দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে ৫০ বছরের খরা কাটাল কোহলির ভারত
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত ১ম ইনিংস: ১৯১
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৯০
ভারত ২য় ইনিংস: ৪৬৬
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩৬৮) ৯২.২ ওভারে ২১০ (বার্নস ৫০, হামিদ ৬৩, রুট ৩৬; উমেশ ৬০-৩, বুমরাহ ২৭-২, জাদেজা ৫০-২, শার্দুল ২২-২)।
ফল: ভারত ১৫৭ রানে জয়ী।
সিরিজ: ৫ ম্যাচের সিরিজে ভারত এগিয়ে ২-১ ব্যবধানে।
ম্যাচসেরা: রোহিত শর্মা।
সেই ১৯৭১ সালে ওভাল জয়। এরপর ভারত ইংল্যান্ডে জয় পেয়েছে আরও। কিন্তু ওভালে আর কোনো টেস্ট শেষে বিজয়ীর হাসি দেখা যায়নি কোনো ভারতীয় অধিনায়কের চোখে-মুখে। গতকাল সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে সে খরাটাই কাটাল বিরাট কোহলির দল। ইংল্যান্ডকে ১৫৭ রানে হারিয়ে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ভারত।
অথচ আগের টেস্টেই ৭৮ রানে অলআউট হয়ে ইনিংস ব্যবধানে হারের লজ্জায় পড়েছিল তার দল। ওভাল টেস্টেও তো দল কিছুটা কোণঠাসাই হয়ে পড়েছিল। শুরুর ইনিংসে ব্যাটিং ব্যর্থতা, এরপর বোলিংয়ে দারুণ শুরু ধরে রাখতে না পেরে হজম করল ৯৯ রানের লিড। ভারতের ‘ব্যর্থতা’ সে পর্যন্তই।
বিজ্ঞাপন
ব্যাটিং-বোলিংয়ে দারুণ ‘কামব্যাকের’ ইতিহাস লিখে বসল কোহলির দল। তাতে ভর করেই সিরিজ নিশ্চিত করার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল সফরকারীরা।
রোহিত শর্মার দারুণ সেঞ্চুরিতে ভর করে ঘুরে দাঁড়ায় ভারত। ইংল্যান্ডের সামনে ছুঁড়ে দেয় রেকর্ড রান তাড়া করার চ্যালেঞ্জ। ৩৬০ এর ওপরের কোনো লক্ষ্য যে কখনোই তাড়া করা হয়নি ইংল্যান্ডের!
সে চ্যালেঞ্জের শুরুটা ভালোভাবেই সামলাচ্ছিল স্বাগতিকরা। চতুর্থ দিনের শেষটা ইংলিশরা করে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৭৭ রান নিয়ে। হাসিব হামিদ আর জো বার্নসের কল্যাণে শেষ দিনের শুরুতে সেটা পৌঁছে গেল তিন অঙ্কেও। কিন্তু ছন্দপতন হলো এরপরই। ফিফটির পরই ফেরেন বার্নস।
অন্য প্রান্তে হাসিব হামিদ অবশ্য ছিলেন যথেষ্ট স্থিতধী। ১২৩ বলে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটিটা তুলে নেন। কিন্তু সঙ্গী দাভিদ মালান থিতু হওয়ার চেষ্টা করলেও রান আউট তার চেষ্টায় বাঁধ সাধে। এরপর উইকেটে এলেন রুট, পুরো সিরিজেই যার ব্যাট ইংলিশদের দিয়েছে দারুণ নির্ভরতা। রুট হামিদের প্রতিরোধে প্রথম সেশনে আর কোনো ভুলচুক করেনি ইংল্যান্ড।
হামিদ যেন ফিফটির পর খোলসে ঢুকে গিয়েছিলেন আরও। ফিফটির পর ৭০ বলে তুলে নিয়েছিলেন কেবল ১৩ রান। তবে তার এই ইনিংসের ইতি ঘটে রবীন্দ্র জাদেজার দারুণ এক বলে।
এরপর দৃশ্যপটে এলেন বুমরাহ। বোলাররা সাধারণত পুরো ইনিংসে ভেঙে ভেঙে আসেন আক্রমণে, যার একেকটাকে ভিন্ন ভিন্ন ‘স্পেল’ হিসেবে ধরা হয়। বুমরাহ সেবার আক্রমণে এসে যা করলেন, তাকে আক্ষরিক অর্থেই ‘স্পেল’ বা জাদু বলে দিলেও ভুল কিছু বলা হবে না বোধহয়।
কিছুটা পুরোনো হয়ে আসা বলে তিনি করলেন ৬ ওভার মতো। রানের সংখ্যাটা দুই অঙ্কে গেল না। গতির হেরফের আর বলের কারুকাজে উইকেট তুলে নিলেন দুটো। তাতেই ভেঙে গেল ইংলিশ ব্যাটিং লাইন আপের মেরুদণ্ড। অলি পোপ, আর জনি বেয়ারস্টো দুজনেই শিকার বনলেন তার।
তাতে ২৪তম ম্যাচে এসে ১০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেন বুমরাহ। ভেঙে দেন কপিল দেবের ২৫ ম্যাচে সেঞ্চুরির রেকর্ড। ভারতীয় পেসারদের মধ্যে দ্রুততম সময়ে টেস্ট উইকেটের সেঞ্চুরি চলে আসে তারই দখলে।
এরপর জাদেজার শিকার হন মইন আলি। ইংল্যান্ড বিপাকে পড়ে আরও। ওপাশে রুট ছিলেন তখনো। ফলে নিদেনপক্ষে ড্র করার আশাটা কিছুটা হলেও টিকে ছিল ইংলিশদের। ক্রিস ওকসকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা চালান রুট। কিন্তু ইংলিশ অধিনায়কের সে প্রতিরোধ টিকল না বেশিক্ষণ। শার্দুল ঠাকুরের বলে প্লেড অন হয়ে ফেরেন তিনি। সেখানেই ইংল্যান্ডের হার নিশ্চিত হয়ে যায়।
এরপর ওকস, ওভারটন, অ্যান্ডারসনরা চেষ্টা করেছেন বটে, কিন্তু তাদের চেষ্টা হারের ব্যবধানটাকেই ছোট করতে পেরেছে কেবল। তাদের সে চেষ্টাও শেষ হয় উমেশ যাদবের বলে। নতুন বলে শেষ দুই উইকেট নিয়ে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন তিনি।
তাতে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় কোহলির দল। শেষ টেস্টটা কোনোক্রমে ড্র করতে পারলেই এখন সিরিজটা নিজেদের করে নেবে ভারত। সে পরীক্ষায় দলটি অবতীর্ণ হবে আগামী শুক্রবার। ম্যানচেস্টারে সিরিজের শেষ টেস্টে মাঠে নামবে দুই দল।
এনইউ