কোপা জিতেই বিশ্বসেরা হয়ে যাইনি, আমাদের আরও উন্নতি চাই : মেসি
দীর্ঘ ২৮ বছরের শিরোপা খরা দুই মাস আগে ঘুচিয়েছে আর্জেন্টিনা। এমন এক শিরোপাজয়ের পর আত্মবিশ্বাসের পারদ আকাশেই চড়ে যাওয়ার কথা। সঙ্গে সমর্থকদের প্রত্যাশার চাপটাও বেড়ে যাওয়ার কথা পাল্লা দিয়েই। সে প্রত্যাশা যে বিশ্বকাপেরই, সেটা আর না বলে দিলেও হচ্ছে।
তবে সে বিশ্বকাপ জেতাটা যে সহজ কিছু নয় আদৌ, সে বিষয়টাই যেন মনে করিয়ে দিলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। কঠিন সে কাজটা কী করে করতে হবে তাও জানালেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি ইএসপিএন আর্জেন্টিনার অনুষ্ঠান এফ৯০কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি শুধু এ নিয়ে কথা বলেই ক্ষান্ত হলেন না; কথা বললেন কোপা জয়, আর্জেন্টিনা জাতীয় দল আর পরিবার নিয়েও।
শুরুতেই উঠে এল দর্শক প্রসঙ্গ। কোপা আমেরিকা খেলতে হয়েছে ফাঁকা মাঠে। সেজন্যে আক্ষেপ ঝরেছে তার কণ্ঠে। কিন্তু আগামীকাল সকালে বলিভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ফিরছে দর্শক। তাদের সামনেই এবার হবে দলের শিরোপা উদযাপন। সেজন্যে উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা ভরা গ্যালারির সামনে খেলতে পারছি না, এটা খুবই দুঃখজনক। এবার সুযোগ এসেছে, আমাদের দর্শকদের সামনে এবার আমরা আনন্দ করবো, আমাদের জেতা শিরোপাটা তাদের দেখাবো। জাতীয় দলের হয়ে যখন থেকে খেলা শুরু করেছি, তখন থেকেই আর্জেন্টিনার হয়ে শিরোপা জিতে উদযাপন করতে চেয়েছি।’
শিরোপা জয়ের পর থেকেই আগের তারকাখচিত দলের সঙ্গে আর্জেন্টিনার এই দলের তুলনা চলে আসছে বেশ। আর্জেন্টাইন অধিনায়ক অবশ্য সেসবকে একপাশেই রাখতে চাইলেন। বললেন, ‘বর্তমান দলটা অসাধারণ, ২০১৯ কোপা আমেরিকাতেও এই দলটা খেলেছিল। কিন্তু ২০১৫, আর ২০১৪ সালের দলটাও বেশ ভালো ছিল। শক্তিশালী দল নিয়ে অনেকগুলো ফাইনাল খেলেছি আমি। তবে প্রায়শই জয় আর হারটা পার্থক্য সবকিছুর মধ্যে গড়ে দেয়।’
কোপা জয়ের পর বিশ্বকাপের প্রসঙ্গ যে আসবে, তা একরকম অবধারিতই ছিল। তবে মেসি জানালেন, সেজন্যে আরও উন্নতি করতে হবে দলকে। বললেন, ‘আমরা বিশ্বসেরা নই, এটা মেনে নিয়েই শুরু করতে হবে। তবে আগেও আমরা বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ দল ছিলাম না, এর (কোপা জেতার) পরেও বিশ্বসেরা হয়ে যাইনি। আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে।’
দলের শক্তিসামর্থ্য তো আছেই, কোপা জিততে যে ভাগ্যেরও প্রয়োজন ছিল, সেটা মনে করিয়ে দিলেন মেসি। বললেন, ‘আমাদের একেবারে পরিষ্কার একটা লক্ষ্য ছিল। আমরা ম্যাচের জন্য বেশ ভালো প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমরা জানি কী করে খেলতে হবে। কখনো ভালো, কখনো খারাপ। স্বল্পমেয়াদি টুর্নামেন্টগুলোয় কেবল ফলাফলের দিকেই মনোযোগ দেওয়া হয়, গোল করাতে নয়। এখন কোপা আমেরিকায় আমরা যা করেছি, সেই ধারাটা ধরে রাখতে হবে, উন্নতি করে যেতে হবে। জিতলে ব্যাপারটা অনেক ক্ষেত্রেই স্বাধীনতা দেয়। কিন্তু আমার যে বিষয়টা চোখে পড়ছে, সেটা হলো দলের শক্তি। হ্যাঁ, বেশ কিছু সময় আমরা ভাগ্যবান ছিলাম। জয়ের জন্য এটাও চাই, এবার এটা আমাদের পক্ষে ছিল।’
দীর্ঘ শিরোপাখরা যখন ঘুচেছে, তখন এর কৃতিত্ব তো কোচ স্ক্যালোনিরও প্রাপ্য! আর্জেন্টাইন কোচ যখন দলের দায়িত্ব নিচ্ছেন, তখন আলবিসেলেস্তেরা বিস্মরণযোগ্য এক বিশ্বকাপ শেষ করেছে কেবল। দীর্ঘদিন রক্ষণভাগের নেতা হয়ে থাকা হ্যাভিয়ের মাসচেরানো বিদায় নিয়েছেন, সঙ্গে পরীক্ষিত সেনানী লুকাস বিলিয়া, গনজালো হিগুয়াইনরাও।
এমন অভিজ্ঞদের ছাড়া তরুণ এক দল নিয়ে চ্যালেঞ্জটা জেতা যে সহজ কিছু নয় আদৌ। কোপা জয়ের পর কোচ স্ক্যালোনি নিজে একটুও কৃতিত্ব নেননি। তবে মেসির প্রশংসা থেকে বঞ্চিত হলেন না আর্জেন্টাইন এই কোচ। ছয় বারের ব্যালন ডি’অর বিজয়ী বললেন, ‘কোপা আমেরিকায় তিনি আমাদের একজনই ছিলেন। তিনি যা করেছেন, তা অসাধারণ এক কাজ। জাতীয় দল গঠন করেছেন, বিশ্বাস রেখেছেন। কঠিন এক সময়ে দায়িত্বটা নিয়েছিলেন তিনি। অল্প অল্প করে তিনি দলকে গোছাচ্ছিলেন, বিশ্বাস করে নতুন খেলোয়াড় দলে আনছিলেন। তিনি সবসময়ই জানতেন, তিনি কী চাইতেন। ২০১৯ সালে ভালো একটা কোপা আমেরিকা শেষ করেছিলাম আমরা। আমরা উন্নতি করছিলাম। তার সব কাজই ছেলেদের ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।’
এনইউ