২৬ অক্টোবর বাফুফে নির্বাচন। আজ বিকেলে প্রথম সভায় বসেছিল নির্বাচন কমিশন। মাত্র সপ্তাহ তিনেক বাকি থাকায় ফুটবলাঙ্গনের মতো গণমাধ্যমেরও ধারণা ছিল আজই ঘোষণা হতে পারে নির্বাচনী তফসিল।

ঘণ্টা দেড়েক বাফুফে ভবনে সভার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আজ নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়াদি আলোচনা করেছি। বিগত নীতিমালা,গঠনতন্ত্র পর্যালোচনাও করে একটি তফসিল তৈরিও করেছি। সেগুলো আরেকটু আজ দেখে আগামীকাল সকাল সাড়ে এগারোটায় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করব।’

বাংলাদেশ সরকারের সাবেক আমলা ২০০৮ সাল থেকে বাফুফে নির্বাচনে প্রধান কমিশনারের দায়িত্বে। পঞ্চম বারের মতো নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে এসে তার প্রথম নির্বাচনের স্মৃতি মনে পড়ছে, '২০০৮ সালে সেনা সরকার ছিল। এরপরের তিন বার দলীয় সরকার। এবারও অনেকটা সেই রকম পরিস্থিতি।'

বাফুফে নির্বাচনে রাজনৈতিক চাপ অলিখিত বিষয়। সেই চাপের বিষয়টি এড়িয়ে যাননি নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, 'রাজনৈতিক চাপ থাকলে সেটা প্রার্থীর ক্ষেত্রে। আমাদের নির্বাচন কমিশনে কোনো চাপ ছিল না। প্রার্থীতার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কোনো হাত নেই।'

বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ২০০৮ সালে অবসরপ্রাপ্ত মেজর আমিন আহমেদ চৌধুরিকে হারিয়েছেন। ২০১২ সালে আব্দুর রহিম শেষ মুহুর্তে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে বাদল রায়ও একই পরিস্থিতিতে ছিলেন। ২০১৬ সালে অবশ্য কামরুল আশরাফ পোটনকে হারিয়েই নির্বাচিত হয়েছিলেন সালাউদ্দিন। আব্দুর রহিম ও বাদল রায় চাপের কারণেই সরতে বাধ্য হয়েছিল বলে ধারণা ক্রীড়াঙ্গনে।

এই নিয়ে নির্বাচন কমিশনার বলেন, '২০১২ সালে মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর রহিম সাহেব সরে দাঁড়াতে চান। আমি তাকে বলেছি, এখন সময় শেষ। আমার কিছু করার নেই। ব্যালটে নাম থাকবে। নির্বাচন কমিশন শক্ত অবস্থানে থাকায় এজিএমে বিষয়টি উঠে এবং ফিফা প্রতিনিধি মনিলাল পরবর্তীতে তার ব্যালট সরিয়েছে। ২০২০ সালেও বাদল রায় নির্বাচন করতে চায়নি। সেটাও নির্ধারিত সময়ের পর। রহিম সাহেব ও বাদল রায় কেন নির্বাচন করতে চায়নি সেটার কারণ আপনার প্রশ্নের মধ্যেই রয়েছে।'

গত চার নির্বাচনে মেজবাহ উদ্দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন। চার বারই কাজী সালাউদ্দিন সভাপতি নির্বাচিত হন। এবার অবশ্য সালাউদ্দিন নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়েছেন। তাই নতুন সভাপতি পাবে ফুটবল ফেডারেশন। এজন্যই পঞ্চম মেয়াদে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব নিয়েছেন মেজবাহ উদ্দিন, 'আমি চার বার প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলাম। চার বারই একই সভাপতি। সালাউদ্দিন নেই আমিও নেই এই প্রশ্ন যেন না আসে এজন্য আবার দায়িত্ব নিয়েছি, এটাই আমার শেষ দায়িত্ব।'

২০২০ সালের নির্বাচনে কয়েক জন প্রার্থী ভোট গণনার ক্ষেত্রে অভিযোগ তুলেছিলেন। সেই প্রার্থীদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ট্রাম্পের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, 'আমরা একটি ব্যালট নেই। সবার সামনে দেখাই এরপর দুই-তিন পক্ষের প্রতিনিধি থাকে তাদের সামনে গণনা হয়। সবার সামনেই এটি হওয়ার পর প্রশ্ন উঠলে তারা তাহলে ডোনাল্ড ট্রাম্প।'

বাফুফে নির্বাচনে ভোট গণনা শেষ হতে হতে মধ্যরাত হয়। এজন্য ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেমের দাবিও উঠেছিল। এই প্রসঙ্গে মেজবাহ বলেন, 'একটি পদ্ধতির পরিবর্তন করতে হলে নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশন এটা করতে পারে না। ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ম্যানুপুলেশনের সুযোগ থাকে।'

২০২০ সালে বাফুফে নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী হয়েছিলেন শফিকুল ইসলাম মানিক। তিনি তৎকালীন নির্বাহী কমিটি ও কাউন্সিলর না হওয়ায় ভোট গণনার সময় থাকতে পারেননি। ভোট গণনাস্থলে কারা থাকতে পারবেন এ নিয়ে মেজবাহ বলেন, 'নির্বাহী কমিটি, নির্বাচন কমিশন, ডেলিগেটস (কাউন্সিলর), সিকিউরিটি। কোনো প্রার্থী নির্বাহী কমিটি এবং ডেলিগেটস না হলে উপস্থিত থাকার আবেদন করবে নির্বাচন কমিশনে তখন আমরা অনুমতি দেব।’

বাফুফে নির্বাচনে সভাপতি পদে ১ লাখ, সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে ৭৫ হাজার, সহ-সভাপতি পদে ৫০ ও সদস্য পদে ২৫ হাজার টাকা মনোনয়ন পত্রের মূল্য। ২০১৬ সালে নির্ধারিত এই দরেই ২০২৪ সালের নির্বাচনে থাকছে।

এজেড/এইচজেএস