ডেনমার্কের হারের ম্যাচে জিতল ফুটবল, জিতলেন এরিকসেন
আপাতদৃষ্টিতে ম্যাচটা ছিল আর দশটা ইউরো ম্যাচের মতোই। যেখানে অনেকগুলো ছোট ছোট গল্প আছে। কিন্তু সেসব আপনাকে টানবে না, দু’দলের কেউই যে ধারে-ভারে শীর্ষ দলগুলোর খুব কাছে নেই, খুব একটা সমৃদ্ধ ইতিহাস নেই! কিন্তু টানল, টানলেন একজন, ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন। ম্যাচের চলাকালে মাঠেই হারালেন জ্ঞান, বিরল এ ঘটনায় হয়ে গেলেন সতীর্থ থেকে প্রতিপক্ষ সবার নয়নের মণি।
এমন এক ম্যাচে জয় কি জয় পরাজয় খুব একটা ধর্তব্যে আসে? আসে, না হয় ইউরো খেলা হচ্ছে কী কারণে? ১-০ ব্যবধানে সেই জয়টা পেল ফিনল্যান্ড, যারা প্রথমবারের মতো খেলতে এসেছে কোনো মেজর টুর্নামেন্টে। ‘বি’ গ্রুপের এ ম্যাচে জিতে উঠে গেছে শীর্ষেও।
বিজ্ঞাপন
এরিকসেন, যিনি ম্যাচের ৪৩ মিনিটে জ্ঞান হারিয়েছিলেন, তিনি মাঠ ছাড়ার আগেই হাত তুলে জানিয়েছেন, বেঁচে আছি। এরপর নেওয়া হলো হাসপাতালে। সেখান থেকে একটু যখন সুস্থ বোধ করলেন, ফেসটাইমে কল দিলেন ডেনমার্ক দলের একজনের কাছে। যার সুবাদে কথা হলো, দেখা হলো সবার সঙ্গেই। সাক্ষাত মৃত্যুর কড়া ট্যাকলকে বডি ডজ দিয়ে বাঁচলেন, সেটা কি এরিকসেনের জয় নয়? এরিকসেনের সেই জয় কি ডেনমার্কেরও জয় নয়?
তবে মাঠে যা হয়েছে, তাতে জিতে গেছে ফুটবল, সঙ্গে থাকা সবাই। সেই অপয়া ৪৩-এ যখন এরিকসেন মুষড়ে পড়লেন মাঠে, হতবিহ্ববল সিমন কায়ের সম্বিত ফিরে পেতেই ছুটলেন সতীর্থের কাছে। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে যা হয়, নিজের জিভ যেন না কামড়ে ফেলেন এরিকসেন, তা থেকে রুখতে।
এরপর তার স্ত্রী ছুটে এলেন মাঠে, কান্নায় ভেঙে পড়া তাকে সান্ত্বনা দিতে ছুটে গেলেন গোলরক্ষক ক্যাসপার স্মেইকেল। এসব তো অবশ্য সবাই করে!
নতুন কিছুর শুরু হলো অনাকাঙ্ক্ষিত বিরতির একটু আগে। কয়েকজন ফিনিস সমর্থক নিজেদের পতাকা বাড়িয়ে দিলেন, যেন বীর এরিকসেনকে আড়াল করে নিয়ে যাওয়া যায়।
এরপর সেই অনাকাঙ্ক্ষিত বিরতি। যাতে পুরো স্টেডিয়ামজুড়ে থাকা দুই দলের সমর্থক আকাশ-বাতাস এক করে দিলেন ‘ক্রিশ্চিয়ান’ আর ‘এরিকসেন’ রবে।
— Michael Wagner (@MicGWagner) June 12, 2021
সেখানেই শেষ নয়, সেই বিরতি শেষে যখন দুই দলের খেলোয়াড় ফিরলেন মাঠে, ফিনিসরা দিলেন ড্যানিশদের গার্ড অফ অনার। ‘শুরু’ হলো ম্যাচ, এরিকসেনের জায়গায় এলেন ম্যাতিয়াস ইয়েনসেন।
ততক্ষণে মনোযোগ নড়ে গেছে ড্যানিশদের। ফিরল না পুরো ম্যাচেও। না হয় বলুন, ৫৯ মিনিটে জোয়েল পোহইয়ানপালোর শটটা কেন জমে গেল না স্মেইকেলের হাতে? এর মিনিট পনের পরে এমিল হয়বিয়েরই বা কেন পেনাল্টিটা নেবেন এত আস্তে?
জীবনের প্রথম মেজর টুর্নামেন্টে গোল পেলে আপনি কী করবেন? নেচে-কুঁদে-গেয়ে উদযাপন করবেন, তাই তো? কিন্তু ডেনমার্কের বিপক্ষে...
Posted by Dhaka Post - Sports on Saturday, June 12, 2021
তবে তার আগে-পরে ম্যাচের মিষ্টতা কমেনি একটু। পোহইয়ানপালো গোল করলেন বটে, যা নিজের, দেশের প্রথম মেজর টুর্নামেন্ট গোলও। তাতেও কিনা দেখালেন দারুণ নির্লিপ্ততা, যেন আজকের ম্যাচে উদযাপনে লেখা হবে অমোচনীয় পাপ!
ম্যাচের শেষেও রইলো সেই মিষ্টতার রেশ। ‘স্টার অফ দ্য ম্যাচ’ বা ম্যাচসেরা কে, সে প্রশ্নের জবাবে এল এরিকসেনের নাম! বিল শ্যাঙ্কলি বলেছিলেন ফুটবল নাকি জীবন-মরণের চেয়েও উর্ধ্বে কোনো কিছু, এ ম্যাচটা যেন তারই বিজ্ঞাপন।
বিখ্যাত ফুটবল ধারাভাষ্যকর পিটার ড্রুরি একবার বলেছিলেন, ‘ওয়াই ডু য়্যু লাভ দ্য গেম? দিস ইজ ওয়াই য়্যু লাভ দ্য গেম’। সত্যিই তো, এমন সব দিনই তো ফুটবলের সঙ্গে আপনার প্রেমকাব্যটাকে আরেকটু পোক্ত করে। এমন সব দিনেই তো জিতে যায় ফুটবল!
এনইউ/ওএফ