৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে বাফুফের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনেকেই কার্যালয়ে আসেন না। আজ (শনিবার) বাফুফে একটি জরুরি নির্বাহী সভা করেছে অনলাইনে। সেই অনলাইন সভায় চার সহ-সভাপতির মধ্যে শুধু ইমরুল হাসানই অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৪ নির্বাহী সদস্যের মধ্যে অর্ধেক উপস্থিত ছিলেন।

বাফুফের চেকে স্বাক্ষরদাতার বিষয়ে জরুরি সভা হলেও আসন্ন নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আজ সকালে বাফুফে ভবনে বিএনপিপন্থী ক্রীড়াবিদ-সংগঠকরা বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের পদত্যাগ এবং ফেডারেশনের নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষারের কাছে। তিনি বিকেলে অনুষ্ঠিত নির্বাহী সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। 

সরকার পতন, পদত্যাগ আন্দোলনসহ সব মিলিয়ে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বেশ চাপেই রয়েছেন। আজকের অনলাইন সভায় বাফুফের এক নির্বাহী সদস্য যিনি জাতীয়বাদী দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, তিনি সালাউদ্দিনকে অভয় দিয়েছেন বলে সভা সূত্রে জানা গেছে। তার সেই অভয়কে বেশ সমর্থন দিয়েছেন সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠজন। 

সভা সূত্রের খবর– সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন পেছানোর দাবি উত্থাপন করলে সালাউদ্দিন নির্বাহী সভায় মতামত চান। তখন ২৬ অক্টোবরই নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দিয়ে দুয়েকজন সালাউদ্দিন বিরোধীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসার কথা বলেন। ২৬ অক্টোবর বাফুফের নির্ধারিত নির্বাচনের দিন বসুন্ধরা কিংসের এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের ম্যাচ পড়েছে। তাই মৃদুভাবে নির্বাচন এগিয়ে আনারও আলোচনা হয়। দুয়েকজন সদস্য নির্বাচন এগিয়ে আনার বিষয়টি জোর দিলেও শেষ পর্যন্ত অবশ্য আর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি।

বাফুফের চেকে স্বাক্ষর দেওয়ার এখতিয়ার সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদের। আব্দুস সালাম মুর্শেদী পদত্যাগ করেছেন আর কাজী নাবিল অনেকটাই নিখোঁজ। চেক লেনদেনের জন্য তিনজনের মধ্যে দুইজনের স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক। এই সংকট নিরসনেই মূলত আজকের সভা।

বাফুফে সহ-সভাপতি ইমরুল হাসানকে ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। ইমরুল হাসানের পাশাপাশি সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষারেরও স্বাক্ষর প্রদানের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে আজকের সভায়। বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগের এই এখতিয়ার ছিল না। এখন থেকে ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে ইমরুল হাসানের স্বাক্ষর চেকে থাকা বাধ্যতামূলক। সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, সহ-সভাপতি নাবিল ও সাধারণ সম্পাদক ইমরানের মধ্যে যেকেনো একজনের স্বাক্ষরে লেনদেন করতে পারবে বাফুফে। 

জরুরি সভায় সাধারণত একটিই আলোচ্যসূচি থাকে। এরপরও বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ফেডারেশনের স্টাফদের বেতনের বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন। নতুন ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান ও সহ-সভাপতি ইমরুল হাসান অধিকতর মূল্যায়নের জন্য পরবর্তী সভায় রেফার করার মত দেন।

অনলাইন সভা অবশ্য ২০-২৫ মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি ইমরুল হাসান, নির্বাহী সদস্যদের মধ্যে জাকির হোসেন চৌধুরি, সত্যজিৎ দাশ রুপু, ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ, হাজী টিপু সুলতান, মাহফুজা আক্তার কিরণ, আমের খান ‍ও মহিদুর রহমান মিরাজ। জরুরি সভা হওয়ায় অবশ্য কোরামের বিষয় ছিল না। 

পট পরিবর্তনের পর থেকে বাফুফে সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ ও মহিউদ্দিন আহমেদ মহী অনেকটা আত্মগোপনে। আরেক সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক বিদেশে। নির্বাহী সদস্যদের মধ্যে অনেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় নিভৃতে রয়েছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাদের অনেকেরই ফেডারেশনে সশরীরে এসে কাজ করা কঠিন, এরপরও পদ আকড়ে আছেন। একমাত্র সাবেক ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদী পট পরিবর্তনের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করেছেন। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনও ৫ আগস্টের পর থেকে ফেডারেশনে আসছেন না। আজকের জরুরি সভা অনলাইন করতে বাধ্য হয়েছেন। 

এজেড/এএইচএস