দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা সাফ। এক সময় এটি ব্রিফকেস সংগঠনই হিসেবে আখ্যায়িত হতো। কারণ আয়োজন করা হতো কেবল পুরুষ সিনিয়র সাফ। গত এক যুগে অবশ্য সাফ অনেক গতিশীল। পুরুষের সঙ্গে নারী সিনিয়র সাফও যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে নারী-পুরুষ বেশ কয়েকটি বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টও। জাতীয় দলের পাশাপাশি ক্লাব পর্যায়েও দক্ষিণ এশিয়ার এই সংস্থা টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে চলতি বছর থেকে। আজ (বুধবার) কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত সাফের নির্বাহী সভায় নারীদের নিয়ে একটি ক্লাব প্রতিযোগিতা আয়োজনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

সভা শেষে সাফের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলাল বলেন, ‘আজকের সভায় ২০২৫ সালের ক্যালেন্ডার অনুমোদিত হয়েছে। সেখানে যুক্ত হয়েছে নারী ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ। আমরা এটা এই বছরই করব। নিজস্ব অর্থায়নে।’

সাফের জন্মলগ্ম থেকে একটি কেন্দ্রীয় ভেন্যুতে (২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ যৌথ) পুরুষ সিনিয়র সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ২০২৫ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ একটু ভিন্ন আঙ্গিকে হোম/অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে আজকের সভায়, ‘প্রথমবারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ হোম অথবা অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই মাসেই আমরা সদস্য দেশগুলোর সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে সভা করব। সেই সভায় মূলত বাকি বিষয় চূড়ান্ত হবে। যদি কোনো সমস্যা বা বিপত্তি সৃষ্টি হয়, সেক্ষেত্রে আগের মতো কেন্দ্রীয় ভেন্যুতে সাফ অনুষ্ঠিত হবে। তখন ভেন্যু নির্ধারণ করা হবে। এই টুর্নামেন্টের প্রাথমিক সময়সূচি ১৫ জুন থেকে ২৫ জুলাই।’

সাফ সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন

আজকের সভায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক– সাফের মার্কেটিং কোম্পানি স্পোর্টস ফাইভের সঙ্গে চুক্তি। এই চুক্তির আলোকে সাফের কয়েকটি টুর্নামেন্টে সেই কোম্পানি ব্যয় বহন করবে। এ নিয়ে সাফের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সাফ মেন্স এবং ওমেন্সের পাশাপাশি সাফ অনূর্ধ্ব-২৩ এবং সাফ ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ এই চার টুর্নামেন্টের জন্য মার্কেটিং কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। ২০২৬ সাল থেকে প্রতি বছর ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ হবে।’

বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ২০০৯ সালে সাফ সভাপতি হওয়ার পর থেকে ক্লাব পর্যায়ে টুর্নামেন্ট আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন একাধিকবার। নানা বিপত্তিতে সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। অবশেষে তা আলোর মুখ দেখার অপেক্ষায়। ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপের রূপরেখা নিয়ে সাফের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলাল বলেন, ‘সাফ ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপে আটটি দল অংশগ্রহণ করব। র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা দেশের দুটি ক্লাব এবং বাকি দেশগুলো থেকে একটি ক্লাব অংশ নেবে। আটটি ক্লাব দুই গ্রুপে হোম অর অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে খেলবে। ফাইনালও হবে হোম এন্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে।’

ফুটবল বিশ্বে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে বেশি প্রচলিত হলেও এখন হোম অর অ্যাওয়ে চলছে। এই পদ্ধতিতে সাফের সাত দেশ একে অন্যের সঙ্গে ছয়টি ম্যাচ খেলবে। এই ছয় ম্যাচের তিনটি হোম আর তিনটি অ্যাওয়ে। কোন দলের কোন ম্যাচ হোম আর কোনটি অ্যাওয়ে হবে সেটা টুর্নামেন্ট কমিটি বিশেষ পদ্ধতিতে নির্ধারণ করবে। 

পুরুষ ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতি বছর হলেও নারী ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ হবে এক বছর অন্তর অন্তর। এর কারণ সম্পর্কে সাফের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মার্কেটিং কোম্পানি পুরুষ ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপের বিষয়ে চুক্তি করেছে। নারী ক্লাব আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে করব, ফলে এটি প্রতি বছর আয়োজন কষ্টসাধ্য। এজন্য এক বছর নারী সাফ ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ, পরের বছর নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ (জাতীয় দল)।’

নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সাফ সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। যেখানে নেপাল, ভুটান ও ভারতীয় ফুটবল ফেডারশেনের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

এজেড/এএইচএস