২৬ অক্টোবর বাফুফে নির্বাচন। বাফুফের আজকের (বৃহস্পতিবার) নির্বাহী সভা ছিল মূলত নির্বাচন সংক্রান্ত। বাফুফে ভবনে অনুষ্ঠিত এই সভায় কাজী সালাউদ্দিন সভাপতিত্ব করেছেন। আগেই পদত্যাগ করেছেন সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী। চার সহ-সভাপতির মধ্যে শুধু ইমরুল হাসান অনলাইনে যুক্ত ছিলেন। বাকি তিনজন অনলাইনেও ছিলেন না। ভবনে সশরীরে কয়েকজন নির্বাহী সদস্য ছিলেন। 

বাফুফে ভবনে উপস্থিত সদস্যদের মধ্যে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক সত্যজিৎ দাশ রুপুই ছিলেন সবচেয়ে ছিলেন। তাই আজ সভা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন তিনিই করেছেন। সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনে ১৩৩ জন ভোটিং ও ৯ জন নন-ভোটিং কাউন্সিলর অনুমোদন হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি নির্বাচন আপিল কমিশনও গঠিত হয়েছে।’

বাফুফে নির্বাচনে টানা চারবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ছিলেন মেজবাহ উদ্দিন। সাবেক ফুটবলার ও সংগঠকদের একাংশ এবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পরিবর্তনের দাবি তুলেছিলেন। বাফুফের নির্বাহী কমিটি অবশ্য মেজবাহ উদ্দিনের প্রতিই আস্থা রেখেছেন। এর কারণ সম্পর্কে রুপু বলেন, ‘তিনি বিগত নির্বাচনগুলো বেশ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করেছেন। এজন্য বোর্ড তাকে পুনরায় দায়িত্ব দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।’ মেজবাহ উদ্দিন ছাড়া বিকল্প কোনো নাম আলোচনা হয়েছিল কি না এই প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে রুপু বলেন, ‘যেহেতু তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন, ফলে এখানে আর অন্য নাম বলার কিছু নেই।’

নির্বাচন কমিশন আজ আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেলেও বাফুফের শীর্ষ কর্মকর্তারা এ নিয়ে কাজ করছিলেন কয়েক মাস আগে থেকেই। মেজবাহ উদ্দিন টানা চারবার দায়িত্ব পালন করেছেন। একই ব্যক্তি বারবার নির্বাচন কমিশনার দায়িত্ব পালনে ফিফা-এএফসির কোনো নির্দেশনা আছে কি না বিষয়টি জানার অনুরোধ জানান মেজবাহ। বাফুফে আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে কোনো অসঙ্গতি পায়নি। তাই দুই পক্ষই দায়িত্ব পালন ও ন্যস্তে সম্মত হয়। 

বাফুফে নির্বাচনে এবার প্রথমে ১৩৯ জন সংগঠন/সংস্থাকে কাউন্সিলর মনোনয়নের জন্য নির্বাচিত করেছিল বাফুফে। যশোর ও সাতক্ষীরা আইনি কারণে কাউন্সিলরশিপ মনোনয়ন ফরম পায়নি। অভিযোগের কারণে আরও চারটি জেলা বাদ পড়েছে। আজ ১৩৩ কাউন্সিলর চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার পর রুপু বলেন, ‘আজকের সভায় ১৩৩ কাউন্সিলর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। তারা সভা করে নির্বাচন সংক্রান্ত পরবর্তী কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।’  

ফিফার গোল প্রজেক্টের আওতায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন মতিঝিল-আরামবাগে ভবন নির্মাণ করেছে। প্রায় দেড়যুগ পর বাফুফে সেই ভবনের সংস্কার করবে। বাফুফে ভবন সংস্কার খাতে ২ কোটি টাকা প্রদান করবে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি)। বাফুফে ভবন সংস্কার প্রসঙ্গে রুপু বলেন, ‘এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের একটা বাজেটের মাধ্যমে আমাদের ভবনের সংস্কার কার্যক্রম হবে। সংস্কারের পাশাপাশি সুন্দর মিডিয়া সেন্টারও নির্মাণ হবে। যা আপনাদের অনেক দিনের দাবি ছিল।’ বাফুফে ভবনে সংস্কার নিয়ে আরও বিস্তারিত বলেছেন সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার,‌ ‘বিদ্যমান ভবনেই অনেক কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন। আমরা সেগুলোকেই প্রাধান্য দিয়ে সংস্কার করব। পাশাপাশি মিডিয়া সেন্টারও নির্মাণ করা হবে।’

বাফুফে ভবন চার তলা। নিচতলায় অভ্যর্থনা কক্ষ ও স্টোর রুম। দ্বিতীয় তলায় প্রশাসনিক কার্যক্রম ও সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি, চার সহ-সভাপতির কক্ষ। তৃতীয় তলায় সম্মেলন কক্ষের পাশাপাশি কোচ, রেফারিজ ও টেকনিক্যাল বিভাগের কক্ষ রয়েছে। চতুর্থ তলায় নারী ফুটবলারদের ক্যাম্প। 

মিডিয়া সেন্টার ও বাফুফে ভবন সংস্কার খাতে এএফসির বরাদ্দ আগেই ছিল। তবে বিষয়টি আটকে ছিল বাফুফে ভবনের কাগজপত্রের কিছু জটিলতার জন্য। সেই জটিলতা কেটে যাওয়ায় বাফুফে এখন সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছে। বাফুফের বর্তমান কমিটির মেয়াদ আছে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত। এই সিদ্ধান্ত নতুন নির্বাচিত কমিটি আমলে নিয়ে কতটুকু বাস্তবায়ন করে সেটাই দেখার বিষয়। 

নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয় ছাড়াও নারী সাফ ও নভেম্বর ফিফা উইন্ডো নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এই বিষয়ে রুপু বলেন, ‘নির্বাচন থাকলেও ফুটবলের কর্মকাণ্ড যেন চলমান থাকে এজন্য আমরা সাফ ও নভেম্বর উইন্ডোতে খেলার ব্যাপারে অনুমোদন দিয়েছি। যাতে পরবর্তী কমিটির কাজ সহজ হয়।’

আজই বাফুফের শেষ নির্বাহী কমিটির সভা হওয়ার কথা ছিল। ২৬ অক্টোবর বাফুফে সাধারণ সভায় বাজেট উত্থাপন করতে হবে। সেই বাজেটের কিছু বিষয়ে বোর্ডে অনুমোদন না হওয়ায় আরেকটি সভা হবে। সেই সভা শেষে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনই ব্রিফ করবেন বলে জানান রুপু, ‘আজই আমাদের শেষ সভা হওয়ার কথা ছিল। আর্থিক বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ থাকায় ফিন্যান্স কমিটিকে কয়েকদিন সময় দিয়ে পুনরায় বোর্ডে উত্থাপনের জন্য বলা হয়েছে। সেই সভাটি হবে মূলত আর্থিক বাজেট অনুমোদনের। সেটা জরুরি সভাও হতে পারে। সেই সভায় সভাপতি আপনাদের ব্রিফ করবেন। আজকের সভার শুরুতেও তিনি ১৬ বছর ফুটবল নিয়ে তার সময়ের কথা বলছিলেন। পরবর্তীতে সভার আলোচ্যসূচির জন্য অন্য বিষয়ে আলাপ হয়।’

এজেড/এএইচএস