নেইমারের মনটা পড়তে পারলে বেশ হতো। আগের দিনই তো ব্রাজিলিয়ান এই সুপার স্টার গলা উঁচু করে বলেছিলেন, ফাইনালে তিনি চান আর্জেন্টিনাকেই। ভক্তরা দ্বিধায় দুই ভাগ। নেইমার কবে আবার আর্জেন্টিনা, মানে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলটির সমর্থক হয়ে উঠলেন? 


লকডাউনের বৃষ্টিমুখর সকালে আষাঢ়ে গল্প, এমন প্রশ্ন আপাতত তোলাই থাক। কারণ এখন এটাই বড় খবর- ফাইনালে পা রেখেছে লিওনেল মেসির দল। এবার যদি অধরা ট্রফি ধরা দেয় সর্বকালের সেরাদের একজন হয়ে উঠা এই ফুটবলারটির হাতে। 

নেইমার কি সত্যিই মন থেকে চেয়েছিলেন এমন একটা দ্বৈরথ, যা কি না সুযোগ পেলে লিওনেল মেসির দুটি পা নিজের করে নিতে চান। কি চমকে উঠলেন?  

ঘটনা বছর পাঁচেক আগের। ব্যালন ডি'অর পুরস্কারের আগে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মুখোমুখি হয়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, মেসি আর নেইমার। যেখানে কোন এক প্রশ্নের জবাবে রোনালদো মেতে উঠেন মেসি বন্দনায়, ‘তার বাঁ পা সত্যিই অসাধারণ। আমি ওটাই চাই।’ রোনালদোর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে তখনই নেইমার বলে উঠেন, ‘আমি দুটো পা-ই চাই।’ 

না এটা মজার ছলে নয়, রোনালদো-নেইমাররা এভাবেই কুর্ণিশ করেন তার পায়ে। বাঁ পায়ে। যা দিয়ে ওই সবুজ গালিচায় লেখা হয়েছে কতশত মহাকাব্য। কত যে অর্জন জমা হয়েছে লিওনেল মেসির শোকেসে। কিন্তু তারপরও রাতজাগা এক বিষণ্নতা ওই মুখটা কেমন যেন ম্লান হয়ে আছে? মেসির মুখটাতে চোখ রাখুন। চোয়াল কেমন দৃঢ়, চোখে যেন কিছু একটা না পাওয়ার বেদনা! 

ঠিক তাই, একটা বৈশ্বিক ট্রফি। যা কি না চাঁদের ওই কলঙ্কের মতো হয়ে আছে তার সোনায় মোড়ানো ক্যারিয়ারে। শত রূপকথার জন্ম দিয়েও হৃদয়ে রক্তক্ষরণ। এটা শুধু কী কিং মেসির, নাকি সব ভক্তদেরও। যেমনটা হলো বুধবার সকালে। বাইরে যখন সকাল বেলার দাপুটে সূর্য ঢেকে ঝরছে রিমঝিম বৃষ্টি, তখনই এই বদ্বীপেও আছড়ে পড়ল হাহাকার। 

কলম্বিয়ার বিপক্ষে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে তখন ম্যাচের ৫৪ মিনিট। প্রতিপক্ষের ফ্রাঙ্ক ফাবরার মারাত্মক ফাউলে লুটিয়ে পড়েন মেসি। এর আগেও প্রতিপক্ষের বাজে ট্যাকেলের শিকার হতে হয়েছেন। তবে এবার যেন আরেকটু মারাত্মক, ভয়ে কেঁপে উঠেন ভক্তরা। ছোট যাদুকর কি ফিরতে পারবেন মাঠে?

মুহূর্তেই বাঁ পায়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। মাঠের বাইরে চলে যেতে হয় মেসিকে। ভয়-শঙ্কা আরও বেশি ঘিরে ধরে ভক্তদের। তবে সময় নেননি তিনি। রক্ত ঝরা পা নিয়েই ফিরে আসেন মাঠে, যুদ্ধের ময়দানে। এই লড়াইয়ে যে হারলে চলবে না। বয়স ৩৪ হয়েছে। এবার না পারলে আর কবে?

এমন ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা আছে বলেই তিনি মেসি। প্রথমার্ধে কলম্বিয়ার রক্ষণ সীমানা  তছনছ করে তিন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে মেসি যে পাস বাড়ান, সেখান থেকে লাউতারো মার্টিনেজের অসাধারণ ফিনিশিং। তারপর কলম্বিয়া ম্যাচে ফিরলেও টাইব্রেকারে ঠিকই থাকলো সৌভাগ্যের পরশ। ক্লাব ফুটবল যাকে সব দিয়েছে, জাতীয় দলের হয়ে রিক্ত হাত কি মানায় এই জাদুকরকে?  

যে পায়ে যাদুর ছন্দ, যে পা জন্ম দিচ্ছে রূপকথা, সেই বাঁ পায়ে রক্ত ঝরল, এবার যদি থামে হৃদয়ের রক্তক্ষরণ! ১১ জুলাই সকালে লিওনেল মেসির হাতে ট্রফিটা দেখতে পাচ্ছেন ভক্তরা। সেদিন না জানি কী বলেন ব্রাজিলের নেইমার!

এটি/এমএইচ