চোখের পলকেই কেটে যায় সময়। ২০২২ সালের মার্চে মালেতে বাংলাদেশ-মালদ্বীপ ম্যাচ দিয়ে যাত্রা শুরু স্পেনিশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার। এই আড়াই বছরে বাংলাদেশ তার অধীনে ২৭টি ম্যাচ খেলেছে। সাত জয়ের বিপরীতে হার দ্বিগুণ ১৪ আর ড্র ছয়টি।

২০২২ সালে বাংলাদেশ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার অধীনে আট ম্যাচ খেলে। পাঁচ হারের বিপরীতে জয় মাত্র একটি ও ড্র দু’টি। সেপ্টেম্বরে শুধুমাত্র কম্বোডিয়ার বিপক্ষে জিতে। সেই জয়কে পুঁজি ও ২০২৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ থাকায় বাফুফে ক্যাবরেরার চুক্তি নবায়ন করে।

২০২৩ সালে অবশ্য ক্যাবরেরার অধীনে বাংলাদেশ ভালো ফুটবলই খেলেছে। বিশেষ করে ১৫ বছর পর সাফের সেমিফাইনালে উঠেছে তার কোচিংয়েই। সাফে সেমিফাইনালে উঠার পর বিশ্বকাপ বাছাইয়ে হোম ম্যাচে লেবাননের বিপক্ষে এক পয়েন্ট পায় বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের পারফরম্যান্সে হ্যাভিয়ের পারিশ্রমিক বেশ বেশি দাবি করে। বাফুফে হ্যাভিয়েরের পারিশ্রমিক বাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত রাখতে বাধ্য হয়।

২০২৪ সালে ভালো অঙ্কের পারিশ্রমিক পেলেও মাঠের পারফরম্যান্স অবশ্য ভালো হয়নি। এখন পর্যন্ত ছয় ম্যাচের মধ্যে হারই পাঁচটি, জয় মাত্র একটি। বিশেষ করে ভুটানের বিপক্ষে পুনরায় হেরে আবার আলোচনায় কোচ ও ফুটবলারদের পারফরম্যান্স। ভুটানে দুই ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ অত্যন্ত বাজে ফুটবল খেলেছে। জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার ও কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক খেলোয়াড় ও কোচ উভয়কে কাঠগড়ায় দাড় করালেন, 'বাস্তবিক অর্থে খেলোয়াড়দের সামর্থ্যরে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। একটা পর্যায়ের বেশি তারা দিতে পারেন না। পাশাপাশি কৌশল, পরিকল্পনাতে কোচেরও ঘাটতি আছে।'

২০২৪ সালে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ যৌথ বাছাইয়ের চার ম্যাচই হেরেছে বাংলাদেশ। চার ম্যাচে ১২ গোলের বিপরীতে একটি গোলও করতে পারেনি হ্যাভিয়েরের শিষ্যরা। হোম ম্যাচে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ড্রয়ের সুযোগ ছিল। গোলরক্ষক মিতুল মারমা আহত হওয়ার পর অভিজ্ঞ জিকোকে না নামিয়ে অনভিজ্ঞ শ্রাবণকে নামান। সেই শ্রাবণের ভুলে বাংলাদেশ শেষ মুহুর্তে গোল হজম করে ম্যাচ হারে। ম্যাচে ফুটবলার বদলের পাশাপাশি, প্রাথমিক স্কোয়াড নিয়েও প্রশ্ন থাকে অধিকাংশ সময়। লিগে ভালো পারফরম্যান্স করাদের বদলে বেঞ্চে থাকা খেলোয়াড় ডাকার অভিযোগ বেশ পুরনোই। বসুন্ধরা কিংসের সাবেক স্পেনিশ কোচ অস্কার ব্রুজন দ্বারা হ্যাভিয়ের প্রভাবিত এমন জোর গুঞ্জন ছিল ফুটবলাঙ্গনে।

স্পেনিশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার ২০২২ সালের আগে জাতীয় দল তো দূরের কথা, কোনো দেশের শীর্ষ লিগের কোচিংয়ের অভিজ্ঞতাও ছিল না। তাকে নিয়োগ দেয়ার পক্ষে ছিল না জাতীয় দল কমিটি। বাফুফের তৎকালীন ট্যাকনিক্যাল ডাইরেক্টর পল স্মলি এবং বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের প্রভাবেই মূলত ক্যাবরেরার নিয়োগ। একাডেমীতে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন কোচ বাংলাদেশ জাতীয় দলে উচ্চ মূল্যে কোচিং করাচ্ছেন। সাফের সেমিফাইনালে খেলা ছাড়া ক্যাবরেরার মাধ্যমে বাংলাদেশের ফুটবলে তেমন কোনো প্রাপ্তি নেই।

বিদেশি কোচদের পেছনে বাফুফের এত অর্থ ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন আছে খোদ বাফুফের নির্বাহী কমিটির মধ্যেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাহী কমিটির এক সদস্য বলেন, 'সত্যিকার অর্থে বিদেশি কোচ বাংলাদেশের ফুটবলকে খুব বদলে ফেলতে পারছে না এমনকি পারবেও না। বেশি দামে বিদেশি কোচ না রেখে দেশীয় কাউকে দায়িত্ব দেয়াই শ্রেয়।' বাফুফে নির্বাহী কমিটির সদস্যরা বিদেশি কোচ ও ফেডারেশনের নীতি-নির্ধারণী বিষয়ের সমালোচনা গোপনে করলেও আনুষ্ঠানিক সভায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে চুপই থাকে।

বছর ভিত্তিক

সাল       জয়   হার    ড্র

২০২৪    ১       ৫      ০

২০২৩    ৫     ৪       ৪

২০২২    ১      ৫      ২

মোট     ৭    ১৪       ৬

হ্যাভিয়েরের অধীনে বাংলাদেশ

জয় - ভুটান, কম্বোডিয়া, সিলেশলস ও মালদ্বীপের বিপক্ষে দু’টি।  
ড্র - লেবানন, মালদ্বীপ, মঙ্গোলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে দু’টি।
হার - সিশেলস, ভুটান, কুয়েত, মালদ্বীপ, বাহরাইন, তুর্কমেনিস্তান, মালয়েশিয়া, নেপালের বিপক্ষে একটি করে এবং  অস্ট্রেলিয়া, ফিলিস্তিন ও লেবাননের বিপক্ষে দু’টি করে।

এজেড/এইচজেএস