ভুটানের থিম্পুতে গতকাল (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ ও ভুটান ম্যাচ ছিল একেবারে ম্যাড়ম্যাড়ে। অগোছালো ও নির্বিষ ফুটবলে দুই দলের খেলায় তেমন আকর্ষণই ছিল না। তবে খেলা ছাপিয়ে প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ের দুটি ঘটনা বড় হয়ে উঠেছে।

নির্ধারিত ৪৫ মিনিট শেষে চতুর্থ রেফারি তিন মিনিট ইনজুরি সময় দেন। সেই তিন মিনিটের শুরুতেই বাংলাদেশ ভুটানের অর্ধে আক্রমণে উঠেছিল। ওই আক্রমণের সময় বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেন ব্যাথা পান। রাকিবের পায়ে ভুটানি ডিফেন্ডার আঘাত করলেও রেফারির দৃষ্টি এড়িয়ে যায়।

ওই সময় রাকিব পায়ের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পর রাকিব উঠে দাঁড়ালেও খেলার পরিস্থিতিতে ছিলেন না। ইনজুরি সময় আর মিনিট দেড়েক থাকায় পরিবর্তনে অনাগ্রহী ছিলেন কোচও। পুনরায় খেলা শুরু হলে রাকিব আর দাঁড়াতেই পারেননি, হঠাৎ পড়ে যান। পরে রেফারির দৃষ্টি আকর্ষণ হলে খেলা স্থগিত করেন।

রাকিবের শুশ্রুষা করতে দৌড়ে যান বাংলাদেশের ফিজিও আবু সুফিয়ান সরকার। দাঁড়ানোর মতো পরিস্থিতি না হওয়ায় রেফারি স্ট্রেচার ডাকেন। তিন-চার জন যুবক স্ট্রেচার নিয়ে দৌড়ে মাঠে প্রবেশ করেন। এর মধ্যে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে শুয়ে পড়েন তাদের একজন। রাকিবকে চিকিৎসা দেওয়া অবস্থায় সুফিয়ানের চোখে পড়ে বিষয়টি।

বাংলাদেশের ফিজিও সুফিয়ান দেখেন ভুটানি স্ট্রেচার বয়ের শ্বাসপ্রশ্বাস কাজ করছে না। এরপর তাৎক্ষণিক সিপিআর (চাপ প্রয়োগ করে হৃদযন্ত্র স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা) করতে থাকেন। কিছুক্ষণের মধ্যে এসে একই কাজ করেন ভুটানের ফিজিও। বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টার পর শ্বাস প্রশ্বাস ফিরে আসায় অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেওয়া হয় স্ট্রেচার-বয়কে।

গতকালের ঘটনা ও আজ স্ট্রেচার বয়ের সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে আবু সুফিয়ান থিম্পু থেকে বলেন, ‘তিনি মৃগী রোগে আক্রান্ত। এর আগেও একবার জ্ঞান হারানোর ঘটনা ঘটেছিল বলে শুনেছি। এই রোগে সাধারণত জ্ঞান খুব দ্রুত ফিরে আসে। গতকাল কিছুক্ষণ দেরি হওয়ায় উদ্বিগ্ন ছিলাম। আমি ও ভুটানের ফিজিও সিপিআর করছিলাম। একবার শ্বাস আসলেও পরক্ষণে আবার অবস্থা অবনতি হওয়ায় আরও শঙ্কিত হই। কারণ মস্তিষ্কে অক্সিজেন বেশিক্ষণ না পৌঁছালে বড় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। পরবর্তীতে অবশ্য একটু উন্নতি হওয়ায় উঠানো হয় অ্যাম্বুলেন্সে। আজও তার খোঁজ রাখছি। ভুটানী ফিজিও বন্ধুর মাধ্যমে জেনেছি এখন অনেকটা স্বাভাবিক।’

আবু সুফিয়ান সরকার মূলত বসুন্ধরা কিংসের ফিজিও। ফুটবলের মতো বডি কন্ট্যাক্ট খেলায় ফিজিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্লাবেই ফিজিও নেই। শুধু ফুটবল নয় গোটা ক্রীড়াঙ্গনেরই দক্ষ ফিজিওর সংখ্যা খুবই কম। সুফিয়ান ফুটবলাঙ্গনে এখন প্রতিষ্ঠিত ফিজিও। ক্লাবের গণ্ডি পেরিয়ে এখন জাতীয় দলে কাজ করছেন।

কালকের এই ঘটনা বাংলাদেশের জন্য শিক্ষণীয়। ফুটবলে সাম্প্রতিক সময়ে হৃদরোগে আক্রান্তের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। এই বিষয়ে সুফিয়ানের পরামর্শ, ‘এএফসি-ফিফা আন্তর্জাতিক বা ঘরোয়া ম্যাচ আয়োজনের ক্ষেত্রেও মেডিক্যাল সংক্রান্ত গাইডলাইন দেয়। সেই গাইডলাইনে প্রয়োজনীয় সকল উপাদানের কথাই আছে। বাফুফে সেটা অনুসরণ করলে বাংলাদেশের ফুটবলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো যাবে।’

এজেড/এএইচএস