বাংলাদেশের ফুটবলে এখন চলছে ফেডারেশন নির্বাচন পরবর্তী ব্যবচ্ছেদ ও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা উদযাপন। এই দুইয়ের মাঝে পাহাড়ি দেশ ভুটান বাংলাদেশকে আরেকটি ধাক্কা দিয়েছে। সেটা ফুটবলসংশ্লিষ্ট অনেকেই টের পেয়েও যেন পাননি!

জাতীয় দলের পর ক্লাব ফুটবলেও বাংলাদেশের ভুটান বিপর্যয়। সেপ্টেম্বরে ফিফা র‌্যাংকিং বৃদ্ধি করতে জাতীয় দল ভুটানে দুই ম্যাচ খেলেছিল। এক ম্যাচ জিতে আরেক ম্যাচ হেরে র‌্যাংকিংয়ে দুই ধাপ অবনমন হয়েছে। গতকাল এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ বসুন্ধরা কিংস হেরেছে ভুটানের ক্লাব পারো এফসি’র কাছে। দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে সবচেয়ে দুর্বল দল হিসেবে স্বীকৃত ভুটান। সেই ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশ দেড় মাসের ব্যবধানে জাতীয় ও ক্লাব দল হেরেছে। এতে বাংলাদেশের ফুটবলের মান ও উন্নতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

জাতীয় দলের উদীয়মান তারকা শেখ মোরসালিন। সেপ্টেম্বরে ফিফা উইন্ডোতে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল তার একমাত্র গোলেই। দেড় মাসের ব্যবধানে ক্লাব ও জাতীয় দল দুই জার্সিতে ভুটানে খেললেন। দুই ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ ব্যর্থ ও বাজে পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছে। এই ব্যাপারে মোরসালিনের ব্যাখ্য, ‘আসলে আমরা ভালো খেলতে পারিনি এটাই বাস্তবতা। কোনো অজুহাত দেব না। তবে টার্ফে খেলায় আমাদের অনভ্যস্ততা রয়েছে।’

২০১৬ সালে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্লে অফে বাংলাদেশ ভুটানের বিপক্ষে হেরেছিল। ঐ হারের পর বাংলাদেশের ফুটবলে বড় ধাক্কা লেগেছিল। বছর দেড়েক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার বাইরে ছিল বাংলাদেশ। আট বছর পর সেই ভুটানে জাতীয় ও ক্লাব দলের ম্যাচ হারা ফুটবলে ফের অশনিসংকেত। 

ভুটানি কোনো ক্লাব বাংলাদেশের বিপক্ষে এএফসির টুর্নামেন্টে জয়ের রেকর্ড নেই বললেই চলে। সেখানে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে দাপটে দল বসুন্ধরা কিংস সেই দেশের পারো এফসির বিপক্ষে হেরেছে। দেশি-বিদেশি মিলিয়ে বাংলাদেশে দাপট দেখানো কিংসের ভূটানের পারোর বিপক্ষে পরাজয় মানে এক অর্থে বাংলাদেশেরই পরাজয়। 

 

কিংসের এই পরাজয় সম্পর্কে সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও কোচ জুলফিকার মাহমুদ মিন্টুর বিশ্লেষণ, ‘বসুন্ধরা কিংসের সাফল্যের কারিগরদের (রবসন,গফুরবেগ, ববুরবেক) অনুপস্থিতি । তাদের ঘিরেই দেশি ফুটবলাররা পারফর্ম করতেন। এই শুন্যতা ও সমন্বয়হীনতা অন্যতম কারণ।’

২০১৬ সালেই বাফুফে পল স্মলিকে ট্যাকনিক্যাল এন্ড স্ট্যাটেজিক ডাইরেক্টর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল। দুই মেয়াদে প্রায় ছয় বছর বাফুফের গুরু্ত্বপূর্ণ পদে ছিলেন এই বৃটিশ। ফেডারেশন তাকে মাসে মাসে মোটা অঙ্কের বেতন দিয়েও ফুটবলের প্রকৃত পরিকল্পনা আদায় ও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ফলে ২০২৪ সালেও ভুটানে গিয়ে হারতে হয় বাংলাদেশকে।

সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় দলের প্রীতি ম্যাচে বাংলাদেশ অত্যন্ত বিরক্তিকর ফুটবল খেলেছে। এত কদর্য ফুটবল সাম্প্রতিক সময়ে আর দেখা যায়নি। জাতীয় দলের অনেক ফুটবলার বসুন্ধরা কিংসের। পারো এফসির বিপক্ষে ভুটানের মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা ক্লাব পর্যায়ে কাজে লাগানোর কথা বলেছিলেন অনেকে। দেড় মাস ক্লাব প্রতিযোগিতায় দেখা গেল সেই ব্যর্থতার গল্পই। ভুটানের ক্লাব রক্ষণ, আক্রমণ সব বিভাগেই দারুণ সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। অনেক বড় বাজেটের দল কিংসের পারফরম্যান্স ছিল ম্রিয়মাণ।

ভুটান নারী ফুটবলে অগ্রসর হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের নারীদের সামনে পাত্তাই পায়নি সাফের সেমিফাইনালে। সাফের আগে জুলাইয়ে ফিফা উইন্ডোতে ভুটানে গিয়ে দুই ম্যাচই জিতেছিলেন সাবিনারা।

এজেড/জেএ