মেসি ম্যাজিকে ফুলে ফেঁপে উঠছে প্যারিসের অর্থনীতি
লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। এই মুহূর্তে ফুটবল বিশ্বে সবচাইতে দামি দুই নাম। ম্যাচের সব আলো নিজেদের দিকে কেড়ে নিতে পারেন এই দুই ফরোয়ার্ড। তাদের তুমুল জনপ্রিয়তা মাঠের বাইরের ঘটনাবলিকেও সমানভাবে প্রভাবিত করে থাকে। তেমনটাই ঘটেছে লিওনেল মেসি পিএসজিতে নাম লেখানোর পর।
ফুটবল জগতে খেলোয়াড়দের মত ক্রীড়া চিত্রগ্রাহক ও সাংবাদিকরাও এই খেলাটিকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। প্যারিসে পা রাখা মাত্রই সেখানকার সকল চিত্রগ্রাহকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন মেসি। তাইতো প্যারিসের চিত্রগ্রাহক অলিভার সানচেজের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে মেসির এই নতুন জীবন।
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের অনেক নামিদামি গণমাধ্যম মেসি ও তার পরিবারের ছবি পেতে মরিয়া। তাদের ভরসা এখন সানচেজের ‘ক্রিস্টাল পিকচারস এজেন্সি’। অলিভার বলেন, ‘এখন আমার জন্য এটা শুধুই মেসি, আর কেউ না। সবাই তার ছবি চায়। সে একজন রাজা।’
মেসিকে সফলভাবে দলে টানার পর পিএসজি চেয়ারম্যান নাসের আল খেলাইফি বলেছিলেন, এখন তিনি যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করবেন তা জানতে পারলে সবাই চমকে উঠবেন। ভুল বলেননি তিনি। শুধু ক্লাব নয় মেসি বাণিজ্যে ইতিমধ্যেই ফুলে ফেঁপে উঠেছে গোটা প্যারিসের অর্থনীতি।
প্যারিসে অবস্থানকারী আর্জেন্টাইন রেস্তোরা মালিক থেকে শুরু করে বিলাসবহুল রিয়েল এস্টেট এজেন্ট, সাংবাদিক এমনকি হোটেল ক্রুরাও আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টারের আগমনে। সানচেজ জানান মেসি ও তার পরিবার হোটেল থেকে বের হওয়ামাত্রই তাদের ছবি তোলার জন্য তিনি তার দুইজন চিত্রগ্রাহককে সার্বক্ষণিক নিযুক্ত করেছিলেন।
পেশাদার এই চিত্রগ্রাহক আরও বলেন, ‘আমরা যদি পার্কে, রাস্তায় অথবা প্যারিস ডিজনিল্যান্ডে ভ্রমণরত অবস্থায় তাদের ফ্রেমবন্দি করতে পারি সংবাদপত্রগুলো তা লুফে নেবে।’
প্যারিসের অন্যান্য বিলাসবহুল রিয়েল এস্টেট এজেন্টের মত সুসি হালান্ডও খুঁজে চলেছেন মেসির বসবাসের জন্য উপযুক্ত একটি বাড়ি। ফোর্বসের ২০২১ সালের সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া খেলোয়াড়দের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন মেসি। তার মনমত বাসা খুঁজে পেতে তাই একরকম হিমশিমই খাচ্ছেন সুসি।
এর আগেও পিএসজির তারকা খেলোয়াড়দের জন্য বাসা খুঁজে দিয়েছেন সুসি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, ‘তারা শুধু তাদের গাড়ি পার্কিং করার জন্যই ১০০০ স্কয়ার ফিটের মত জায়গা চান। কিন্তু প্যারিসে এমন বাড়ি খুব কমই আছে।’
এর আগে একজন পিএসজি খেলোয়াড়ের আবাসনের দায়িত্ব পালন করে মাস প্রতি ৩৫ হাজার ইউরো পারিশ্রমিক পেতেন সুসি। বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্য দাঁড়ায় ৩৫ লাখ টাকা। তিনি জানান মেসির সাথে এমন কোন চুক্তি করতে সমর্থ হলে তার পারিশ্রমিক গিয়ে ঠেকবে ৫০ থেকে ৬০ হাজার ইউরোতে।
ইভেস অ্যাবিটবোলের ট্রাভেল এজেন্সি কোম্পানি ‘মাই কনসার্জ’ এর আগেও কাজ করেছে খেলাইফির ক্লাবের জন্য। মেসির আগমনের সুফল ভোগ করছেন তিনিও। তিনি জানান, ‘অনেকেই প্যারিসে তিন দিন অবস্থান করার পাশাপাশি মেসির খেলা দেখার জন্য ম্যাচের টিকিট চেয়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ করছেন।’
লা পুল্গা (মেসি) যদি রিজার্ভ বেঞ্চে থাকেন তবুও তাকে একঝলক দেখতে প্রচুর আগ্রহ নিয়ে মাঠে আসেন দর্শকরা। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ পাওয়া গেছে মেসির যোগ দেয়ার পর স্ট্রাসবর্গের বিপক্ষে পিএসজির প্রথম হোম ম্যাচে। রয়টার্স সূত্রে জানা যায় কালোবাজারে ৮০০ ইউরোরও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে সেই ম্যাচের টিকিট।
প্যারিসের প্রথম সারির রেস্তোরা ‘ভলভার’ মূলত আর্জেন্টাইন খাবার পরিবেশন করে থাকে। মেসির স্বদেশী আনহেল ডি মারিয়াসহ অন্যান্য আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়রা প্রায়ই আড্ডায় মাতেন সেখানে। মেসির আগমনের পর এখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে এই রেস্তোরা। রেস্তোরাটির মালিক এনরিক টিরিগাল বলেন, ‘সবাই সে (মেসি) যা খায় সেটাই খেতে চায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে হটাৎই অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছি আমরা।‘
মেসির আগমনে যে আরো সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে প্যারিসের অর্থনীতি সেই আভাষ অবশ্য পাওয়া গিয়েছিল আগেই। এই মহাতারকার ৩০ নম্বর জার্সি বাজারে ছাড়ার ৩০ মিনিটের মধ্যেই ভক্তরা লুফে নেন সবকটি জার্সি। যদিও পিএসজির অন্যান্য খেলোয়াড়দের অফিসিয়াল জার্সির চেয়ে বেশি দামে ছাড়া হয়েছিল মেসির এই ৩০ নম্বর জার্সি। মেসির এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে যে আরও কয়েক বছর একচেটিয়া ব্যবসা করবে প্যারিস তা বলাই যায়।
এআইএ/এটি/এনইউ