কিংবদন্তি ফুটবলার সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালী সাব্বির ও সাবেক জাতীয় ফুটবলার এবং কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে সহ-সভাপতি পদ চারটি। এই পদে প্রার্থীর সংখ্যা ছয় জন। ২০১৬ সালের পর পুনরায় সহ-সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন দেশের অন্যতম সেরা ফুটবলার সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালী সাব্বির। সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও কোচ শফিকুল ইসলাম মানিকও এই পদের আরেক প্রার্থী। দুই ফুটবলার বাদে বাকি চার সহ-সভাপতি প্রার্থীর ফুটবলাঙ্গনে সেভাবে পরিচিতি ও সম্পৃক্ততা নেই। নির্বাচনের কুটিল হিসেবে দুই ফুটবলারই জয়ের হিসেবে তাদের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছেন আর্থিক সক্ষমতা ও রাজনৈতিক দলীয় প্রভাবে।

ফুটবল ফেডারেশন ফুটবলসংশ্লিষ্টদের জায়গা। সেখানে সহ-সভাপতি পদে এমন প্রার্থী দাড়িয়েছেন যাদের চিনতে কাঠখড় পোড়াতে হয়। এই প্রার্থীদের জন্য সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও কোচ শফিকুল ইসলাম মানিকের উপর মনোনয়ন প্রত্যাহারের ব্যাপক চাপ ছিল। তিনি নির্বাচনে একেবারে অনড় থাকায় শেষ পর্যন্ত এই পদে ভোটাভুটি হচ্ছে।

দুই সাবেক তারকা ফুটবলার একসুরেই বলেন, 'আমরা ফুটবলের সঙ্গে আজীবন রয়েছি। ফুটবল ফেডারেশনে আমাদেরই অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। গত ১৫ বছর আমরা নানা সমালোচনা করেছি। কাউন্সিলরদের এখন আমাদের মূল্যায়ন করার সময়।' বাফুফে নির্বাচনের কাউন্সিলরদের অধিকাংশ দলীয়। আবার কেউ আবার কিছু সুবিধার বিনিময়ে নিজের বিবেক-বুদ্ধি বিক্রি করেন এমন অভিযোগও অনেক।

সহ-সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন লক্ষীপুর জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরি (হ্যাপি)। তিনি কোনো সাবেক ফুটবলার, বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক নন। এরপরও এই নির্বাচনে তিনি সহ-সভাপতি পদে বেশ ফেভারিট প্রার্থী। কারণ তিনি বিএনপি’র শীর্ষ স্থানীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরি অ্যানির বড় ভাই। বাফুফে নির্বাচনে ১৩৩ জন কাউন্সিলরের মধ্যে এক চতুর্থাংশ রয়েছেন বিএনপিমনা। ফলে হ্যাপির সেই সকল ভোট প্রায় নিশ্চিতই।

ব্রাদার্স ইউনিয়নের সদস্য সচিব সাব্বির আহমেদ আরেফ তিনিও সহ-সভাপতি প্রার্থী। ২০০১ সাল পরবর্তী বিএনপি শাসনামলে তিনি ব্রাদার্সের সঙ্গে ছিলেন। ফুটবল মাঠে অপ্রীতিকর ঘটনায় বাফুফে থেকে নিষিদ্ধও ছিলেন। আওয়ামী লীগের আমলে ক্লাব ও ফুটবলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বা থাকতে পারেননি। পট পরিবর্তনের পর ব্রাদার্স ইউনিয়নের সদস্য সচিবের দায়িত্ব নিয়েছেন। এখন বাফুফে সহ-সভাপতি প্রার্থীও হয়েছেন। বড় ফুটবলার ও প্রতিষ্ঠিত সংগঠক না হয়েও তার এই পদের প্রার্থীতার ভিত্তি সেই রাজনৈতিক কারণই। তিনি ঢাকা মহানগর বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ফুটবলাঙ্গনে ব্যাপক জনশ্রুতি রয়েছে, ব্রাদার্স ইউনিয়নের আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক আহমেদ তাবিথ আউয়ালকে ব্রাদার্সের প্রতিনিধি আরেফের জন্য বিশেষ অনুরোধ করেছেন। দক্ষিণের মেয়র নির্বাচনকারীর অনুরোধ উত্তরের মেয়র অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। ফলে সাব্বির আরেফও সহ-সভাপতি পদে হেভিওয়েট প্রার্থী।

ফাহাদ করিম ক্রীড়াঙ্গনে পরিচিত স্পোর্টস ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্ট ব্যবসায়ী হিসেবে। ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে তার দেনা-পাওনা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এমন একজন ব্যক্তি সহ-সভাপতি প্রার্থী হওয়ায় প্রশ্ন উঠছে ফুটবলাঙ্গনেও। ফুটবলের ট্যাকনিক্যাল জ্ঞান, সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা নেই শুধু আর্থিক সামর্থ্যরে জন্যই তার সহ-সভাপতি প্রাথীতার মূলে।

সহ-সভাপতি পদে আরেক প্রার্থী নাসের শাহরিয়ার জামান জাহেদী। তারও ফুটবলের শীর্ষ স্তরে তেমন পরিচিতি নেই। যশোরে শামসুল হুদা একাডেমীর মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে তার একটা পরিচিতি রয়েছে। সদ্য বিলুপ্ত সংসদে ঝিনাইদাহ-২ আসনে সংদস সদস্য ছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের পদও ছিল। দেশের শীর্ষ ফার্মাসিটিক্যালসের চেয়ারম্যান ও আর্থিক সক্ষমতায় সেই বিতর্ক অনেকটা পেছনে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। সহ-সভাপতি পদে তিনিও হেভিওয়েট প্রার্থী শুধুই আর্থিক সামর্থ্যের জন্য।

বাফুফে নির্বাচনে সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি পদের জন্য নানা যোগ্যতা-অভিজ্ঞতা থাকার পরেও দেশের শীর্ষ পর্যায়ের নীতি-নির্ধারকদের সবুজ সঙ্কেত প্রয়োজন হয়। সহ-সভাপতি পদে নির্বাচনে রাজনৈতিক শক্তির পাশাপাশি আর্থিক সামর্থ্য আরেকটি বড় নিয়ামক। সেখানে ফুটবলের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ঠুনকো। বিগত ১৬ বছরে বিভিন্ন মেয়াদে নির্বাচিত বাদল রায়, কাজী নাবিল, তাবিথ আউয়াল, মহিউদ্দিন আহমেদ মহী, আরিফ খান জয়, আতাউর রহমান ভূইয়া মানিক, ইমরুল হাসান সবার জন্যই এটি প্রযোজ্য। অর্থের খেলা ও দলীয় প্রভাবের জন্য আব্দুর রহিম, শওকত আলী খান জাহাঙ্গীর, আনোয়ারুল হক হেলালের মতো প্রকৃত সংগঠকরা নির্বাচনমুখো হন না। 

এজেড/এইচজেএস