বাফুফের কমিটির দায়িত্বে যারা
লিগ কমিটিতেই থাকছেন ইমরুল, তাবিথ নিলেন দুটি কমিটি
নির্বাচনের পর বাফুফের প্রথম সভাতেই স্ট্যান্ডিং কমিটি পুনর্গঠন হয়। আজ (শনিবার) বাফুফের নবনির্বাচিত কমিটির প্রথম সভায় বেশ কয়েকটি কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছে। কাজী সালাউদ্দিনের চতুর্থ মেয়াদে শেষ বছর লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ও বাফুফের তৎকালীন সহ-সভাপতি ইমরুল হাসান। তাবিথ আউয়াল সভাপতি হওয়ার পর লিগ কমিটির চেয়ারম্যান সেই ইমরুল হাসানকেই রেখেছেন।
লিগ কমিটি বাফুফের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কমিটির একটি। দেশের শীর্ষ ও টানা পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ক্লাবের সভাপতিকে লিগ কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত করায় কাজী সালাউদ্দিন বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। ক্লাবের সভাপতি আবার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান বিষয়টি অনেকটাই স্বার্থের সংঘাত। নতুন সভাপতি তাবিথ আউয়াল ইমরুল হাসানকে লিগ কমিটির চেয়ারম্যান রেখে সেই পথেই হাঁটলেন। এ নিয়ে আজকের সভায় তেমন আপত্তি উঠেনি। সালাউদ্দিন আমলের মতোই যেন সভাপতির মতের অনুকূলেই হাঁটার লক্ষণ!
বিজ্ঞাপন
বাফুফে নির্বাহী কমিটির অনেকে ক্লাবের পরিচয়ে ডাগআউটে দাঁড়ান। এতে রেফারিংয়ের প্রতি প্রভাবের অভিযোগ উঠে মাঝে-মধ্যে। ক্লাব সভাপতিকে লিগ কমিটির চেয়ারম্যান হলে তখন আর নির্বাহী কমিটির কেউ ম্যানেজার-কোচ পরিচয়ে ডাগআউটে থাকলে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকে না।
আব্দুস সালাম মুর্শেদী পেশাদার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন এক যুগেরও বেশি সময়। সালাম এই পদ থেকে সরে যাওয়ার পর কাজী সালাউদ্দিন নিজেই দায়িত্ব নেন। এক মৌসুম পর সেই দায়িত্ব ইমরুলের কাঁধে বর্তায়। পেশাদার লিগের ক্লাবগুলো নিয়ে সিনিয়র ও জুনিয়র দুই লিগ মাঠে গড়ালেও আর্থিকভাবে ক্লাবগুলো ফেডারেশন থেকে তেমন সহায়তা পায়নি সাম্প্রতিক সময়ে।
৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে সালাম মুর্শেদী ফেডারেশন থেকে পদত্যাগ করেন। তখন ইমরুল হাসানকে ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত করা হয়। গত দুই মাস তিনি এই দায়িত্বে থাকলেও নতুন কমিটি এসে তাকে স্বার্থের সংঘাতের জায়গায় রাখলেও ফিন্যান্স কমিটি থেকে সরিয়ে রেখেছিল। যদিও ফিন্যান্স সংক্রান্ত বিষয়ে ইমরুল হাসানের দক্ষতা অনেক বেশি। নতুন সভাপতি তাবিথ আউয়াল নিজেই ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব রেখেছেন। তাবিথ আউয়াল ফিন্যান্স কমিটির পাশাপাশি নিজের অধীনে রেখেছেন জাতীয় দল কমিটিও। ২০১২-২০ সাল পর্যন্ত তাবিথ জাতীয় দল কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান ছিলেন। বাফুফের প্রথম সভা শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মিডিয়া কমিটির নতুন চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম বাবু। তিনি স্ট্যান্ডিং কমিটি নিয়ে বলেন, ‘আজকের সভায় শুধুমাত্র ফিন্যান্স কমিটির মেয়াদ ৪ বছর নির্ধারিত হয়েছে। বাকি কমিটিগুলো এক বছরের জন্য। এক বছর পর মূল্যায়নের প্রেক্ষিতে রিনিউ হবে।’
বাফুফে সহ-সভাপতিদের মধ্যে নাসের শাহরিয়ার জাহেদী ডেভলপমেন্ট, ফাহাদ করিম মার্কেটিং, সাব্বির আহমেদ আরেফ ঢাকা মহানগরী ফুটবল কমিটির দায়িত্ব পেয়েছেন। মিডিয়ায় ব্রিফের সময় কমিটির চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম বাবু সহ-সভাপতি ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরি হ্যাপির ব্যাপারে কিছু বলেননি। ফেডারেশন সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় সর্বাধিক ভোট পেয়ে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হওয়া হ্যাপি অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছেন। ফেডারেশনের আর্থিক বিষয়াদি সংক্রান্ত এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ কমিটি।
সদস্যদের মধ্যে ইকবাল হোসেন জেলা ফুটবল, টিপু সুলতান পাইওনিয়ার, মাহফুজা আক্তার কিরণ নারী ফুটবল, বিজন ও গাউস যুগ্মভাবে স্কুল ফুটবল, অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য মঞ্জুরুল করিম, অ-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপে ছাইদ হাসান কানন, প্রকিউরমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছেন জাকির হোসেন চৌধুরি। নির্বাহী কমিটির বাইরে থেকে দুই জন দুটি কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছেন। রাজবাড়ী জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের দুলাল ডিএফএ মনিটরিং কমিটি ও গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছেন সাবেক আমলা জকোরিয়া। আজকের সভায় শুধু কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছে। কমিটির পূর্ণাঙ্গতা প্রসঙ্গে আমিরুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘আমাদের ১৩৩ জন কাউন্সিলর রয়েছেন। এদের মধ্য থেকেই কমিটিগুলো গঠন করা হবে আমরা এ রকম আলোচনাই করেছি।’
সাবেক জাতীয় ফুটবলার ছাইদ হাসান দেড় যুগ পর আবার ফেডারেশনের কমিটিতে ফিরেছেন। সাবেক তারকা ফুটবলারের কোচিং সংক্রান্ত জ্ঞানও অনেক। তিনি আজকের সভায় টেকনিক্যাল কমিটির দায়িত্ব নেওয়ার আশা প্রকাশ করেছিলেন। তার পরিবর্তে টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছেন বাফুফের আরেক সদস্য কামরুল হাসান হিল্টন। কাননের তুলনায় টেকনিক্যাল বিষয়ে অনেকটাই পিছিয়ে। যদিও বিগত টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মহীও টেকনিক্যাল ব্যক্তি ছিলেন না।
লিগ, নারী ও প্রকিউরমেন্ট এই তিন কমিটির চেয়ারম্যান পুর্নবহাল হয়েছেন। পুরোনোদের দায়িত্ব থাকা প্রসঙ্গে আমিরুল ইসলাম বাবুর উত্তর, ‘যারা বিগত সময়ে দায়িত্বে সফল ছিলেন এবং পুনরায় জিতে এসেছেন তাদের আগের দায়িত্বেই রাখা হয়েছে।’ বিগত কমিটির সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত ব্যক্তি ছিলেন মাহফুজা আক্তার কিরণ। তাবিথ আউয়াল তাকে নারী ফুটবলে রেখেছেন। বর্তমান নির্বাহী কমিটির মধ্যে সবচেয়ে অভিজ্ঞ সত্যজিত দাশ রুপু। সাবেক জাতীয় অধিনায়ক ২০০৮ সাল থেকে টানা ফেডারেশনের সদস্য হিসেবে রয়েছেন। তাকে কোনো কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়নি।
আজকের সভায় আলোচ্যসূচি ছিল ২৮টি। এর মধ্যে বাফুফের দেনা-পাওনা, সম্পত্তির হিসাবসহ অনেক কিছুই ছিল। এই বিষয়ে গণমাধ্যমে বাবু বলেন, ‘আমরা অনেক বিষয় সম্পর্কে জেনেছি। যেগুলো আমাদের আভ্যন্তরীণ। অনেক এজেন্ডা ছিল কমিটি সংক্রান্ত। স্ব স্ব কমিটি সেগুলো পরবর্তীতে উপস্থাপন করবে।’
কে কোন কমিটির চেয়ারম্যান :
ফিন্যান্স- তাবিথ আউয়াল
ন্যাশনাল টিমস- তাবিথ আউয়াল
লিগ কমিটি-ইমরুল হাসান
মার্কেটিং- ফাহাদ করিম
ঢাকা মহানগর ফুটবল লীগ কমিটি- সাব্বির আরেফ
মিডিয়া কমিটি-আমিরুল ইসলাম বাবু
পাইওনিয়ার- টিপু সুলতান
স্কুল ফুটবল- বিজন বড়ুয়া ও গোলাম গাউস
অ-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপ- মঞ্জুরুল করিম
অ-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপ- ছাইদ হাসান কানন
টেকনিক্যাল কমিটি- কামরুল ইসলাম হিল্টন
ডিএফএ- ইকবাল হোসেন
ডিএফএ মনিটরিং- দুলাল
প্রকিউরমেন্ট- জাকির হোসেন চৌধুরী
মহিলা ফুটবল- মাহফুজা আক্তার কিরণ
অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটি- ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরি
এজেড/এএইচএস