সাইফ স্পোর্টিংয়ে হেড কোচ হওয়ার পর বাংলাদেশের ফুটবল সম্পর্কে বিশেষ একটি দিক ধরা পড়েছে তার চোখে, ‘অনূর্ধ্ব পর্যায়ে বাংলাদেশের সঠিক বয়সের খেলোয়াড় খেলানো উচিত। যে খেলোয়াড় অনূর্ধ্ব পর্যায়ে খেলতে দেখেছি বাংলাদেশে কোচিং করাতে গিয়ে দেখলাম সে তার চেয়ে ২-৩ বছরের বেশিতম দিনের জন্মদিন পালন করছে৷ অনুর্ধ্ব পর্যায়ে সাফল্য পেলেও বড় পর্যায়ে সেই খেলোয়াড়দের সফলতা হওয়ার সম্ভাবনা কম।’
র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকলেও বাংলাদেশ এই টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলছে। ইতোমধ্যে চার পয়েন্ট নিয়েছে। অন্য দিকে স্বাগতিক মালদ্বীপ ০-১ গোলে নেপালের বিপক্ষে হেরে একটু চাপে। বাংলাদেশ-মালদ্বীপ ম্যাচ নিয়ে নিজামের পর্যবেক্ষণ, ‘ম্যাচটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপুর্ণ হবে৷ বাংলাদেশের জেতার সম্ভাবনা থাকলেও আমার মনে হচ্ছে ম্যাচের ফলাফল হবে মালদ্বীপ ২ : বাংলাদেশ ০।’
সাবেক ফুটবলার নিজাম দক্ষিণ এশিয়ায় পরিচিত একজন ফুটবল ব্যক্তিত্ব কোচিংয়ে। টিসি স্পোর্টসের কোচ হয়ে চট্টগ্রামে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। বাংলাদেশের শীর্ষ ক্লাব সাইফ স্পোর্টিংয়ের হেড কোচ হিসেবে ছিলেন কয়েক মাস। এখন বাংলাদেশের টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর পল স্মলির অধীনে এএফসি প্রো লাইসেন্স করছেন।
এজেড/এটি