ফিফার সভাপতি তিন মেয়াদ, সালাউদ্দিন চার!
বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। ফিফা কাউন্সিলে তিন বারের বেশি নির্বাচনের করার সুযোগ নেই। অথচ ফিফার সদস্য ভুক্ত হয়েও বাফুফেতে রয়েছে বার বার নির্বাচনের সুযোগ।
ফিফার গঠনতন্ত্রের বি অধ্যায়ে কাউন্সিল (নির্বাহী কমিটি) সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। ৩২ ধারার ২ উপধারায় সভাপতি ও ৩ উপধারায় কাউন্সিল সদস্য-সভাপতির সম্পর্কে বিবরণ রয়েছে। দুই ক্ষেত্রেই স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। তিন বারের বেশি কেউ পদে থাকতে পারবেন না। সেই তিন বার ধারাবাহিক হতে পারে আবার বিরতি দিয়ে হলেও কোনো মতেই তিন বারের বেশি নয়।
বিজ্ঞাপন
সভাপতি পদে অবশ্য এক লাইন ব্র্যাকেটের মাধ্যমে খানিকটা শুভঙ্করের ফাকি রয়েছে। কেউ যদি এক টার্ম বা দুই টার্ম সদস্য, সহ-সভাপতি থাকার পর সভাপতি নির্বাচিত হয়। সেক্ষেত্রে তার সভাপতির ক্ষেত্রে বিগত টার্মগুলো গণ্য হবে না। সভাপতি হিসেবে প্রথম টার্ম ধরেই চলবে।
সারা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ সংগঠন হিসেবে ফিফার সুনাম ছিল। সেই সুনাম থাকলেও ফিফাও ছিল একনায়কতন্ত্রের আখড়া। ব্রাজিলের হোয়াও হ্যাভেল্যাঞ্জ ও সুইস সেপ ব্লাটার মিলে ৪০ বছরের বেশি ফিফার সভাপতিত্ব করেছেন। প্রায় দেড় যুগ ফিফা সভাপতিত্ব করা ব্ল্যাটার অনিয়ম-দুর্নীতিতে অপসারণ হন। ব্ল্যাটার অপসারণের পরই ফিফা কিছুটা সংস্কারের মধ্যে দিয়ে যায়। তখনই সভাপতি ও কমিটি সদস্যদের তিন বারের একটি সীমারেখা আনা হয়।
আরও পড়ুন
২০১৬ সাল পরবর্তী সময়ে ফিফা এই সংশোধনী আনে। বর্তমান গঠনতন্ত্র সেই অনুযায়ী চলছে। ফিফা নিজেদের গঠনতন্ত্রে এটি রাখলেও তার অধীভুক্ত কনফেডারেশন, ফেডারেশনগুলোতে অবশ্য সেই চর্চার তদারকি করছে না। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনে সভাপতি ও অন্যান্য পদধারীদের পুনরায় নির্বাচনের অধিকার রয়েছে। সেটা কতবার এটা নিয়ে সুনির্দিষ্ট উল্লেখ নেই।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে কাজী সালাউদ্দিন ২০০৮ সাল থেকে বাফুফে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। টানা চার মেয়াদের পর আরেক মেয়াদে বাফুফে সভাপতি পদে দাঁড়ানোর অভিপ্রায় রয়েছে তার। শুধু সালাউদ্দিনই নন, বাফুফের ততোধিক ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন যারা বেশ কয়েক মেয়াদ ধরেই কমিটিতে রয়েছেন। সদ্য পদত্যাগ করা আব্দুস সালাম মুর্শেদী ২০০৮ সাল থেকে টানা চার বার সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে ছিলেন। কাজী নাবিল আহমেদও সহ-সভাপতি পদে চার বার। সদস্য পদে সত্যজিৎ দাশ রুপুও চার বার। তিন মেয়াদে সদস্য হিসেবে আছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ইলিয়াস হোসেন।
বাফুফে কর্মকর্তারা ক্লাব ও তাদের অধীনস্থ সংস্থাকে প্রায়ই ফিফার বুলি আওড়ান। অথচ ফিফায় একনায়কতন্ত্র রুখতে ও নতুন নেতৃত্ব তৈরি করতে তিন মেয়াদের বেশি পদে না থাকার বিধান রয়েছে। সেই বিধান প্রতিপালনের দিকে দৃষ্টিপাত নেই বাফুফের।
বাফুফের বর্তমান গঠনতন্ত্র ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে তৈরি। সেই গঠনতন্ত্র অনেকটা এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন করেই করেছে। ফিফার গঠনতন্ত্রে নির্বাচনের সময় বয়সের কোনো বাধাধরা নিয়ম না থাকলেও এএফসিতে আছে। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনে নির্বাচনের সময় সভাপতি বা অন্য পদে কোনো প্রার্থীর বয়স ৭০ এর নিচে থাকতে হবে। বাফুফেতে সেটা দুই বছর বাড়িয়ে ৭২ পর্যন্ত রয়েছে।
৭২ বছর বয়সসীমার জন্য ২০১২ সালে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু প্রার্থীতা থেকে সরে যান। গত নির্বাচনে বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহীম প্রার্থী হননি। বর্ষীয়ান ক্রীড়া সংগঠক হারুনুর রশীদের এটাই বাফুফের নির্বাহী কমিটিতে শেষ মেয়াদ বয়সসীমার জন্য।
টানা মেয়াদে বাফুফের চেয়ারে থাকার অভিপ্রায়ের পাশাপাশি সভাপতির বয়স নিয়েও ক্রীড়াঙ্গনে আলোচনা চলছে। ক্রীড়াঙ্গনের অনেকেরই জানা ১৯৫৩ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর জন্ম কাজী সালাউদ্দিনের। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৫৪ জন্মসাল হিসেবে ব্যবহার করছেন সালাউদ্দিন। সেই মোতাবেক আর সপ্তাহ দুই পর তিনি ৭০ পেরিয়ে ৭১ এ পা দেবেন। কাগজে-কলমে বয়স ৭২ এর নিচে থাকলেও ফুটবলাঙ্গনের অনেকের ধারণা তার প্রকৃত বয়স আরো বেশি। যদিও এর পেছনে কোনো দলিল বা প্রমাণ নেই শুধুই অনুমান নির্ভরতা।
এজেড/জেএ