দীর্ঘদিনের অনাবৃষ্টি, খরা আর প্রচণ্ড দাবদাহের পর এ যেন স্বস্তির বৃষ্টি। একটি দুটি নয়, সবশেষ ছয়টি ফাইনাল খেলে শিরোপা স্পর্শ করতে পারেনি আর্জেন্টিনা। খোদ লিওনেল মেসি ব্যর্থ হয়েছেন চারটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে। অবশেষে সাফল্যের নব ধারায় সিক্ত হলেন এই কিংবদন্তিতুল্য ফটবলার। ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকার শিরোপা এখন আর্জেন্টিনার, লিওনেল মেসির।

২৮ বছরের প্রতীক্ষা শেষে আর্জেন্টিনা জিতল লাতিন আমেরিকান ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের এই ট্রফি। শিরোপা জিতে মেসি একটা জায়গায় ছাড়িয়ে গেলেন ইতিহাসের দুই সর্বকালের সেরা ফুটবলার ব্রাজিলের পেলে আর নিজ দেশের ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে!

বিস্ময়কর হলেও সত্য বিশ্বের ইতিহাসে সেরা দুই ফুটবলার পেলে ও ম্যারাডোনার আছে এক অপ্রাপ্তি। অনেকটা চাঁদের কলঙ্কের মতো। তারা জিততে পারেননি কোপা আমেরিকা, একটা উপমহাদেশীয় টুর্নামেন্ট! মেসিও তাদের মতোই কিংবদন্তিতুল্য। তবে তিনি অগ্রজদের পথে হাঁটেননি। বয়স ৩৪। এবারই ছিল শেষ সুযোগ। সেটাই কাজে লাগালেন ক্ষুদে যাদুকর।

অবশ্য ফুটবল সম্রাট পেলে তার পুরো ক্যারিয়ারে একবারই খেলেন কোপা আমেরিকা। ১৯৫৯ সালে বিশ্বকাপ জেতার পরের বছরই নেমেছিলেন লাতিন আমেরিকান ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে। নিজে সফলও ছিলেন। ৮ গোল করায় টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারটা উঠেছিল পেলের হাতে। তবে সেবার শিরোপা জিতে নেয় তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনা।

ম্যারাডোনা যদিও নিজের দোষেই হতে পারেননি কোপা জয়ী ফুটবলার। ১৯৯৩ সালে শেষবার যখন আর্জেন্টিনা জেতে প্রাচীনতম এই ফুটবল টুর্নামেন্টের ট্রফি। সেই দলে ছিলেন না ফুটবল ইশ্বর। ড্রাগ নেওয়ার কারণে নিষেধাজ্ঞায় ছিলেন তিনি। অবশ্য ফিরলেও তার সেই পারফরম্যান্স ছিল না। কোচ আলফিও বাসিলে তাকে বাদ দিয়ে ডিয়েগো সিমিওনেকে দেন ১০ নম্বর জার্সি। বিশ্বকাপ জিতলেও কোপার ট্রফিটা তাই অধরাই রয়ে গেল ম্যারাডোনার!

আক্ষেপ ছিল মেসি জাতীয় দলের হয়ে কিছুই জিততে পারেন না। খেলেছেন চারটি বিশ্বকাপ। ফাইনালে উঠলেও সঙ্গী হয়েছে দ্বীর্ঘশ্বাস। ২০১৪ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে নিয়ে গেলেও বিশ্বকাপ জেতা হয়নি মেসির।

তারও আগে ২০০৭ সালে তরুণ মেসির সঙ্গে ছিল হার্নান ক্রেসপো, কার্লোস তেভেজ, রিকুয়েলমে, পাবলো আইমার, দারুণ একটা দল। দাপট দেখিয়ে ফাইনালেও উঠে আসে তারা। কিন্তু ট্রফি সামনে নিয়ে খেলতে নেমে ব্রাজিলের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ! তারপর ২০১১ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে কার্লোস তেভেজের টাইব্রেকার ট্র্যাজেডি। ২০১৫ ও ২০১৬ দুটি ফাইনালে আলবিসেলেস্তেদের হতাশায় পুড়িয়েছে  চিলি।

কিন্তু এবার বাংলাদেশ সময় রোববার সকালে মারাকানায় মেসিকে একটা স্বপ্নের ট্রফি এনে দিলেন সতীর্থরা। ভক্তরা অন্তত এখন একটা জায়গায় তৃপ্তির ঢেকুর তুলবেন- পেলে-ম্যারাডোনা যা পারেননি, পেরেছেন তাদের আদরের লিও, লিওনেল আন্দ্রেস মেসি!

দুই বার অভিমানে, কষ্টে অবসর নিলেও জাতীয় দলে ফিরে আসেন মেসি। বয়স হয়েছে ৩৪ বছর। এটাই ছিল শেষ সুযোগ। তিনি যে সর্বকালের সেরা হতে লড়ছেন। ক্লাব ফুটবলে সবই এসেছে, জাতীয় দলের হয়ে রিক্ত হাত কি মানায় এই যাদুকরকে? ঠিক তাই। পেলে-ম্যারাডোনার কষ্টের সঙ্গী হননি তিনি। শেষটা রাঙালেন। অপূর্ণতা মাটি চাপা দিয়ে পূর্ণতার দেখা পেলেন মেসি! 

এটি/এমএইচ