আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বসুন্ধরা কিংস ধারাবাহিক ব্যর্থ কেন?
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে টানা পাঁচ বার চ্যাম্পিয়ন। এক মৌসুমে তিন ট্রফিও জিতেছে বসুন্ধরা কিংস। ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় অপ্রতিরোধ্য কিংস এএফসি’র আসরে বরাবরই ম্রিয়মাণ। ২০১৯ সাল থেকে এএফসির আসর খেলা কিংস কোনো বারই গ্রুপ পর্ব পার হতে পারেনি। গতকাল ভুটানে ইস্ট বেঙ্গলের কাছে ৪ গোলে হেরে এএফসির টুর্নামেন্টে ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে কিংস।
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক জাহিদ হাসান এমিলির কিংসের ব্যর্থতার বিশ্লেষণ করলেন এভাবে, ‘বসুন্ধরা কিংস প্রিমিয়ার ফুটবলে আসার পর আবাহনীর সঙ্গে প্রথম দুই সিজন লড়াই হয়েছে। এরপর আবাহনীও সেভাবে লড়াই করতে পারে না কিংসের বিপক্ষে। ঘরোয়া পর্যায়ে কিংসকে সেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীতার মুখে পড়তে হয় না। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলা এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে সেই ধাঁচটা থাকে। যার প্রভাব পড়ে ফলাফলে।’
বিজ্ঞাপন
গত দুই-তিন সিজনে প্রথম লেগ শেষেই বসুন্ধরা কিংসের শিরোপা নিশ্চিত হয়ে যেত। একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী ১০-১২ পয়েন্ট পেছনে থাকত। ফলে তিন-চার ম্যাচ আগেই লিগের শিরোপা নিশ্চিত হয়ে যায় কিংসের।
এএফসির আসরে কিংস দুই বার বাদ পড়েছে বিতর্কিত রেফারিং সিদ্ধান্তে। এর পেছনেও ঘরোয়া ফুটবলের সংস্কৃতি দায়ী। বাংলাদেশের রেফারিদের অনেকেই ছোটখাটো বিষয় এড়িয়ে যান। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেই ভুলে পেনাল্টি, ফাউল, কার্ডের শিকার হয়েছে কিংস। সদ্য সমাপ্ত মৌসুমেই বসুন্ধরা কিংসের বিদেশি ফুটবলাররা রেফারি ও প্রতিপক্ষের সঙ্গে বাদানুবাদ ও গায়ে হাত তুললেও কার্ড দেখেননি।
অনেক রেফারি কিংসের বিপক্ষে কড়া সিদ্ধান্তও দেন। সেই রেফারিদের আবার ম্যাচে বরাদ্দ না দেয়ার অনুরোধ করে কিংস কর্তৃপক্ষ ফেডারেশনকে। সেরা দল গড়েও রেফারি নিয়েও চিঠিও দেয় কিংস। নানাবিধ কারণে ফেডারেশন সেই অনুরোধ আমলে নেয়।
বসুন্ধরা কিংস এএফসি টুর্নামেন্ট সফল হতে রোমানিয়ান কোচ ভ্যালেরি তিতেকে এনেছে। বিশেষায়িত কোচ আসার পরও ব্যর্থ বাংলাদেশের বর্তমান লিগ চ্যাম্পিয়ন। ব্রাদার্স ইউনিয়নের ম্যানেজার ও সাবেক ফুটবলার আমের খান কিংস ব্যর্থতা সম্পর্কে বলেন, ‘বসুন্ধরা কিংস এর আগেও ভারতের ক্লাবের বিপক্ষে চার গোলে হেরেছে। কোচ বদলের পরও চার গোল হার। আমার মনে হয় অন্য কোথাও সমস্যা রয়েছে যেটা বসুন্ধরা কিংস কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে খোঁজা উচিত। একটি ক্লাব এত বিনিয়োগ, চেষ্টার পরও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফল পাচ্ছে না এটা বাংলাদেশের ফুটবলের জন্যই দুঃখজনক।’
বসুন্ধরা কিংসের ছয় বছর কোচ ছিলেন স্প্যানিশ অস্কার ব্রুজন। তিনি এখন ইস্ট বেঙ্গলের কোচ। কাল ভুটানের থিম্পুতে কিংসকে চার গোলে হারানোর পর কিংসের ম্যানেজার ওয়াসিমকে ইঙ্গিত করে ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য রেখেছেন। ম্যানেজারের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় কিংস-অস্কার দুই পক্ষের চুক্তি নবায়ন হয়নি। বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান ম্যানেজার ওয়াসিমের প্রতি অনেক আস্থাশীল।
অস্কার কিংসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর সামাজিক মাধ্যমে কিংস সভাপতিকে কয়েকজন মানুষ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি মূলত ওয়াসিমকেই বুঝিয়েছেন। নতুন কোচ ভিলেরি তিতে আসার পর কিংসের দেশীয় কোচিং স্টাফের প্রভাবেও তারতম্য হয়েছে। অস্কারের সময় প্রাধান্য পাওয়া ট্যাকনিক্যাল ডাইরেক্টর বায়েজিদ জোবায়ের নিপু, দেশের এএফসি প্রো লাইসেন্সধারী আসিফ মাহমুদের দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা কমেছে।
সদ্য সমাপ্ত মৌসুমেই বসুন্ধরা কিংসের বিদেশি ফুটবলাররা রেফারি ও প্রতিপক্ষের সঙ্গে বাদানুবাদ ও গায়ে হাত তুললেও কার্ড দেখেননি। অনেক রেফারি কিংসের বিপক্ষে কড়া সিদ্ধান্তও দেন। সেই রেফারিদের আবার ম্যাচে বরাদ্দ না দেয়ার অনুরোধ করে কিংস কর্তৃপক্ষ ফেডারেশনকে। সেরা দল গড়েও রেফারি নিয়েও চিঠিও দেয় কিংস। নানাবিধ কারণে ফেডারেশন সেই অনুরোধ আমলে নেয়।
দেশের অন্যতম সেরা কোচ মারুফুল হক। বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে তার সম্পর্ক শুরু থেকেই সুখকর নয়। অ-২০ ফুটবল দলে খেলোয়াড় ছাড়া নিয়ে তো দুই পক্ষ রীতিমতো তর্ক-বিতর্কে জড়িয়েছিল। মারুফুল হক বসুন্ধরা কিংসের এই ব্যর্থতা নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া কোথাও ব্যক্ত করেননি। তবে সামাজিক মাধ্যমে তিনি একটি পোস্ট করেছেন ফুটবলসংশ্লিষ্টদের ধারণা যা কিংসকে নিয়েই। সেই পোস্টে মারুফ বুঝিয়েছেন সবই ঠিক আছে পরিবর্তন দরকার সংস্কৃতির, সংস্কৃতির পরিবর্তন হলে সাফল্য মিলবে।
প্রতিবারই কিংস এএফসির আসর থেকে বাদ পড়ার পর ঘরোয়া কাঠামো, কিংসের নানা আধিপত্যের বিষয় আলোচিত হয়। কিছু দিন আলোচনা-সমালোচনা হলেও সেই আগের বৃত্তেই থাকে। ফলে পরের আসরও একই ফল হয়!
এজেড/জেএ