শিরোপার উৎসব বসুন্ধরা কিংসের/বাফুফে

২০১৮ সালে দেশের ফুটবলের শীর্ষ স্তরে পদার্পণ বসুন্ধরা কিংসের। এই তিন বছরের মধ্যে ঘরোয়া ফুটবলের নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে অনন্য এক রেকর্ডের সামনে বসুন্ধরা কিংস। আগামী মৌসুমে ফেডারেশন কাপ, প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ ও মহিলা ফুটবল লিগ তিন প্রতিযোগিতারই হ্যাটট্রিক শিরোপার হাতছানি। বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে এ রকম কৃতিত্ব নেই অন্য কোনো ক্লাবের। আবাহনী ও মোহামেডানের লিগ ও ফেডারেশন কাপের হ্যাটট্রিক শিরোপা থাকলেও দুটো একসঙ্গে নেই। 

বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান আগামী মৌসুমকে তার ক্লাবকে ভিন্ন উচ্চতায় নিতে চান, ‘আমাদের এখন মনোযোগ এএফসি কাপ। এএফসি কাপ মিশন শেষ করেই আগামী মৌসুমের পরিকল্পনায় নামব।’ 

সামনের মৌসুমে হ্যাটট্রিক করতে চায় কিংস, ‘আমাদের ক্লাবের সামনে অনন্য সুযোগ। সেই সুযোগ অবশ্যই কাজে লাগাতে চাই।’ বাফুফে পেশাদার লিগ কমিটি লিগ শেষে স্বাধীনতা কাপ আয়োজনের ঘোষণা দিলেও জাতীয় দলের ব্যস্ত সূচিতে সেটা সম্ভব হবে না৷ সেটা হলে এক মৌসুমে ট্রেবল জয়ের সুযোগ ছিল বসুন্ধরা কিংসের। ঘরোয়া ফুটবলে এক মৌসুমে তিন ট্রফি জয়ের কৃতিত্ব রয়েছে শুধু মোহামেডান (২০০২) ও শেখ রাসেলের (২০১৩)। শেখ রাসেল চারটি চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জিতত সুপার কাপে মোহামেডানের কাছে না হারলে। 

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব ঢাকা আবাহনীর (১৯৮৩-৮৫)। এর পরের তিন বছরের শিরোপা আবার তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানের (১৯৮৬-৮৮)। এর দুই দশক পর ঢাকা আবাহনী আবার সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনে৷ ২০০৭ সাল থেকে প্রবর্তিত পেশাদার ফুটবল লিগের প্রথম তিন আসরের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনী (২০০৭-০৯)। 

২০১০ সালে প্রিমিয়ারে অভিষেক আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়া শেখ জামালের সামনেও হ্যাটট্রিক শিরোপার সুযোগ ছিল ২০১৬ সালে। শেখ জামাল সেই যাত্রায় ব্যর্থ হয়েছিল। বসুন্ধরা কিংস অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী এবং তাদের স্বপ্ন আরও বড়, ‘আমরা পেশাদার লিগে অবশ্যই হ্যাটট্রিক শিরোপা জেতার জন্য বদ্ধপরিকর। তবে আমাদের লক্ষ্য ওয়ান্ডারার্সের রেকর্ড স্পর্শ করা।’

ঢাকার ফুটবলে বঙ্গবন্ধুর প্রিয় ক্লাব ওয়ান্ডারার্স টানা ছয়বার ঢাকা ফুটবল লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ১৯৫০-৫৪ সালে তারা টানা চ্যাম্পিয়ন। ১৯৫৫ সালে লিগ শিরোপা নিষ্পত্তি হয়নি। ১৯৫৬ সালের লিগেও চ্যাম্পিয়ন ছিল ওয়ান্ডারার্স। 

বসুন্ধরা কিংসের সেই রেকর্ড স্পর্শ করা বর্তমান ফুটবলে বেশ কঠিন হলেও অসম্ভব মনে করছেন না ক্লাবটির সভাপতি, ‘আমরা দেশের ফুটবলের আকর্ষণ ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে কাজ করছি। আবাহনী মোহামেডানের বাইরে নতুন ক্লাবের স্থায়ী দর্শক বা সমর্থক তৈরি করতে একটানা শিরোপার বিকল্প নেই। আমরা আশাবাদী আমরা যে গতিতে এগোচ্ছি ওয়ান্ডারার্সের রেকর্ড স্পর্শ করতে পারব।’

গত শতাব্দীর ৫০ দশকের ওয়ান্ডারার্সকে কিংস স্পর্শ করার আগে প্রাথমিক লক্ষ্য হ্যাটট্রিক শিরোপা। গত দুই বছর আবাহনী ছিল তাদের মুল প্রতিপক্ষ। মোহামেডানের নতুন পরিচালনা পর্ষদ শিরোপা প্রত্যাশী দল গড়তে চায়। 

আগামী মৌসুমের দল নিয়ে কিংস সভাপতির ভাবনা, ‘দেশের ফুটবলের জনপ্রিয়তা ও ঐতিহ্য রক্ষার্থে অবশ্যই মোহামেডানের শিরোপা প্রত্যাশী দল গড়া ফুটবলপ্রেমীদের জন্য দারুণ সুখবর। বসুন্ধরা কিংস ফুটবলারদের প্রচুর সুযোগ সুবিধা দেয়। আশা করি অনেক ফুটবলারই চাইবে হ্যাটট্রিক শিরোপা রেকর্ডের সাক্ষী হতে।’

প্রিমিয়ার লিগের এখনো পাঁচ-ছয় রাউন্ড বাকি। ঘরোয়া ফুটবলের পরিচিত সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে ক্লাবগুলো খেলোয়াড়দের প্রস্তাব দিচ্ছে আবার খেলোয়াড়রাও ক্লাবগুলোর সঙ্গে আলাপ করছে৷ মোহামেডান এবার বড় বাজেটের দল গড়বে এজন্য দলবদলের বাজার বেশ চড়া। দলবদলের বাজার চড়া হলেও লোকাল ফুটবলার কিংস থেকে আবাহনী মোহামেডানে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। কিংসের সঙ্গে ফাইট দিতে আবাহনী মোহামেডানের লক্ষ্য উঁচু মানের বিদেশি আনার দিকে। 

কিংস গত তিন মৌসুমে অত্যন্ত বিশ্ব মানের বিদেশি আনলেও এক মৌসুমের বেশি থাকেন না তারা।  কিংস কর্তৃপক্ষও স্বীকার করলেন বিদেশি ফুটবলার ইস্যু, ‘আমরা বিশ্ব মানের বিদেশি ফুটবলার এনেছি। অনেকের সঙ্গে চুক্তি কয়েকমাস আছে এখনো। তাদের পারফরম্যান্স ও প্রস্তাব পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আমরা যাদেরই রাখি বা আনি বিশ্বমানের ফুটবলারদের খেলা দেখতে পাবেন বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা।’

এজেড/এটি/এনইউ