গত এক যুগেরও বেশি সময় ক্রীড়াঙ্গনে বিএনপিপন্থী ক্রীড়া সংগঠকরা কোণঠাসা ছিলেন। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরদিনই তারা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) গিয়েছিলেন। এর একদিন পর সামগ্রিক ক্রীড়াঙ্গনে পরিবর্তন ও সংস্কারের দাবি জানিয়েছিলেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সামনে। আজ (শনিবার) সকালে দেশের অন্যতম বড় সংস্থা ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সামনে মানববন্ধন করেছেন জাতীয়তাবাদী ক্রীড়া সংগঠকরা।

এই মানববন্ধনে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ এবং পদত্যাগ না করলে ক্রীড়াঙ্গনে অবাঞ্ছিত করার ঘোষণার পাশাপাশি লাঞ্ছিত করার কথাও বলা হয়। এই দাবির পাশাপাশি বাফুফের আসন্ন নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক।

বাফুফের নির্বাচিত কমিটির চার বছর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর। ইতোমধ্যে বাফুফে ফিফার কাছে সময় চেয়ে ২৬ অক্টোবর নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করেছিল। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিএনপির ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল নির্বাচন পেছানোর দাবি জানিয়ে বলেন, ‘বন্যা ও সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচন পেছানোর জন্য ফিফার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছি।’

নির্বাচন পেছালে এবং কাজী সালাউদ্দিন পদত্যাগ না করলে বিষয়টি বিলম্বিত হবে। সালাউদ্দিনকে পদত্যাগ করেই নির্বাচন আয়োজনের দাবি স্পষ্ট করে আমিনুল বলেন, ‘দেশের জনপ্রিয় খেলা ফুটবলে দুর্নীতি হয়েছে। তার সভাপতি থাকার নৈতিক কোনো অধিকার নাই। বিবেকবোধ থাকলে তিনি পদত্যাগ করবেন। আমরা তার অধীনে ফুটবল ফেডারেশনে কোনো নির্বাচন চাই না। এই ব্যাপারটি একেবারে স্পষ্ট।’

ফুটবল ফেডারেশন ফিফার নির্দেশনায় পরিচালিত হয়। সরকার অথবা তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ফুটবল ফেডারেশনকে ফিফায় নিষিদ্ধ করতে পারে। ২০০১ সালে এমন তিক্ত ঘটনা ঘটেছিল বাংলাদেশে। আমিনুল ফিফার বিষয়টিও ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘কাজী সালাউদ্দিন পদত্যাগ করলে আমরা উপদেষ্টা ও সবাই মিলে ফেডারেশন কীভাবে চলবে সেটা ফিফার নির্দেশনা মেনেই করব। অনিয়মতান্ত্রিক ও ফিফার নির্দেশনার বাইরে কিছু করা হবে না।’

বাংলাদেশের অন্যতম কিংবদন্তি ফুটবলার আমিনুল হক প্রায় এক যুগ পর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে এসেছেন। এতদিন পর নিজ আঙিনায় এসে বলেন, ‘দেশের অন্য ক্ষেত্রের মতো ফুটবলেও দুর্নীতি হয়েছে। স্বৈরাচার সরকারের কারণে সালাউদ্দিন সেই সমর্থন পেয়েছেন। এখন আর সালাউদ্দিন পার পাবেন না।’

বাফুফে ভবনের সামনে মানববন্ধনে ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ও বিএনপির অন্যতম শীর্ষ নেতা আব্দুস সালাম গত এক যুগে ক্রীড়াঙ্গনে দলীয়করণের অভিযোগ আনেন। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা যখন ক্রীড়াঙ্গনে ছিলাম কোনো দলীয়করণ করিনি। হারুনুর রশীদ আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন, আমরা এরপরও তাকে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রেখেছিলাম। কিন্তু তারা ক্রীড়াঙ্গনকে সম্পূর্ণ দলীয়করণ করেছে।’

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক জাতীয় তারকা ফুটবলার সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালী সাব্বির, ছাইদ হাসান কানন, ডাকসুর সাবেক নেতা খায়রুল কবির খোকনসহ অনেকে। এই মানববন্ধনে জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার ও কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক, কায়সার হামিদসহ আরও অনেকে এসেছিলেন। 

মানববন্ধন শেষে আমিনুল, আব্দুস সালাম, সাবেক কয়েকজন ফুটবলার বাফুফে সাধারন সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন, সেখানে তারা কয়েক মিনিট আলোচনা করে তাদের দাবি পেশ করেন। বাফুফে সাধারণ সম্পাদক তুষার গণমাধ্যমে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন, তিনি দাবি ও প্রস্তাবগুলো বাফুফে সভাপতি ও নির্বাহী কমিটিকে অবহিত করবেন। সভাপতি ও নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন পরবর্তীতে। 

বিএনপিপন্থী সাবেক ক্রীড়াবিদ ও সংগঠকদের মানববন্ধনের পরপরই ফুটবল সমর্থকরা সালাউদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের কেউ ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে ভবনের সামনে আবার কেউ ভবনের ভেতর অবস্থান নেন। বাফুফে ভবন প্রাঙ্গনে প্রায় শতাধিক ব্যক্তির সমাগম হলেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। 

এজেড/এএইচএস