নির্বাচন কমিশন গঠনের পর সাধারণত বাফুফে আর নির্বাহী সভা করে না। অলিখিত সেই রীতি এবার ভাঙতে হচ্ছে। আর্থিক কিছু বিষয়ের জন্য আরেকটি সভা করতেই হবে দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটিকে। গতকালের সভায় আর্থিক বিষয়াদি সঠিকভাবে উত্থাপন না হওয়ায় অনুমোদন হয়নি। এজন্য অন্যতম দায় প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) সরফরাজ আহমেদের। এজন্য কালকের সভায় তিনি বেশ জেরার মুখে পড়েন। 

আগামী ২৬ অক্টোবর বাফুফে নির্বাচন। নির্বাচনের দিন সকালে বার্ষিক সাধারণ সভা আয়োজন করেছে বাফুফে। সেই বার্ষিক সাধারণ সভায় পরবর্তী বছরের বাজেট পেশ করা হয়। সেই বাজেট পেশের আগে নির্বাহী সভায় অনুমোদন করিয়ে নিতে হয়। প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সরফরাজ বাফুফের ফিন্স্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান ইমরুল হাসানের কাছেই বাজেটের খসড়া আগে পাঠাননি। কালকের সভায় প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সময় স্বল্পতার অজুহাত দেখিয়েছেন। যদিও সেই অজুহাত প্রত্যাখান করেছেন সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার। প্রধান অর্থ কর্মকর্তাকে জেরা ও সমালোচনা করতেই গতকাল আধঘণ্টারও বেশি সময় পার হয়েছে।

বাফুফের সাবেক প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেন ফিফা থেকে নিষিদ্ধ। তিনি অবশ্য নিষিদ্ধ হওয়ার আগেই বাফুফে ত্যাগ করেন। আবু হাসানের স্থলাষিভিক্ত হন সরফরাজ। তার বিপক্ষে এখনও আর্থিক কোনো দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি। অনিয়মের অভিযোগ না উঠলেও আন্তরিকতা ও দক্ষতা অভাবের পাশাপাশি বাফুফের আর্থিক বিষয়াদির প্রক্রিয়া বেশ জটিল করায় বাফুফের নির্বাহী সদস্যগণই এতে খানিকটা বিরক্ত। আবার বাফুফের অন্য স্টাফরাও তার প্রতি ক্ষুব্ধ। তেমন অভিজ্ঞতা না থাকলেও তিন লাখ টাকা বেতনে বাফুফের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা হয়েছেন। এক বছর পার হওয়ার আগেই নিজের বেতন ঠিকই বাড়িয়েছেন, অথচ বাফুফের অন্য স্টাফরা বৈষম্যের স্বীকার হয়ে চিঠি দিলেও এর কোনো প্রতিকারই হয়নি।

গত বছর ১৪ এপ্রিল ফিফা বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে নিষিদ্ধ করে। তিনদিন পর বাফুফে জরুরি সভা করে সোহাগকে ভবিষ্যতে বাফুফের কোনো কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে। ফিফা ও বাফুফেতে নিষিদ্ধ সোহাগ অবশ্য তার পাওনাদি চেয়ে বাফুফেকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন। পেরিয়ে গেছে সেই উকিল নোটিশের জবাব দেওয়ার সময়ও। এ বিষয়ে বাফুফের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার বলেন, ‘তার বিষয়টি কাল উঠেছিল, আমাদের সামনে আরেকটি সভা রয়েছে শুধুই আর্থিক বিষয় নিয়ে। তখন এই বিষয়ে বোর্ড সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।’

সোহাগের পাশাপাশি ফিফা থেকে নিষিদ্ধ হওয়া বাফুফের সাবেক তিন স্টাফ আবু হোসেন, মিজানুর রহমান এবং অনুপম হোসেনও বাফুফের কাছে তাদের পাওনা চেয়েছে। সোহাগ ও অন্যরা বাফুফেতে অনেকদিন কাজ করেছেন। গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড এই সংক্রান্ত তাদের পাওনা অর্থ পাওনার দাবি করেছেন। সোহাগ উকিল নোটিশে বাফুফের কাছে কোটি টাকা দাবি করেছেন।

ফিফা থেকে নিষিদ্ধ বাফুফের চার স্টাফই আর্থিক বিষয়াদির জন্য দণ্ডপ্রাপ্ত। ফুটবল তো বটেই, বৈশ্বিক পর্যায়ে বাংলাদেশের মানহানি হয়েছে এই ঘটনায়। এ নিয়ে বাফুফে আইনত কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি। বাফুফের নির্বাহী কমিটির এই নীরবতায় শাস্তিপ্রাপ্তরা উল্টো তাদের পাওনা আদায়ে সোচ্চার। ফিফা থেকে নিষিদ্ধ হলেও বাফুফের কাছে তাদের পাওনা দাবি করা আইনত বৈধ।

এজেড/এএইচএস