দেশের ক্রীড়াঙ্গনে শীর্ষ তিন সংস্থা বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন (বিএও), বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারশেন (বাফুফে) ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ক্রীড়াবিদদের সাফল্যে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান আর্থিক পুরস্কার প্রদান করে। এক্ষেত্রে নিজস্ব নীতিমালা/গাইডলাইন ব্যবহার করে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন ও ক্রিকেট বোর্ড। অন্যদিকে, বাফুফের কাজটি একেবারেই মনগড়া।

গত বছর বাফুফে দুইবার জাতীয় পুরুষ ফুটবল দলকে আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা করে। ২০০৯ সালের পর গত বছর বেঙ্গালুরু সাফে সেমিফাইনালে উঠতেই ৫০ লাখ টাকা বোনাস ঘোষণা করেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। আর্থিক অনটনে থাকা ফুটবল ফেডারেশনের ফান্ড থেকেই সেই বোনাস প্রদান করা হয়। মাস তিনেক পর বিশ্বকাপের প্রাক-বাছাইয়ে মালদ্বীপের বিপক্ষে ছিল বাঁচা-মরার লড়াই। সেই ম্যাচ জিতলে ৬০ লাখ টাকা বোনাসের ঘোষণা করেছিলেন সভাপতি। কিংস অ্যারেনায় বাংলাদেশ সেই ম্যাচ জেতার পর ২১ অক্টোবর বাফুফের জরুরি সভায় জামালদের বোনাস প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বছর পেরিয়ে গেলেও সেই অর্থ এখনও পাননি জামাল ভূঁইয়ারা। কমিটি বদল হওয়ায় ফুটবলাররা সেই পাওনা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। 

২০২২ সালে সাবিনা খাতুনরা প্রথমবারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। সেই সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কার পেলেও বাফুফে আলাদাভাবে কিছু করেনি। সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক ব্যক্তিগতভাবে ৫০ লাখ টাকা করে বোনাস দিয়েছিলেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল আবারও দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তবে বাফুফের আগেই বোনাস ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বাফুফের নতুন কমিটি ৯ তারিখের সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়েদের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করবে।

বাফুফের নতুন কমিটির ভাবনায় কেবল সাবিনাদের আর্থিক পুরস্কারের বিষয়। অথচ মাস দুয়েক আগে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ দলও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তাদের আর্থিক প্রণোদনা প্রদান নিয়ে তেমন কোনো আলোচনাই নেই। বোনাস বা আর্থিক পুরস্কার ঘোষণায় কোনো নীতিমালা নেই বাফুফের। টুর্নামেন্ট ও ম্যাচের গুরুত্ব কোনো কিছুই সুনির্দিষ্টভাবে অনুসরণ করা হয় না। সভাপতি বা নীতি-নির্ধারকদের মনমতো ঘোষণা হয় বোনাস। যা দেশের শীর্ষ ও অন্যতম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মানানসই নয়। 

সিনিয়র পুরুষ ফুটবল দলের ম্যানেজার আমের খান বিগত কমিটির নির্বাহী সদস্য ছিলেন। বাফুফের বোনাস ও নীতিমালা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একটি নীতিমালা থাকলে অবশ্যই ভালো। তবে প্রতিশ্রুত ঘোষণা সিদ্ধান্ত হয়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আশা করি নতুন কমিটি এই সংক্রান্ত বিষয়টি আনুষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে আনবে।’ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক তারকা ফুটবলার ছাইদ হাসান কানন প্রায় দেড় যুগ পর বাফুফের কমিটিতে এসেছেন। তিনি ফুটবলারদের বোনাস নিয়ে ফেডারেশনের নীতিমালা প্রসঙ্গে বলেন, ‘নানা পর্যায়ের টুর্নামেন্টে আমাদের সাফল্য আসছে। সংশ্লিষ্ট ফুটবলারদের আমাদের অবশ্যই উৎসাহিত করা উচিৎ। বাফুফের সামর্থ্য ও টুর্নামেন্ট/ম্যাচের গুরুত্ব অনুযায়ী বোনাসের একটি গাইডলাইন নিয়ে নির্বাহী কমিটির সভায় আলোচনাযোগ্য বিষয়।’

বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন সাফ গেমস থেকে শুরু করে অলিম্পিক পর্যন্ত ব্যক্তিগত ও দলীয় ক্ষেত্রে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদকের পুরস্কারের আর্থিক অঙ্ক চূড়ান্ত করেছে এক দশক আগে। এশিয়ান এবং কমনওয়েলথ গেমসের মতো বড় আসর ছাড়াও জুনিয়র-বয়সভিত্তিক গেমসের সাফল্যও বিওএ’র আর্থিক নীতিমালার আওতাধীন। ২০১৬ সালের এসএ গেমস থেকে সেই আর্থিক পুরস্কার নীতিমালা অনুসরণ করে পদকজয়ীদের সম্মানিত করা হয়। গেমস শেষ হওয়ার খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই এটি প্রদান করে বিওএ। ২০২৩ সালে এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জজয়ী নারী ও পুরুষ উভয় দলকে ১৫ লাখ টাকার পৃথক পৃথক চেক প্রদান করা হয়েছিল। 

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও ভালো পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে পুরস্কারের নীতিমালা রয়েছে। তবে সেটা বিওএ’র মতো অতটা সুদৃঢ় নয়। যুব ও নারী ক্রিকেটাররা আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও সেই নীতিমালার মধ্যে নেই। এ প্রসঙ্গে বিসিবির সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরি সুজন জানান, ‘পুরুষ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বোনাসের বিষয়টি রয়েছে। এ ছাড়া বোর্ডেরও একটা গাইডলাইন আছে সাফল্যের ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করার ব্যাপারে। সে অনুসারে ভালো ফলাফলের পর বোনাস প্রদান করা হয়। আমাদের নারী ক্রিকেটাররা চুক্তির আওতায় এসেছেন সম্প্রতি। তাদেরকে ভালো পারফরম্যান্সে বোনাস দিয়ে উৎসাহিত করা হয়। তবে সেক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা নেই। যুব পর্যায়ের সাফল্যের ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটে।’

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নতুন পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘সিনিয়র পর্যায়ে একটি গাইডলাইন রয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও এটি প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করা যেতে পারে।’ 

এজেড/এএইচএস