ম্যারাডোনা, মেসি, ও পেলে/ফাইল ছবি

কোপা আমেরিকা আর বিশ্বকাপ মিলিয়ে আর্জেন্টিনার হয়ে এ পর্যন্ত নয়টা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলেছেন লিওনেল মেসি। অন্তত সংখ্যাগত দিক থেকে এর চেয়ে বেশি ভালো খেলেননি কোনো টুর্নামেন্টেই। দলকে নিয়ে গেছেন পঞ্চমবারের মতো ফাইনালে। তার পারফর্ম্যান্সের এমনই মহিমা যে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রশংসাও আদায় করে নিয়েছে দারুণভাবেই। ব্রাজিল কিংবদন্তি টোস্টাওকে তো তার এই নৈপুণ্য রীতিমতো মনে করিয়ে দিচ্ছে পেলের কথাই।

চলতি আসরে মেসি গোল করেছেন চারটি, যার একটা এসেছে কোয়ার্টার ফাইনালে, কাটিয়েছেন পাঁচ বছরের নকআউট গোলের খরা। সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরও পাঁচটি গোল, গতকাল বুধবারের সেমিফাইনালে তার বাড়ানো বল থেকে লাওতারো মার্টিনেজের গোলই তো কলম্বিয়ার বিপক্ষে ষষ্ঠ মিনিটে এগিয়ে দেয় আর্জেন্টিনাকে। 

চলতি আসরে তার এমন নৈপুণ্যের পর এদুয়ার্দো গনকালভেস ‘টোস্টাও’ জানালেন, মেসিকে এমনভাবে নিয়ে পারফর্ম করতে দেখেননি আর কখনোই। বললেন, ‘তাকে আর কখনোই এত গতি, শক্তি, আর তীব্র জেদ নিয়ে খেলতে, এসব শক্তি দলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে দেখিনি। সেটা এখন তাকে করতে দেখছি আমি।’

আর্জেন্টাইন হওয়ার কারণেই হয়তো, মেসিকে বেশিরভাগ সময় তুলনা করা হয় প্রয়াত কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনার সঙ্গে। ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলের সঙ্গে তুলনাটা হয় খুবই কম। টোস্টাও সেই ক্বদাচিৎ তুলনাটাই করলেন। বললেন, ‘মেসি আমাকে পেলের কথা মনে করিয়ে দেয়। পেলে শক্তিশালী ছিল আর শারীরিকভাবে মেসির চেয়ে আগ্রাসীও। তবে প্রতিভার দিক থেকে মেসি আছে পেলের কাতারেই।’

পেলের সঙ্গে ব্রাজিলের ১৯৭০ বিশ্বকাপজয়ী দলে খেলেছিলেন টোস্টাও। পেলে-সতীর্থের কাছ থেকেই এমন প্রশংসা পেলেন মেসি। তার চোখে তো আর্জেন্টাইন অধিনায়ক আছেন ম্যারাডোনার চেয়েও ওপরেই! টোস্টাওয়ের কথা, ‘পেলের পর, সে-ই বিশ্বসেরা; এমনকি সে ম্যারাডোনার চেয়েও ওপরেই আছে।’

নিজের এই মতের পক্ষে যুক্তিও দিলেন ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী এই খেলোয়াড়। বললেন, ‘তার গোল করার ক্ষমতা দারুণ, গোল করানোর ক্ষমতাও, আর সে ধারাবাহিক; এই মানটা সে ধরে রেখেছে গত ১৫ বছর ধরেই। মেসি সবসময়ই একটা ভালো কাঠামোয় থেকেছে, ম্যারাডোনার চেয়ে তার ক্যারিয়ারটাও বেশ লম্বা।’

সুপার দেপোর্তিভো রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পেলে সতীর্থ আরও বলেছে, ‘এটা আমাকে গার্দিওলা যুগের মেসিকেও মনে করিয়ে দেয়, যখন তার পাশে জাভি, ইনিয়েস্তাদের মতো খেলোয়াড় ছিল। এই মেসি সবসময়ই ভালো খেলছেন।’ 

এমন সব কথার পর অবশ্য নেইমার আর মেসির মধ্যে কে বেশি ভালো, সে প্রশ্ন অবান্তরই হয়ে পড়ে। টোস্টাও পরিষ্কার করে দিয়েছেন সে বিষয়টাও, ‘সে (মেসি) এখানে শ্রেয়তর অবস্থানে আছে, সে আরও বেশি পরিপূর্ণ খেলোয়াড়।’

তবে এমন কিছুর পরেও মেসি আন্তর্জাতিক শিরোপার খাতা থেকে গেছে শূন্যই। সেটা ব্রাজিলের বিপক্ষে জিতেই কাটুক, এমনটা চান না ব্রাজিলীয় কিংবদন্তি। তিনি বলেন, ‘ব্রাজিলিয়ানরা মেসিকে সমর্থন করে, সে যেন একটা কোপা আমেরিকা কিংবা একটা বিশ্বকাপ জেতে, এমনটা চায়। ব্রাজিল তার দারুণ পারফর্ম্যান্স, প্রতিভা ও তার অসামান্য ক্যারিয়ারকে স্বীকৃতি দেয়। তাকেই আমি চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখতে চাই; তবে হ্যাঁ, এটা হতে হবে অন্য কোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে।’

এনইউ