ক্রীড়াঙ্গনে ফাহাদ করিমের পরিচিতি স্পোর্টস ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসায়ী হিসেবে। গত কয়েক বছরে বাফুফের সঙ্গে ফাহাদ করিমের প্রতিষ্ঠান ‘কে স্পোর্টস’ বেশ কয়েকটি ইভেন্ট বাস্তবায়ন করেছে। ইভেন্টের আয়োজন ও মান নিয়ে তেমন প্রশ্ন না উঠলেও দুই পক্ষের দেনা-পাওনার মাঝে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। তাই ফাহাদ করিমের আকস্মিক নির্বাচনে প্রার্থীতা নিয়ে ফুটবলাঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। 

বাফুফে কে-স্পোর্টসের কাছে ২ কোটি টাকা পায়, এমন একটি চিঠি দিয়েছিল বছর খানেক আগে। এর বিপরীতে বাফুফে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে দাবি করে পাল্টা চিঠি দিয়েছিল কে-স্পোর্টস। কারণ কে-স্পোর্টসকে ডিঙিয়ে বাফুফে সরাসরি স্পন্সর বসুন্ধরা গ্রুপের কাছ থেকে অর্থ এনেছিল। বাফুফে-কে স্পোর্টস এই জটিলতা নিরসনে নির্বাহী সভায় ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে সালাম-ফাহাদের বেশ কয়েকটি বৈঠকও হয়েছে। সেই বৈঠকের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে জানা নেই বাফুফের। তাই বাফুফের হিসাবের খাতায় কে-স্পোর্টসের কাছে পাওনা এখনও কোটির ওপরে। অন্যদিকে ফাহাদের দাবি, ‘সালাম ভাইয়ের সঙ্গে ফেডারেশন ও তার অফিসে বেশ কয়েকবার মিটিং হয়েছে। সকল বিষয় মীমাংসিত। দাবি-দাওয়া কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই।’

৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ক্রীড়াঙ্গনে সবার আগে পদত্যাগ করেন বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী। সালামের পরিবর্তে বাফুফের সহ-সভাপতি ইমরুল হাসান ফিন্যান্স কমিটির নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন। তিনি কে-স্পোর্টসের সঙ্গে বাফুফের দেনা-পাওনা সম্পর্কে বলেন,‌ ‘কে-স্পোর্টসের সঙ্গে বাফুফের আর্থিক বিষয়াদি অমীমাংসিত ছিল। বোর্ড থেকে সাবেক ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যানকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এ নিয়ে আলোচনার জন্য। এরপর বোর্ড এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কিছু জানতে পারেনি। সামনে ফিন্যান্স সংক্রান্ত একটি বিশেষ সভা হবে, সেখানে বিষয়টি আলোচনা হতে পারে।’

৩ অক্টোবর বাফুফের সভায় চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে ফেডারেশনের পাওনা থাকায় কাউন্সিলরশিপ প্রদান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সেই প্রেক্ষিতে বাফুফের নির্বাহী কমিটির অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে, কে-স্পোর্টসের কাছে বাফুফে যদি আনুষ্ঠানিকভাবে পাওনা থাকে, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার বাফুফে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কতটুকু বৈধ এবং নৈতিক। বাফুফের কাছে দেনায় থাকা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নির্বাচনী প্রার্থী হতে পারবেন কি না এ নিয়ে নির্বাচনী বিধিমালায় সুস্পষ্ট কিছু নেই।

ফাহাদ করিমের সঙ্গে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের অত্যন্ত সখ্যতা। সালাউদ্দিনের বেশ আস্থাভাজন নির্বাহী সদস্য মাহফুজা আক্তার কিরণেরও বেশ ঘনিষ্ঠ কে-স্পোর্টসের ফাহাদ। গত বছর নারী ফ্রাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছিল কে-স্পোর্টস। লোগা অনুষ্ঠানও করেছিল। এসব আনুষ্ঠানিকতার পর বাফুফে সভায় ফ্রাঞ্চাইজি লিগের অনুমোদনের জন্য উত্থাপিত হলে নির্বাহী কমিটির তোপের মুখে পড়েছিলেন কিরণ। নানা সমালোচনার পর সভায় ফ্রাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনের জন্য কে-স্পোর্টসকে অনুমতি প্রদান করা হয়। এক বছর পেরিয়ে গেলেও এই লিগ আয়োজন করতে পারেনি কে-স্পোর্টস। এই ফ্রাঞ্চাইজি লিগের জন্য কয়েকজন নারী ফুটবলারকে বিদেশে খেলার অনুমতিও দেয়নি ফেডারেশন। ফলে খেলোয়াড়দের মধ্যে একটা ক্ষোভও থেকে যায়। 

কাজী সালাউদ্দিনের আমলে বাফুফের বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্টের স্বত্ব কে-স্পোর্টস কিনেছিল। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ও বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ ছাড়াও বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা গোল্ডকাপেও সম্পৃক্ততা ছিল কে-স্পোর্টসের। বিপিএল-বিসিএল চুক্তির দু’কোটি টাকা দাবি ছাড়াও বঙ্গমাতা টুর্নামেন্টে ৩০-৪০ লাখ আলাদা পাওনা ছিল। বাফুফে বারংবার তাগাদা দেওয়ার পর অবশ্য এই দেনা চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করেছে। যদিও এখন পর্যন্ত সেই চেক ব্যাংকে জমা দেয়নি বাফুফে, এমনটাই জানা গেছে। 

এজেড/এএইচএস