ব্যাঙ্কসের ‘সর্বকালের সেরা’ সেইভকে মনে করালেন এমি মার্তিনেজ
ফুটবলের ব্যাপারে ভালো মানের খোঁজ রাখেন, এমন কারো কাছে গর্ডন ব্যাঙ্কসের নামটা খুবই পরিচিত। বিশ্বকাপ জিতেছেন। ইংলিশ লিগে ছিলেন দুর্দান্ত। তবু ৭০ এর বিশ্বকাপে একটা অসাধারণ সেইভ ব্যাঙ্কসকে করেছে অমর, অক্ষয়। ফুটবল ইতিহাসের সর্বকালের সেরা পেলের হেডে যেভাবে বল ফিরিয়েছিলেন ব্যাঙ্কস, সেটা ‘সর্বকালের সেরা সেইভ’ এর তকমাটাও পেয়েছিল সবার কাছে।
অনেকগুলো বছর পর আরও একবার গর্ডন ব্যাঙ্কস প্রাসঙ্গিক হলেন ফুটবলের দুনিয়াতে। সেটা এমিলিয়ানো মার্তিনেজের কল্যাণে। গেল রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে জুভেন্টাসের বিপক্ষে যেভাবে গোল ফিরিয়েছেন এমি, তাতে ব্যাঙ্কস্কে মনে করতে বাধ্য অনেকেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে এমি বন্দনা।
বিজ্ঞাপন
ম্যাচের ৬৫ মিনিটে কর্ণার। ডান দিকের পোস্টের খুব কাছ থেকে জোরের ওপর হেড করেছিলেন জুভেন্টাস উইঙ্গার ফ্রান্সিসকো কনসেইসাও। গোলটা হচ্ছিল অনেকটাই নিশ্চিত। কিন্তু আর্জেন্টাইন গোলকিপারের রিফ্লেক্স ছিল অনন্য। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে ডান হাতটা গোললাইনের পেছন থেকে টেনে এনে বলটা সেভ করেন মার্তিনেজ।
— Aston Villa (@AVFCOfficial) November 28, 2024
জুভেন্টাস তখনো গোলের দাবি করছে। কিন্তু রেফারি হাতের ঘড়ির দিকে ইঙ্গিত করে জানালেন, গোল হয়নি। সফরকারী দলের চোখেমুখে বিষ্ময়। এমি মার্তিনেজ জন্ম দিলেন আরেকটি অসামান্য মুহূর্তের। ভিডিও রিপ্লেতে দেখা গেছে, বলের পুরোটা গোললাইন প্রায় পেরিয়েই গিয়েছিল। কয়েক সেন্টিমিটারের জন্য হয়নি গোল। দীর্ঘদেহী এমি নিজের ক্ষিপ্রতায় ডান হাতটা গোল লাইনের পেছন থেকে আনার কারণেই বেঁচে যায় অ্যাস্টন ভিলা।
আরও পড়ুন
গর্ডন ব্যাঙ্কসের সেই সেইভটা এবারে দেখা যাক। ডিফেন্ডিং বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের তারকাখচিত দলটা খেলছে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা দলের তকমা পাওয়া ব্রাজিলের বিপক্ষে। ৭০ এর সেই ব্রাজিল দল আর ইংল্যান্ডের মধ্যেকার ম্যাচটা পুরো বিশ্বকাপেরই সবচেয়ে আলোচিত ম্যাচ ছিল।
দুইবারই হেড এসেছিল ডানপ্রান্ত থেকে। দুই ক্ষেত্রেই গোলরক্ষক হাত এনেছিলেন গোললাইনের পেছন থেকে ঘুরিয়ে। ক্ষিপ্রতার দিক থেকে বিবেচনা করলে তড়িৎ নেয়া সেই সিদ্ধান্তটাই গড়ে দিয়েছিল ভাগ্য। স্বাভাবিকভাবে আড়াআড়ি হাত বাড়ালে দিক পরিবর্তন করে গোল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল দুই ক্ষেত্রেই।
ম্যাচের বয়স তখন সবেমাত্র ১০ মিনিট। ঠিক সেই সময় ডান উইংয়ে পাস বাড়িয়ে দিলেন ব্রাজিলের অধিনায়ক রাইট ব্যাক কার্লোস আলবার্তো। জোয়ারজিনহো উপস্থিত ছিলেন সেখানে, বল নিয়ে অনেকটা এগিয়েও গেলেন। এরপরেই ফাঁকায় দাঁড়ানো পেলেকে লক্ষ্য করে ক্রস। ফুটবলের কালো মানিক মাথা ছুঁইয়ে করলেন নিখুঁত হেড।
বামদিকে পোস্টের ফাঁকা অংশে বল রেখেছিলেন পেলে। বুঝতে পারছিলেন গোল হতে যাচ্ছে, চোখে মুখে গোলের আনন্দ। এমনকি উদযাপনও শুরু করেছিলেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি। কিন্তু গর্ডন ব্যাঙ্কস এরপরেই জন্ম দিলেন সর্বকালের সেরা সেইভের। ক্ষিপ্র গতিতে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়েন ইংলিশ গোলরক্ষক।
ডান হাতের দুই আঙ্গুল দিয়ে ফ্লিক করে বলটাকে পাঠিয়ে দিলেন বারের বাইরে। গতদিনের সেইভের সঙ্গে যার মিল পাবেন ফুটবল ভক্তরা। নিশ্চিত গোলটা সেইভ করে ফেললেন ব্যাঙ্কস। হতবাক হয়ে থাকল পুরো স্টেডিয়াম। সেদিনের সেই সেভটাই ফুটবল বিশ্বে সর্বকালের সেরা সেইভ নামে প্রচলিত।
এমি মার্তিনেজের সঙ্গে ব্যাঙ্কসের সেই সেইভে বহু মিলই পাওয়া যায়। দুইবারই হেড এসেছিল ডানপ্রান্ত থেকে। দুই ক্ষেত্রেই গোলরক্ষক হাত এনেছিলেন গোললাইনের পেছন থেকে ঘুরিয়ে। ক্ষিপ্রতার দিক থেকে বিবেচনা করলে তড়িৎ নেয়া সেই সিদ্ধান্তটাই গড়ে দিয়েছিল ভাগ্য। স্বাভাবিকভাবে আড়াআড়ি হাত বাড়ালে দিক পরিবর্তন করে গোল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল দুই ক্ষেত্রেই। ক্যারিয়ারে বহুবারই খবরের শিরোনাম হওয়া মার্তিনেজের সঙ্গে এবার তাই তুলনা হচ্ছে গর্ডন ব্যাঙ্কসের মতো কিংবদন্তির সঙ্গে।
এমি মার্তিনেজের এমন অতিমানবীয় সেইভের দিনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে জুভেন্টাসের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছে অ্যাস্টন ভিলা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ৫ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে নবম উনাই এমেরির দল। সেই সঙ্গে ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে এসি মিলান ও ১৯৯৯-০০ মৌসুমে চেলসির পর তৃতীয় দল হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে ঘরের মাঠে নিজেদের প্রথম তিন ম্যাচেই ক্লিন শিট রাখল ভিলা।
জেএ