মৌসুমের প্রথম ম্যাচটা দারুণ পারফর্ম্যান্স আর ৪-২ গোলের দারুণ এক জয় দিয়ে শুরু করেছিল বার্সেলোনা। তাতে লিওনেল মেসিকে ছাড়া ‘নতুন যুগে’ আভাস মিলছিল দারুণ কিছুর। কিন্তু কাতালানদের কঙ্কালসার রূপ যেন বেরিয়ে এল দ্বিতীয় ম্যাচেই। অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের মাঠে ড্র করে পয়েন্ট খুইয়ে বসল দলটি।

তবে ম্যাচে যেভাবে প্রতি আক্রমণে ত্রাস ছড়াচ্ছিল বিলবাও তাতে বরং মনে হয়েছে স্বাগতিকদের কাছ থেকে একটা পয়েন্ট আদায় করেছে বার্সেলোনা। সেজন্যে অবশ্য দলে নতুন আসা মেম্ফিস ডিপাইকে ধন্যবাদ দিতে হবে দলটিকে। তার দুর্দান্ত গোলেই যে কোনোক্রমে হার এড়িয়েছে লা ব্লাউগ্রানারা।

প্রতিপক্ষের মাঠ সান মামেসে ম্যাচের শুরু থেকেই বলের দখলে আধিপত্য ছিল বার্সেলোনার। সেই থেকেই ষষ্ঠ মিনিটে একটা সুযোগও এসে গিয়েছিল তাদের সামনে। বাইলাইনের কাছ থেকে মেম্ফিসের বিয়োগ করা বলটা এসে পড়েছিল মার্টিন ব্র্যাথওয়েটের পায়ে। কিন্তু ছয় গজ বক্সের একটু বাইরে থেকে তার করা শটটা ছিল না লক্ষ্যেই!

হাইপ্রেস আর প্রতি আক্রমণে স্বাগতিকরাও কম ত্রাস ছড়াচ্ছিল না। ইনাকি উইলিয়ামসের বুদ্ধিদ্বীপ্ত শটটা ঠেকিয়ে ১০ মিনিটে বার্সাকে পিছিয়ে পড়ার হাত থেকে বাঁচান নেতো। সেই কর্নার থেকেই ওহিয়ান সানসেট করে বসেন আগুনে এক শট, গোলরক্ষককে ফাঁকি দিলেও শেষমেশ সেটা গিয়ে প্রতিহত হয় ক্রসবারে।

এর কিছু পর গোলরক্ষক নেতোর ভুলে গোল হজম করেই বসেছিল বার্সা। শেষ মুহূর্তে ইনাকিকে স্লাইডিং ট্যাকলে শট নেওয়া থেকে থামান ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং। ২২ মিনিটে আবারও প্রায় ওয়ান অন ওয়ান পরিস্থিতি তৈরি হয়েই গিয়েছিল বার্সেলোনা গোলমুখে, সে যাত্রায় স্লাইডিং ট্যাকলে সফরকারীদের রক্ষা করেন জর্দি আলবা।

এতক্ষণ পর্যন্ত রক্ষণের অবস্থা যথেষ্ট নাজেহাল ছিল বার্সার। ৩০ মিনিটে কোচ রোনাল্ড কোম্যানের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মাঠ ছাড়েন জেরার্ড পিকে। ডাক্তাররা অবশ্য আগেই সতর্ক সঙ্কেত দিয়েছিলেন তাকে, বলেছিলেন এক সপ্তাহের বিশ্রাম নিতে। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই খেলেছিলেন বার্সা তারকা। তার বিদায়ের পর বদলি হিসেবে মাঠে আসেন রোনাল্ড আরাউহো।

উরুগুইয়ান এই ডিফেন্ডারের কল্যাণে একবার বল বিলবাওয়ের জালেও জড়িয়েছিল বার্সা। কিন্তু গোলের বিল্ড আপে ফাউলের কারণে গোলবঞ্চিত থাকে দলটি।

গোলশূন্যভাবে বিরতিতে যাওয়া বিলবাও গোলের দেখা পেয়ে যায় ৫০ মিনিটে। ইকার মুনিয়াইনের কর্নার থেকে দারুণ এক হেডারে দূরের পোস্টে গোল করেন ইনিগো মার্টিনেজ।

সমতা ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল বার্সাও। কিন্তু সার্জিনিও ডেস্ট গোলরক্ষক বরাবর শট নিয়ে হতাশ করেন দলটিকে। গোল পেয়েও প্রতিপক্ষ গোলমুখে প্রতি আক্রমণে ত্রাস ছড়ানো বন্ধ করেনি বিলবাও। ৬১ আর ৬২ মিনিটে দুটো শট ঠেকিয়ে দলকে কোনোক্রমে রক্ষা করেন বার্সা গোলরক্ষক।

৭৩ মিনিটে ডি ইয়ং একটা চেষ্টা করেছিলেন দলকে সমতায় ফেরাবার, কিন্তু তার করা লবটি প্রতিহত হয় ক্রসবারে। তবে ৭৫ মিনিটে আর গোলবঞ্চিত থাকেনি বার্সা। দারুণ এক প্রতি আক্রমণের শেষে এসে বল পড়ে মেম্ফিসের পায়ে। তার আগুনে শট গিয়ে আছড়ে পড়ে বিলবাওয়ের জালে। লা লিগা তো বটেই, প্রতিযোগিতামূলক কোনো ম্যাচেই এটি বার্সার হয়ে ডাচ ফরোয়ার্ডের প্রথম গোল। তবে এর মিনিট দশেক পর ডি ইয়ংয়ের পাস থেকে শটটা যদি লক্ষ্যে রাখতে পারতেন তাহলে হয়তো উপলক্ষটা জয় দিয়েই রাঙাতে পারতেন তিনি।

তবে এই ১ পয়েন্টও হারাতে বসেছিল বার্সা, যোগ করা সময়ে উইলিয়ামস প্রায় চলেই এসেছিলেন বার্সা বক্সে। নিশ্চিত গোলটা ঠেকাতে তখন এরিক গার্সিয়া করে বসেন কৌশলগত এক ফাউল, দেখেন লাল কার্ড। ফ্রি কিক থেকে অবশ্য ব্যর্থ হয়েছে স্বাগতিকরা। ফলে ১-১ গোলের ড্র নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় দুই দলকে। 

এই ড্রয়ের পরও অবশ্য শীর্ষে আছে বার্সেলোনা। ২ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে আছে তারা। তবে রিয়াল মাদ্রিদ ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ নিজেদের ম্যাচে জিতলেই আবার হাতছাড়া হয়ে যাবে দলটির শীর্ষস্থান।

এনইউ