স্বপ্নপূরণ শেষে ঘরে ফিরেছেন লিওনেল মেসি। এবার ফেরাটা একেবারেই অন্যরকম। ট্রফি নিয়ে প্রথমবারের মতো ফেরা। দেশে ফিরে ভক্তদের ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন তিনি। প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা নিয়ে হাসি মুখে থাকলেও মেসিকে ঘিরে দুইটা প্রশ্নের উত্তর এখনো জানা নেই তার লাখো-কোটি ভক্তের!

প্রথমটি তিনি বার্সেলোনা থাকছেন? সেই ছোটবেলা থেকে যে ক্লাবে খেলে আজ তিনি কিংবদন্তি সেই ক্লাবের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ। নতুন করে কী লা লিগার এই ক্লাব তাকে নেবে নাকি তিনি অন্য কোথায়ও নাম লেখাবেন? দ্বিতীয়টি কাতার বিশ্বকাপ প্রসঙ্গ। যেটি হবে ২০২২ সালে। বয়স ৩৫ ছুঁয়ে যাওয়ার পর সেই বিশ্বকাপে কি দেখা যাবে মেসিকে?

এই দুই প্রশ্নের উত্তর নিজের মতো করে খুঁজে নিচ্ছেন তার ভক্তরা। কিন্তু খোদ মেসি এখনো কিছুই বলছেন না এনিয়ে। যদিও ইউরোপিয়ান ট্রান্সফার মার্কেটে কান পাতলে অবশ্য মেসির বার্সায় থাকা নিয়ে ইতিবাচক উত্তরই মিলছে। দুই পক্ষই নাকি রাজি। তারপর চুক্তিটা এখনো হচ্ছে না কেন?

স্প্যানিশ গণমাধ্যমের খবর- জোসেফ মারিয়া বার্তোমেউ এখানে এই সম্পর্কে বাধার প্রাচীর তুলে দাঁড়িয়ে। তার কারণেই তো গেল বছর কারণে বার্সেলোনা ছাড়তে চেয়েছিলেন মেসি। তার আগের কিছু ভুলের কারণে এখন চাইলেই নাকি মেসিকে নতুন চুক্তির প্রস্তাব দিতে পারছে না বার্সা। 

লা লিগার বেঁধে দেওয়া বেতনের সীমা আগেই অতিক্রম করেছে কাতালান ক্লাবটি। ঠিক এ অবস্থায় নতুন খেলোয়াড় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলে নিজেদের বর্তমান বেতনের হিসাব থেকে ২০ কোটি ইউরো কমাতে হবে। সাবেক সভাপতি হোসে মারিয়া বার্তোমেউর কিছু সিদ্ধান্তের কারণে বার্সা গত অর্থবছরে দেনা দেখিয়েছে ১১৭ কোটি ইউরো। যারমধ্যে ৭৩ কোটি ইউরোই দ্রুত শোধ করতে হচ্ছে তাদের। দলবদলের জন্য ৩২ কোটি ৩০ লাখ ইউরো দেনা। এরমধ্যে মেসির সঙ্গে নতুন চুক্তির প্রসঙ্গটা তো আছেই।

এরমধ্যে করোনার কারণে গ্যালারিতে ছিল না দর্শক। সেখানেও বেশ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ক্লাবটির। সঙ্গে এখন যোগ হতে যাচ্ছে মেসির চুক্তির হিসাব। সর্বশেষ চুক্তি অনুযায়ী মেসির জন্য বছরে ১০০ মিলিয়নের বেশি ব্যয় হতো বার্সার। মেসির চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন খেলোয়াড় হিসেবেই নেওয়া হবে তাকে। এ কারণে বেতনের চার গুণ আয়ের পথ খুঁজে নিতে হবে ক্লাবটিকে। দলটির বেশ কয়েকজন ফুটবলার বিক্রি না করে এটা সম্ভব হচ্ছে না!

এর মানে মেসির বার্সায় থাকা নিয়ে এখন অব্দি পরিস্কার কিছু বলা যাচ্ছে না। ভক্তরাও স্বস্তি পাচ্ছেন না পুরোপুরি। একইভাবে তিনি কী কাতার বিশ্বকাপে খেলবেন কীনা সেই প্রশ্নের নেই সরাসরি উত্তর। মেসির নেতৃত্বেই কোপা জিতল দল। কাতারেও কি তিনি আর্জেন্টিনার নেতৃত্ব দেবেন মেসিই? 

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আস্বস্ত থাকছেন অনেকেই। কারণ মরিয়া মেসি জাতীয় দলের হয়ে শেষ সুযোগটা নিশ্চিত মিস করতে চাইবেন না। আর আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ শিরোপার আক্ষেপটা কিন্তু কোপার থেকেও পুরনো। ১৯৮৬ সালে ডিয়েগো ম্যারাডোনা এনে দিয়েছিলেন। এরপর থেকেই অধরা। 

মেসির হাত ধরেই সেটি পেতে চায় ভক্তরা। এরমধ্যে ২০১৪ সালে ফাইনালে উঠেও ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। এবার দারুণ একটা দল নিয়ে সেই মিশনে নিশ্চয়ই ঝাপিয়ে পড়তে চাইবেন মেসি। কোপা জেতার পর অবশ্য ফাইনালের জয়ের নায়ক আনহেল ডি মারিয়া স্বপ্ন উড়ালেন। 

কোপার পরে এবার বিশ্বকাপে চোখ পড়ল মারিয়ার। বললেন, ‘আমি আমার বাচ্চা, স্ত্রী, বাবা-মা ও যারা আমাদের সমর্থন দিয়েছে তাদের উৎসর্গ করছি এই শিরোপা। তাড়াতাড়ি একটি বিশ্বকাপ আসবে।’ আর সেই বিশ্বকাপ স্বপ্নটা মেসিকে নিয়েই পূর্ণ করতে চায় আর্জেন্টাইনরা। 

কিন্তু দুটো প্রশ্নের উত্তর যিনি দিতে পারেন সেই মেসি চুপ। মেসির বার্সায় থাকা আর আগামী বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে নিশ্চিত হতে চাইলে কিছুটা সময় অপেক্ষা যে করতেই হচ্ছে!

এটি