১০ বছরের জন্য এমএ আজিজ স্টেডিয়াম বাফুফের
দেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। যার জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ছাড়া সুনির্দিষ্ট কোনো মাঠ নেই। স্টেডিয়ামটির সংস্কার কাজ চলায় বাফুফেকে প্রতি মৌসুমেই বিভিন্ন জেলা স্টেডিয়াম জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে খেলা চালাতে হয়। মাঠের সীমাবদ্ধতা দূর করতে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামকে ১০ বছরের জন্য বাফুফেকে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে এনএসসি।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যান আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া আজ (শনিবার) বিকেলে পল্টনের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ ইনডোর স্টেডিয়ামে এসেছিলেন সানরাইজ-ইউনেক্স আন্তর্জাতিক সিরিজ ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে। অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘বাফুফেকে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম দশ বছরের জন্য দেওয়া হয়েছে। সেখানে সংস্কার কাজ করে ফুটবল শুরু হতে পারে। এই স্টেডিয়ামের (বঙ্গবন্ধু) কাজ ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা আমাকে জানানো হয়েছিল। জানুয়ারি থেকে এখানেও খেলা শুরু করতে পারে।’
বিজ্ঞাপন
বছরের শেষ দিকে এসেছে বাংলাদেশ ফুটবলের সবচেয়ে বড় সুখবর। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা চৌধুরি বাংলাদেশের জার্সিতে খেলবেন। হামজার বাংলাদেশের হয়ে খেলার বিষয়টি দেশের ফুটবলে বড় প্রভাব রাখবে বলে মনে করেন ক্রীড়া উপদেষ্টা, ‘বাফুফেকে ধন্যবাদ, তারা বেশ কিছুদিন ধরেই হামজার বিষয়ে ফিফার সঙ্গে কাজ করছিল। হামজা আসায় আমাদের পারফরম্যান্স সামনের দিনগুলোতে আরও ভালো হবে। তিনি আসায় আমি আশা করি বাংলাদেশের ফুটবল বদলাবে। তার মাধ্যমে এটা একটা শুরু। বাংলাদেশের অনেকেই যারা বিভিন্ন ক্লাবে খেলেন। হামজা চৌধুরির বিষয়টি সবার মধ্যে বাংলাদেশের হয়ে খেলার আশা সঞ্চার করবে।’
ব্যাডমিন্টন কোর্টে ফুটবল ছাড়াও ক্রীড়াঙ্গন সংস্কার-ফেডারেশনের কমিটি নিয়েও নানা কথা হয়েছে। ক্রীড়াঙ্গন সংস্কারের লক্ষ্যে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ২৯ আগস্ট সার্চ কমিটি গঠন করেছিল। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৪ নভেম্বর নয়টি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি গঠন হয়। এরপর এক মাস পেরিয়ে গেলেও অন্য ফেডারেশনে কমিটি গঠন হয়নি। এই প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা ধাপে ধাপে ফেডারেশনগুলোর অ্যাডহক কমিটি প্রকাশ করছি। বাকিগুলো প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পরবর্তী ধাপেরগুলো দেখতে পাবেন।’
নয়টি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটির মধ্যে জাতীয় খেলা কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। সেই সমালোচনা খানিকটা আমলে নিয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ একটি তদন্ত কমিটিও করেছিল। আকস্মিকভাবে সেই তদন্ত কার্যক্রম স্থগিতও হয়েছে। যা ক্রীড়াঙ্গনে সৃষ্টি করেছে বিস্ময়। এ নিয়ে আসিফ মাহমুদের মন্তব্য, ‘এটা আমি যতদূর জানতে পেরেছি– একটা মিসকমিউনিকেশন ছিল। সে কারণে একটি ভুল হয়েছে। তো পরবর্তীতে বোধহয় ওটা উইথড্রো (প্রত্যাহার) করা হয়েছে।’
আওয়ামী শাসনামলে ক্রীড়াঙ্গনও ছিল রাজনীতির আওতামুক্ত। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ক্রীড়াঙ্গন থেকে রাজনীতি দূর করতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ২১ আগস্ট সকল জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কমিটি বিলুপ্তি করে। প্রায় চার মাস পেরিয়ে গেলেও জেলা-বিভাগীয় পর্যায়ের কমিটি গঠন হয়নি। ফলে খেলাধুলা এখনও এক প্রকার স্থবির। জেলা-বিভাগীয় কমিটি নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘জেলা ক্রীড়া সংস্থা কখনোই একসঙ্গে এভাবে ভাঙতে হয়নি। এবারই প্রথম। অধিকাংশ সংস্থাই রাজনৈতিক ছিল। মন্ত্রণালয় থেকে ডিসিদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থা একটু সময় নিচ্ছে। চেষ্টা চলছে দ্রুত কমিটি দেওয়ার।’
ক্রিকেট ও ফুটবলের বাইরে অন্য খেলোয়াড়রা সেভাবে সুযোগ-সুবিধা পান না। ফেডারেশনগুলোও বাজেট-অবকাঠামো নানা সমস্যায় জর্জরিত। অন্য খেলাগুলোর উন্নয়ন নিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টার ভাবনা, ‘ক্রিকেট ফুটবলের বাইরে স্পন্সর সেভাবে নেই। আবার ক্রিকেট ছাড়া অন্য কোনো খেলা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সেভাবে নেই। আমরা চেষ্টা করছি স্পোর্টস ভিলেজ এবং ইন্সটিউট করার। যাতে খেলোয়াড়রা উন্নত প্রশিক্ষণ ও সুবিধা পান। বিষয়টি ভাইস ভারসা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য পেতে হলে অনুশীলন-সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। সাফল্য পেলে আবার পৃষ্ঠপোষক আসবে।’
প্রধান উপদেষ্টা ২০২৫ সালের শেষদিকে অথবা ২৬ সালের শুরুর দিকে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা বলেছেন সম্প্রতি। এক বছরের মধ্যে ক্রীড়াঙ্গনে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার সম্ভব কি না এই প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা আসিফ বলেন, ‘কাঠামোর পরিবর্তনের জন্য গঠনতন্ত্র নিয়ে কাজ শুরু করছি। বিসিবি গঠনতন্ত্র নিয়ে একটি কমিটি করেছে। সেই কমিটি প্রতিবেদন দাখিলের বেশ কাছাকাছি। বাফুফেও একটি কমিটি করেছে। বড় দুটো ফেডারেশনের গঠনতন্ত্রের সংস্কার চলছে। বাকি ফেডারেশনগুলোর গঠনতন্ত্র নিয়ে সার্চ কমিটি কাজ করছে। এনএসসি থেকে সাধারণ নীতিমালা কিছু থাকবে। গঠনতন্ত্রের মাধ্যমে কাঠামোগত জায়গায় পরিবর্তন আসলে কমবে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগগুলো। বড় অনিয়ম হবে না। পাশাপাশি ফেডারেশনগুলোরও প্রতিনিয়ত অডিট ও প্রগ্রেস রিপোর্ট নেওয়া হবে, যাতে করে জবাবদিহিতার জায়গা ঠিক থাকে।’
এজেড/এএইচএস