দুই দিন পর বাফুফের নতুন কমিটির প্রথম সভা। এর আগে আজ প্রথমবারের মতো সভাপতি হিসেবে ফেডারেশনে আসেন তাবিথ আউয়াল। তাবিথসহ নির্বাচিত কমিটির ১৮ জন উপস্থিত ছিলেন। দুই সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ সেলিম ও ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ বিদেশে থাকায় আসতে পারেননি।

প্রথমে ফেডারেশনের বেতনভুক্ত স্টাফ ও পরবর্তীতে সাফ চ্যাম্পিয়ন নারী দলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এরপর গণমাধ্যমের সঙ্গে প্রায় আধ ঘন্টা কথা বলেন নতুন সভাপতি। তাবিথ সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে নির্বাহী কমিটির সভার প্রসঙ্গ এনেছেন। বিগত সময় বাফুফেতে সভাপতির একক কর্তৃ্ত্বের অনেক নজির রয়েছে। তাবিথ নির্বাহী কমিটির সবাইকে সমান প্রাধান্য এবং আনুষ্ঠানিক সভার প্রতি জোর দিয়েছেন আজ বারবার, 'আপনারা হয়তো কিছু প্রশ্ন করতে পারেন। তবে আমি কিছুটা বিরত থাকতে চাই। ৯ তারিখ সভার পরই উত্তর দিতে পারব।'

ফেডারেশনে সর্বোচ্চ পদ সভাপতি হলেও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাহী কমিটিই মূলত সকল সিদ্ধান্তের কেন্দ্রবিন্দু। সভাপতি নির্ভরতা থেকে বের হয়ে আসতে চান নতুন সভাপতি, 'আমরা আগামী চার বছর ফুটবলটা এগিয়ে নিতে চাই কারও একজনের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে। কেউ অসুস্থ থাকতে পারে, কেউ ট্র্যাভেলে থাকতে পারে। অন্য কেউ তার বিকল্প হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে, কাজ এগিয়ে নেবে। সেটা স্টাফদের ক্ষেত্রে যেমন, ঠিক তেমনই আমাদের নির্বাহী কমিটিরও। সভাপতি না থাকলে সিনিয়র সহ-সভাপতি থাকবেন। সিনিয়র সহ-সভাপতি না থাকলে সহ-সভাপতিরা আছেন। এছাড়া নির্বাহী সদস্যরাও কোন না কোন সময় দায়িত্ব নিতে হবে। এভাবেই আমরা দল হয়ে কমিটিটা চালাবো। সিদ্ধান্ততে বা কাজে ক্ষেত্রে কোন বাধা থাকবে না।’

বাফুফের এই নির্বাহী কমিটিতে রয়েছেন নানা মতের ও আদর্শের লোক। নির্বাহী কমিটি নিয়ে তার মন্তব্যে একেবারে যোগ্য নেতার মতোই হয়েছে। সভাপতি হিসেবে পুরো কমিটিকে আগলে রাখলেন এভাবে, 'আমার যোগ্যতা নেই ডেলিগেটের ভোটে যারা নির্বাচিত হয়ে এসেছেন তাদের ব্যাপারে এখনই কোন মন্তব্য করার। বরং তাদের প্রশ্ন করা উচিত, তারা আমাকে নিয়ে সন্তুষ্ট কি না, আমি নেতৃত্বের জন্য যোগ্য কি না। এখানে অনেক অনেক খ্যাতিমান খেলোয়াড় আছেন, আমার চেয়ে অনেক যোগ্য সংগঠক আছেন। আমার চেয়ে অনেক বড় ব্যবসায়ী আছেন এবং আমার চেয়ে অনেক বড় কর্পোরেট প্রতিনিধি আছেন। আমি নিজেকে গ্রেটফুল মনে করি তাদের প্রতি, কারণ তারা আমাদের নেতৃত্বের জায়গাটা দিতে রাজি হয়েছেন। মন্তব্য বা সিদ্ধান্ত দিবেন আমার ব্যাপারে। আরা ওনাদের ডেলিগেটরা নির্বাচিত করে এনেছেন। এখন বাকি দিনগুলো মিলেমিশে আমাদের সবাইকে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে হবে নিজেদের সামর্থ্যের পুরোটা দিয়ে।’

তাবিথ আজ প্রথম দিনে ফেডারেশনের সকল স্টাফদের সঙ্গে বসেছিলেন। প্রশাসনিক প্রধান সাধারণ সম্পাদক দেশের বাইরে ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে ফেডারেশন ফুটবল বিশ্বে নেতিবাচক ঘটনার শিরোনাম হয়েছে স্টাফদের কারণেই। স্টাফদের সম্পর্কে নতুন সভাপতির বক্তব্য, 'মূলত আমরা বলেছি ভেতরকার কোন কথা যাতে বাইরে না যায়। ভেতরের কথা আমি শেয়ার করতে পারছি না, ভবিষ্যতেও করবো না। বাফুফে ফিফা-এএফসির গাইডলাইন অনুসরণ করে। এথিকাল স্ট্যান্ডার্ড, ভেল্যু, মোরাল স্ট্যান্ডার্ড এবং লিগ ব্রিচ কোথায় হতে পারে, আমাদের প্রতিশ্রুতি থাকবে যাতে আমরা স্ট্যান্ডার্ডের নিচে না নামি কিংবা কোন লিগাল ব্রিচে না পড়ি। একটা বা দুইটা ইস্যুতে আলাদা করে বলতে চাই না। সামগ্রিকভাবেই নিয়মের কোন বেত্যয় হতে দিতে চাই না।’

কাজী সালাউদ্দিনের কমিটি কয়েক কোটি টাকা দেনা রেখে বিদায় নিয়েছে। সেই ঋণের বোঝা এখন তাবিথ আউয়ালের কমিটির ঘাড়ে। ১০ কোটি টাকার বেশি ঋণের চাপ সম্পর্কে তাবিথ বলেন, 'আমরা কোন রকম চাপ অনুভব করছি না। এটা একটা ধারাবাহিকতা। বিগত কমিটি থেকে বর্তমান কমিটি একটা নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্ব পেয়েছে। একটা সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে হয়েছে। আমাদের কিছু বিষয় খতিয়ে দেখতে হবে, কিছু বিষয়ের সত্যতা কী, কতটুকু পরিমান আর্থিক বিষয় রয়েছে, না কি নেই। সেগুলো নিয়ে এজিএম-এ আলোচনা হয় না। আমরা এখনও কোন বিচার-বিশ্লেষণে যেতে চাই না। আমরা নির্বাহী কমিটির সভায় সত্যিকারের বিষয়গুলো যখন আলোচনায় আনতে পারবো, তখন সত্যিকারের প্রতিক্রিয়া ও সিদ্ধান্তগুলো জানতে পারবেন।’

চার বছর আগে সহ-সভাপতি হিসেবে ফেডারেশন থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। সময়ের ব্যবধানে এখন সভাপতি হিসেবে প্রবেশ করলেন। এই অনুভূতি নিয়ে তাবিথ বলেন, 'বাফুফে ভবনে এসে নিশ্চয় খুব ভালো লাগছে, মনে হচ্ছে আমি আমার বাসায় ফিরে এসেছি। বিষয়টা এখনও স্বপ্নের মধ্যে আছে না কি, বাস্তব রূপ পেয়েছে, সেটা এখনো বুঝতে পারছি না। তাই এই উপলদ্ধিটা আমি পরে আপনাদের জানাবো। স্বপ্ন তো সবাই দেখে। তবে নির্দিষ্ট করে তো দেখিনি কোন দিন তারিখে সভাপতি হবো। একটা স্বপ্ন তো ছিলই। প্রথম যখন ২০১২ সালে সহ-সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসি, তখন স্বপ্ন ছিল একদিন সভাপতি হবো। হয়তো এত শিঘঘরই মনে করিনি। তবে যা হয়ে গেছে, তা নিয়ে আমি অবশ্যই গর্ববোধ করছি।’

এজেড/এইচজেএস