বাফুফে নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ থাকে সভাপতি পদে। এবার অবশ্য সেই আগ্রহে ভাটা পড়ছে। সভাপতি চারটি মনোনয়ন পত্র বিক্রি হলেও শেষ পর্যন্ত তাবিথ আউয়াল ছাড়া বাকি তিন জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। তিন জনের মধ্যে কেউ শেষ পর্যন্ত তাবিথের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলেও সেই লড়াইয়ে তাবিথই এগিয়ে আছেন নানা সমীকরণে। তাই সভাপতি পদে এবার তেমন আকর্ষণ নেই।

বাফুফে মনোনয়ন পত্র ক্রয়-বিক্রয় শেষে সবার আলোচনায় এখন সিনিয়র সহ-সভাপতি পদ। এই পদে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন বাফুফের বর্তমান সহ-সভাপতি ও বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান ও সদ্য বিলুপ্ত প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের ক্লাব সাইফ স্পোর্টিংয়ের স্বত্ত্বাধিকারী তরফদার রুহুল আমিন। দুই জনই একটি করে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। দুই জনই মনোনয়ন পত্র জমা দিলে এবং বৈধ হলে ও শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার না করলে ভোটাভুটি হবে। 

তরফদার রুহুল আমিন ও ইমরুল হাসান ফুটবলাঙ্গনে খুব বেশি পুরনো ও অভিজ্ঞ সংগঠক নন। গত কয়েক বছরে তাদের কর্মকান্ডে অবশ্য ফুটবলাঙ্গনে দুই জনই অত্যন্ত জনপ্রিয়তা এবং আস্থা অর্জন করেছেন। তাই ফুটবলপ্রেমীদের প্রত্যাশা ছিল দুই জনই এক সঙ্গে বাফুফের কমিটিতে থেকে ফুটবল উন্নয়নে কাজ করার। দুই জনই একই পদে মনোনয়ন নেয়ায় এখন একজন বাফুফের কমিটিতে থাকতে পারবেন না।

বাফুফের বর্তমান সহ-সভাপতি ইমরুল হাসান প্রথম দিনই সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে মনোনয়ন নেন। তরফদার রুহুল আমিন সিঙ্গাপুর থাকায় ঘোর অনিশ্চয়তা ছিল তিনি আদৌ নির্বাচন করবেন কিনা। আকস্মিকভাবে তিনি সভাপতি থেকে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে আগ্রহী হন এবং সমঝোতার আলাপ শুরু হয়। ইমরুল হাসানকে সহ-সভাপতি পদে আরেকটি মনোনয়ন নেয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিল সমঝোতার জন্য। ইমরুল হাসান এতে সায় দেননি। নির্বাচন করলে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদেই অন্যথায় নির্বাচন নয় এমন দৃঢ় অবস্থান তার।

তরফদার রুহুল আমিন ১৫ সেপ্টেম্বর বাফুফে নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই ঘোষণার পর আকস্মিকভাবে নিভৃতে ছিলেন। গতকাল শোনা গিয়েছিল, তিনি সভাপতি এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি অথবা সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং সহ-সভাপতি মনোনয়ন পত্র গ্রহণ করতে পারেন। আজও দিনভর আলোচনার পর শেষ পর্যন্ত তিনি শুধু সিনিয়র সহ-সভাপতি পদেই মনোনয়ন পত্র গ্রহণ করেছেন। এতে ইমরুল-তরফদার দ্বৈরথ সৃষ্টি হয়েছে।

 

তরফদার রুহুল আমিনের ফুটবলাঙ্গনে আর্বিভাব চট্টগ্রাম আবাহনীর মাধ্যমে ২০১৫ সালে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ আয়োজন করে। এরপর নিজেই সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব গঠন করেছিলেন। চট্টগ্রাম আবাহনীর ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান গত এক দশক। বাফুফেতে ব্যাপক স্পন্সরও করেছিলেন এক সময়। শত কোটি টাকা ফুটবলে ব্যয় করেও ২০২০ সালে বাফুফে নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী হতে না পেরে তিনি কিছুটা দূরে ছিলেন। সাইফ স্পোর্টিং দলও উঠিয়ে নেন। এবার নির্বাচনে আবার সরব হয়েছেন।

ইমরুল হাসান বসুন্ধরা গ্রুপের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। কর্মকর্তা হলেও বসুন্ধরা গ্রুপের ফুটবল বিনিয়োগ ও ফুটবল সাফল্যের নেপথ্যের কারিগর তিনিই। ২০১৬ সালে পাইওনিয়ার থেকে যাত্রা শুরু করা বসুন্ধরা কিংস এখন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা ফুটবল ক্লাব। বাংলাদেশের প্রথম ফুটবল ক্লাব হিসেবে নিজস্ব স্টেডিয়াম, বসুন্ধরা কিংসের টানা পাঁচ চ্যাম্পিয়ন, বাফুফেতে বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতা, ক্লাব ও জেলা পর্যায়ে আর্থিক সহায়তা সবই করেছেন তিনি।

তরফদার ও ইমরুলের পাশাপাশি সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে মনির হোসেন নামে অপরিচিত একজন মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। ফুটবলাঙ্গনে এই ব্যক্তি তেমন কেউ চেনেন না। মনোনয়ন বিক্রি করা বাফুফে স্টাফদের তথ্য, ৬০ বছর বয়সী মনির হোসেন একেবারে শেষ ব্যক্তি হিসেবে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। তারা কখনো তাকে বাফুফে ভবন বা ফুটবল সংক্রান্ত কর্মকান্ডে দেখেননি।

আগামীকাল দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে সরকারি ছুটি। বাফুফের নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যক্রম বন্ধ। ১৪ ও ১৫ অক্টোবর মনোনয়ন পত্র জমা। তরফদার রুহুল আমিন ও ইমরুল হাসান দুই জনই মনোয়নন পত্র জমা দিলে নির্বাচনের পথে হাটবে। যদিও ফুটবলাঙ্গনের গুঞ্জন রয়েছে দুই জনের মধ্যে একজন জমা নাও দিতে পারেন আবার জমা দিলেও শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার করতে পারেন। শেষ পর্যন্ত দুই জনই প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলে বাফুফে নির্বাচনের সবচেয়ে আকর্ষণ থাকবে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদেই।

বাফুফে ছাড়া অন্য কোনো ফেডারেশনে সিনিয়র সহ-সভাপতির আনুষ্ঠানিক পদ নেই। ২০০৮ সাল থেকে বাফুফের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে ছিলেন সাবেক তারকা ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদী। ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর তিনি ক্রীড়াঙ্গনে সর্বপ্রথম পদত্যাগ করেছেন। ২০২০ সালে সালাম মুর্শেদী শেখ আসলামকে, ২০১৬ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এবং ২০১২ সালে গোলাম রব্বানী হেলাল, আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নুকে ও ২০০৮ সালে মুনীর আহমেদকে পরাজিত করেছিলেন। 

এজেড/জেএ