লিওনেল মেসি/ফাইল ছবি

লিওনেল মেসি যেন আর্জেন্টিনার কম, বার্সেলোনার মানুষই যেন বেশি। এ অপবাদটা অনেকদিন ধরেই ঘুরেছে ইউরোপীয়-লাতিন সংবাদ মাধ্যমে; লোকমুখে তো বটেই। বার্সেলোনাকে জিতিয়েছেন কাড়ি কাড়ি শিরোপা, আর্জেন্টিনাকে কিছুই না, এরপর এমন আলোচনা আসাও বেশ স্বাভাবিকই। তবে আর্জেন্টিনাকে শিরোপা জেতাতে না পারলেও তিনি নিয়ে গেছেন টানা তিন ফাইনালে, তাতেই যেন সে অপবাদটা কিছুটা হলেও ঘুচিয়েছেন ছয়বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী।

তবে বার্সেলোনার সঙ্গে টানাপোড়েন, এরপর চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নতুন চুক্তির ঘোষণা না আসায় বিষয়টা এখন আবারও প্রাসঙ্গিক। তবে এবার সম্পূর্ণ একশ’ আশি ডিগ্রি উল্টোভাবে। ৩০ জুনের সময়সীমা পেরিয়ে গেছে, আসেনি বার্সেলোনার সঙ্গে নতুন চুক্তির খবর। ফলে বার্সেলোনার সঙ্গে তার সম্পর্ক আক্ষরিক অর্থেই শেষ, এখন তিনি সম্পূর্ণরূপে আর্জেন্টিনারই।

ঘটনার শুরু গত জুনে। যখন তৎকালীন সভাপতি হোসে মারিয়া বার্তোমেউর সঙ্গে বসেছিলেন নতুন চুক্তির আলোচনায়। শুরুর দিকে খবর আসছিল, আলোচনা এগিয়ে চলেছে দারুণভাবেই। কিন্তু এরপরই হঠাৎ এ আলোচনা থামিয়ে দেন মেসি। বিষয়টা পরিষ্কার হয়েছিল পরে। আগস্টের দিকে যখন তিনি বার্সেলোনাকে পাঠিয়েছিলেন সেই বিখ্যাত ‘ব্যুরোফ্যাক্স’, যাতে ছিল বার্সেলোনা ছাড়তে চাওয়ার অভিপ্রায়।

ছয়বারের ব্যালন ডি’অর বিজেতার এই চাওয়া অবশ্য অমূলক ছিল না। মূলত তার সঙ্গে বার্সেলোনার চুক্তির ধারাতেই ছিল বিষয়টা। চুক্তির ৮.৩.২.৬ ধারায় তারিখ উল্লেখ করে বলা ছিল, মৌসুম শেষেই একটা নির্দিষ্ট সময়ের আগে ক্লাবকে জানালে ফ্রিতেই ক্লাব ছাড়তে পারবেন তিনি।

সে তারিখটা ছিল জুনের দশ। তাহলে আপনি ভাবতে পারেন, মেসির এই চাওয়া অমূলক রইলো না কীভাবে? করোনাকালে মৌসুম স্থগিত ছিল প্রায় তিন মাসের মতো। তারিখটা তাই সে স্থগিতাবস্থাতেই কেটে গিয়েছিল, মৌসুম আর শেষ হয়নি। তাই বার্তোমেউর সঙ্গে এক বৈঠকে বিষয়টা পরিষ্কার করে নিয়েছিলেন মেসি, যা তিনি প্রকাশ করেছিলেন গোল ডট কমকে দেওয়া সেই বিখ্যাত সাক্ষাৎকারে। তৎকালীন বার্সেলোনা সভাপতির সঙ্গে মেসির কথা ছিল, মৌসুম যখনই শেষ হোক, ক্লাব ছাড়ার বিষয়টা তখনই জানাতে সমস্যা নেই আর্জেন্টাইন তারকার। করোনাকালের কারণেই যে এই পরিবর্তিত নিয়ম, তা বলাই বাহুল্য।

কিন্তু গত বছর ২৫ আগস্ট যখন মেসি ক্লাব ছাড়তে চাইলেন, তখনই বার্তোমেউ বাধালেন সমস্যা। সরাসরি অস্বীকার করলেন মেসির এই চাওয়া। জানালেন, সেই জুনের দশ তারিখের কথা। শেষমেশ এই নিয়মের বেড়াজালেই মেসি থেকে যান বার্সেলোনায়।

মেসি মূলত ক্লাব ছাড়তে চেয়েছিলেন বার্সার উচ্চাভিলাষ ও তা অর্জনের জন্য যথার্থ রূপরেখার অভাবের কারণে। বিষয়টা মেসি কয়েক বছর ধরেই বলে আসছিলেন, এটাই যে মূল কারণ সেটা গত ৫ সেপ্টেম্বর গোল ডট কমের রুবেন উরিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও বলেছিলেন।  

সে পরিস্থিতি এখন সুদূর অতীত। বার্তোমেউ গেছেন, নতুন সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা এসেছেন বার্সেলোনায়। মেসির চাওয়া অনুসারে উচ্চাভিলাষী প্রকল্পও হাতে নিয়েছে কাতালানরা। তবে কেন মেসির চুক্তি শেষ হয়ে গেল নবায়ন ছাড়াই? 

মেসি নতুন চুক্তির আলোচনা শুরু করেছেন গেল মে মাসে, মৌসুম শেষ করার পরে। কিছুদিন পরই চলে এসেছে কোপা আমেরিকা। ফলে তাকে চলে আসতে হয়েছে আর্জেন্টিনায়। তবে চুক্তির আলোচনা থেমে নেই। স্প্যানিশ সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, তাকে পাঁচ বছরের চুক্তিও প্রস্তাব দিয়েছে বার্সেলোনা, যার প্রথম দুই বছর তিনি থাকবেন বার্সেলোনা অধিনায়ক হিসেবে। এরপর তিন বছর ক্লাবের দূত হিসেবে। আর এতে সায় আছে মেসি পক্ষেরও।

এখন চলছে চুক্তির খুঁটিনাটি বিষয়ের আলোচনা। যা শেষ হলেই আসবে চূড়ান্ত ঘোষণা। তবে এই করতে করতেই ৩০ জুনের সময়সীমা চলে গেছে। মেসি সশরীরে বার্সেলোনায় থাকলে হয়তো পরিস্থিতি ভিন্নও হতে পারতো কিন্তু সেটা হয়নি বলেই শেষ হয়ে গেছে চুক্তির মেয়াদ। অবশ্য এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই কোনো পক্ষেরই। রেডিও কাতালুনিয়া জানাচ্ছে, নতুন চুক্তির বিষয়ে মেসি সম্মত হয়েছেন। তিনি বার্সেলোনায় পা রাখলেই আসবে নতুন চুক্তির ঘোষণা। 

তবে যাই হোক, বার্সেলোনার সঙ্গে তার সম্পর্ক আপাতত ‘শেষ’। আর তাই নতুন চুক্তির ঘোষণা আসার আগ পর্যন্ত মেসি কেবলই আর্জেন্টিনার, কোনো ক্লাবের নন।

এনইউ