কপালটা পুড়েছিল এর আগে আরও অনেকেরই। তবে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের মতো আগাম আভাস পাননি কেউই। লম্বা সময় ধরেই ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিন ব্যালন ডি’ অর প্রদানে গোপনীয়তা রক্ষা করেছে। কিন্তু দৃশ্যপট বদলেছে এবারে। গণমাধ্যমের খবর, ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের ব্যালন ডি’ অর উদযাপন করতে মাদ্রিদ প্রেসিডেন্ট ফ্লেরেন্তিনো পেরেজসহ ৫০ জনের বহর উড়ে যেতে চেয়েছিল প্যারিসে। 

কিন্তু ম্যানচেস্টার সিটির পক্ষ থেকেই জানানো হয়, ভিনিসিয়ুস নয়– ব্যালন ডি অরের শ্রেষ্ঠত্ব যাচ্ছে রদ্রি হার্নান্দেজের কাছে। এরপরেই রিয়াল মাদ্রিদের বয়কট। স্কাই ইতালিয়ার সাংবাদিক ফ্যাব্রিজিও রোমানোর সূত্র ধরে পুরো বিশ্বের কাছে ছড়িয়ে পড়া। 

সাধারণত ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিন ব্যালন ডি' অর তালিকা নিয়ে বরাবরই সর্বোচ্চ গোপনীয়তার চেষ্টা করে। মূল আয়োজনের আগে উপস্থাপকদেরও ধারণায় থাকে না কে জিততে চলেছেন ফুটবলের ব্যক্তিগত এই প্রেস্টিজিয়াস শিরোপা। কিন্তু এবারে দৃশ্যপট পুরোই বদলে যায় রিয়াল মাদ্রিদের এমন সিদ্ধান্তের কারণে। 

তবে ব্যালন ডি’ অরের লম্বা ইতিহাসে ভিনিসিয়ুসই এমন না, যার ব্যালন না পাওয়া নিয়ে এত শোরগোল এর আগে বহুবারই ঘটেছে এমন কিছু। ঢাকা পোস্ট অতীতের তেমন কিছু ঘটনাই নিয়ে এসেছে সামনে। 

 

আর্লিং ব্রুট হালান্ড - ২০২৩ 

লিওনেল মেসির ৮ম ব্যালন ডি’অরের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ম্যানচেস্টার সিটির আর্লিং হলান্ড। এর ঠিক আগের মৌসুমে ট্রেবল জিতেছেন। মৌসুম জুড়ে গোল করেছেন ৫২টি। জিতেছেন উয়েফার বর্ষসেরা ফুটবলারের খেতাবটাও। যে কারণে হালান্ডকে খুব একটা পিছিয়ে রাখা যায়নি শুরু থেকেই। 

কিন্তু ব্যালন ডি অর কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২২ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই সময়কেই ২০২৩ সালের পুরস্কারের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ছিলেন অনেকেই। আচমকা নিয়মের বদল মানতে পারেননি অনেকেই। 

এ সময়ে আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জেতার পাশাপাশি পিএসজির হয়ে ফ্রেঞ্চ লিগ জিতেছেন মেসি। এমনকি নতুন ক্লাব ইন্টার মায়ামির হয়েও দারুণ শুরু করেছিলেন। ব্যালন ডি অরও ওঠে মেসিরই হাতে। তা নিয়ে বেশ বিতর্ক হয়েছিল সেবারে। 

রবার্ট লেভানডফস্কি - ২০২০ এবং ২০২১ 

ফুটবলের ইতিহাসে মাত্র ২য় দল হিসেবে দুইবারের ট্রেবল এবং হেক্সা পূরণ করেছিল বায়ার্ন মিউনিখ। সাল ২০২০। যখন পুরো বিশ্ব আক্রান্ত কোভিডে, তখনই ফাঁকা গ্যালারির সামনে বায়ার্ন দেখিয়েছিল তাদের এমন দাপট। কিন্তু, সেবারে কোভিডের ইস্যু তুলে ব্যালন ডি অর প্রদান বন্ধ রাখে ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিন। কিন্তু সেবারে বায়ার্ন মিউনিখ স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডফস্কি এতই দুর্দান্ত ছিলেন, অন্য কারো কথা ভাবাই ছিল অন্যায়। 

২০২১ সালে এসেও সেই ক্ষুরধার ফর্ম ধরে রেখেছিলেন লেভা। ব্যালন ডি অর তার পাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত। অনুষ্ঠানের রাতে বায়ার্ন মিউনিখের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজেই বলা হয়, ‘রবার্ট লেভানডফস্কি নিজের প্রথম ব্যালন ডি’ অর নিতে যাচ্ছেন।’ 

কিন্তু এবারেও বাদ সাধে মেসির বিশাল ভোটব্যাংক। নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা পেয়েছিলেন লিওনেল মেসি। কোপা আমেরিকার সেরা খেলোয়াড়। বার্সেলোনার হয়ে ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় সাফল্য টেনে নিয়েছিল সাংবাদিকদের ভোট। একেবারে কাছ থেকে ব্যালন মিস করেন লেভানডফস্কি। 

ফ্রাঙ্ক রিবেরি - ২০১৩ 

বলা হয় ‘ব্যালন ডি অর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ডাকাতির ঘটনা’। ২০১৩ সালে উড়ন্ত ছন্দে থাকা বার্সেলোনাকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে ৭-০ গোলে মাটিতে নামিয়েছিল বায়ার্ন মিউনিখ। ইয়ুপ হেইঙ্কেসের অধীনে সেই বায়ার্ন জয় করেছিল সম্ভাব্য সব শিরোপাই।  

প্রায় সবাই নিশ্চিত ছিলেন রিবেরির ব্যালন ডি’ অর জয় নিয়ে। পুরো মৌসুমে যার ছিল ৩৪ গোল-অ্যাসিস্ট। কিন্তু সবাইকে বিষ্মিত করে শেষ পর্যন্ত ব্যালন ডি অর জেতেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। সেবারের ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে আজও ক্ষিপ্ত রিবেরি। গতকাল ভিনিসিয়াস ব্যালন ডি অর না জেতার পর ইন্সটাগ্রাম স্টোরিতে হাসির ইমোজি দিয়ে পুরাতন ক্ষোভটাই নতুন করে প্রকাশ করেছেন রিবেরি। 

থিয়েরি অঁরি - ২০০৩ এবং ২০০৪ 

এক মৌসুমে ২০ গোল এবং ২০ অ্যাসিস্ট। অন্য মৌসুমে আর্সেনালের হয়ে অপরাজেয় লিগ মৌসুম। আর্সেনালের থিয়েরি অঁরি ব্যালন ডি অর জিতবেন এমনটা ধরেই নিয়েছিলেন সবাই। কিন্তু অদ্ভুতভাবে দুই বারেই হেরে বসেন তিনি। প্রথমবার তাকে পরাস্ত হতে হয় পাভেল নেদভেদের কাছে। জুভেন্টাসে সেই বছর এই চেক মিডফিল্ডার করেছিলেন ১৭ গোল। সঙ্গে ছিল ১৪ অ্যাসিস্ট। 

পরের বছর ৩৯ গোল করেও অবিশ্বাস্যভাবে অঁরি ব্যালন ডি অর মিস করেন আন্দ্রেই শেভচেঙ্কোর কাছে। এসি মিলানে খেলা ইউক্রেনের এই ফরোয়ার্ড সেই বছরে জিতেছিলেন ইতালিয়ান লিগের শিরোপা। ২০০৪ সালে অঁরি অবশ্য সেরা তিনেই জায়গা পাননি। পোর্তোর হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা ডেকো ছিলেন দ্বিতীয়। আর বার্সেলোনার হয়ে দারুণ মৌসুম পার করে রোনালদিনহো ছিলেন তৃতীয়। 

জেএ