সেই মাহেন্দ্রক্ষণে/ফেসবুক

সেজার লুইস মেনোত্তি। আর্জেন্টিনা দলের পরিচালক। তবে তার চেয়েও বড় পরিচয় আছে তার। আর্জেন্টিনাকে তো তিনিই এনে দিয়েছিলেন প্রথম শিরোপার স্বাদ। সেই আর্জেন্টিনা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে তাদেরই মাঠে হারিয়ে কোপা আমেরিকা জিতেছে সপ্তাহ দুয়েক হলো। তাতে লিওনেল মেসির আন্তর্জাতিক শিরোপার আক্ষেপও মিটেছে। মেনোত্তির মতে, এই শিরোপা জয়ের মাধ্যমে অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন আর্জেন্টাইন জাদুকর।

কোপা আমেরিকায় মেসি এবার গোল করেছেন ৪ টি, করিয়েছেন আরও পাঁচটি। সাবেক আর্জেন্টাইন কোচও মানছেন, নিজের সেরাটাই মাঠে ঢেলে দিয়েছেন মেসি। তিনি বলেন, ‘সব দিক থেকেই মেসি সেরা অবস্থানে আছে; বিশেষত শারীরিকভাবে, সে এমন একজন যে সবসময় তৈরি থাকে, যে কারণে বড় চোটেও পড়ে না সে, মানসিকভাবেই এমনই দেখি তাকে।’

আর্জেন্টিনার জয়ের পর থেকেই মেসি আছেন বেশ ফুরফুরে মেজাজে। বার্সেলোনার সঙ্গে নতুন চুক্তি না হলেও আর্জেন্টাইন অধিনায়ক এখন আছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে। ছুটি কাটাচ্ছেন তিনি, যার নিত্যনতুন খবর পাওয়া যাচ্ছে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে। এমন ফুরফুরে মেজাজে আর কবে দেখা গেছে তাকে? আবার কোপা আমেরিকা শিরোপাজয়ের মুহূর্তও বারবার ভক্তদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে দেখা যাচ্ছে তাকে। শেষ কোন শিরোপাজয়ের পর শিরোপাজয়ের মুহূর্তগুলো এভাবে ভাগ করে নিতে দেখা গেছে মেসিকে? 
 
 
 
 
 

শিরোপাজয় তো অবশ্যই, মেসির এ অফুরান আনন্দের কারণ হিসেবে মেনোত্তি দেখছেন আরেকটা বিষয়কেও। বর্তমান আকাশী-সাদা দলের সদস্যরা যে মেসি-ভক্তও। সদ্যই অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে যোগ দেওয়া মিডফিল্ডার রদ্রিগো দি পল তো বলেই ফেলেছিলেন, মেসির জন্য প্রয়োজনে যুদ্ধেও যেতে পারেন তিনি, তার সতীর্থরাও। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের পরিচালক একেও দেখছেন একটা কারণ হিসেবে, ‘এখনই মেসির সেরা সময়। এর কারণ শুধুমাত্র জয়টাই নয়। এর কারণ হচ্ছে, তার সতীর্থরা, যারা তাকে দারুণ ভালোবাসে।’ 

ছয়টা ব্যালন ডি’অর আছে তার নামে। ক্লাবের হয়ে জেতেননি এমন কোনো শিরোপাই নেই। এক চ্যাম্পিয়ন্স লিগই তো জিতেছেন চার বার! অথচ এরপরও কোপা জয়ের আগে টানা তিন ফাইনাল হারই যেন ছিল মেসির ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় হাইলাইটস। এরপর ’১৮ বিশ্বকাপে ভরাডুবি আর পরের কোপায় সেমিফাইনালে যাত্রা শেষ হওয়ায় ধারণা করা হচ্ছিল, মেসির শিরোপাজয়ের স্বপ্ন বুঝি স্বপ্নই রয়ে যাবে। 

আর এ কারণেই এই শিরোপাজয়কে মেনোত্তি দেখছেন অসম্ভবকে সম্ভব করা হিসেবে। তিনি বললেন, ‘জাতীয় দলের হয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে মেসি অসম্ভবকেই বাস্তবে পরিণত করেছে।’ 

মেসির ক্যারিয়ারের প্রথম স্বীকৃতিটা দিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা, তাকে ‘নতুন ম্যারাডোনা’ আখ্যা দিয়ে। খোদ ম্যারাডোনার মুখ থেকে এমন প্রশংসা পাওয়া তো চাট্টিখানি কথা নয়! এরপর তো তিনি গুরুও বনে গিয়েছিলেন মেসির। সময়ের ফেরে আর্জেন্টিনা দলের কোচের দায়িত্ব হারিয়েছেন, তবে মেসির প্রতি পিতৃসুলভ স্নেহটা বিন্দুমাত্র কমেনি ম্যারাডোনার।

সেই ম্যারাডোনা দেখে যেতে পারেননি মেসির এই সাফল্য। গেল বছরই মৃত্যুর অমোঘ সত্যের প্রাচীর পেরিয়ে চলে গেছেন পরপারে। তবে তিনি বেঁচে থাকতে যদি এই শিরোপা জিততেন মেসি তাহলে কী হতো? উত্তরটা দিলেন মেনোত্তি। বললেন, ‘ডিয়েগো যদি বেঁচে থাকত, তাহলে এবার নিশ্চিতভাবেই সে খুশি হতো। সে দৌড়ে গিয়ে মেসিকে জড়িয়ে ধরত, তারপর হয়তো দুজনকেই কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখতাম আমরা।’

এনইউ