নারী ফুটবলে গত দেড় যুগের মহাতারকা ব্রাজিলের মার্তা ভিয়েরা দ্য সিলভা। পাঁচবারের (৬) বেশি ফিফার সেরা নারী বর্ষসেরা খেলোয়াড় হয়েছেন। এ ছাড়া তার মতো পাঁচটি বিশ্বকাপে গোল করার কীর্তি নেই আর কারও (পুরুষ ফুটবলেও)। কিন্তু একটি বিশ্বকাপ কিংবা অলিম্পিকে কোনো স্বর্ণ না জেতা নিয়ে তার আক্ষেপ ছিল। সেই অপূর্ণতা নিয়েই ফুটবল ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন মেয়েদের ফুটবলের এই ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি।

গতকাল (শনিবার) রাতে পার্ক দ্য প্রিন্সেসে অলিম্পিক ফুটবলের স্বর্ণ জেতার লক্ষ্যে ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্রের মেয়েরা। পুরো ম্যাচজুড়ে সেলেসাও মেয়েরা আধিপত্য দেখালেও, তারা গোল আদায় করতে ব্যর্থ হয়। ৬০ শতাংশ বল দখলের পাশাপাশি শট নেওয়ার দিক থেকেও তারাই অনেকটা এগিয়ে। কিন্তু দিনের শেষ হাসিটা জুটল আমেরিকান মেয়েদের মুখে। তারা ১-০ গোলের জয়ে প্যারিস অলিম্পিক স্বর্ণ গলায় পরেছে।

বয়স দাঁড়িয়েছে ৩৮ বছরে, অন্যদিকে সর্বশেষ বিশ্বকাপের পর নিকট ভবিষ্যতে মেয়েদের ফুটবলে আর বড় কোনো টুর্নামেন্ট নেই। তাই তো এ বছরই আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায়ের কথা জানিয়েছিলেন মার্তা। যার ক্যারিয়ার ব্যক্তিগত সাফল্য ও রেকর্ডে টইটম্বুর। কিন্তু দলীয় অর্জনে প্রাপ্তি একবার বিশ্বকাপে রানার্সআপ আর অলিম্পিকসে তিনটি রুপা। এবারও দলীয় সাফল্যটা পাওয়া হলো না। তবে শেষটাই যে তিনি করলেন রানার্সআপ হয়ে।

শেষ ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নেমে বেশ কয়েকবার কারিকুরি দেখিয়েছেন মার্তা। তবে সেগুলো গোলে পরিণত করা যায়নি। এবারের অলিম্পিকটাও তার কেটেছে অম্ল-বিষাদ। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় নক আউটের আগের দুই ম্যাচে ছিলেন না মার্তা। ফাইনালে বদলি নামার পর নেতৃত্বের আর্মব্যান্ডও পরিয়ে দেওয়া হয় তাকে। ম্যাচ শেষে তার জন্য বরাদ্দ ছিল বড় অভিবাদন। রুপার পদকের জন্য যখন একে একে সবার নাম ঘোষণা করা হচ্ছিল, মার্তার নাম উচ্চারিত হতেই দর্শকদের উল্লাসে গোটা স্টেডিয়াম যেন কেঁপে ওঠে। যা প্রমাণ করে– দলীয় সাফল্যই সব নয়, ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা–আবেদন ও নামের ভার কোনো অংশে কম নয়!

২০০৪ এবং ২০০৮–এর পর তৃতীয় অলিম্পিক রৌপ্য পেয়ে ফুটবলের বুটজোড়া তোলার ঘণ্টা বেজে গেছে মার্তার। বিদায়বেলায় স্মরণ করলেন অতীত স্মৃতি, ‘যখন ২০০৪, ২০০৮ সালে রৌপ্যপদক পাই, আমি এখনকার মতো এতটা গর্ববোধ করিনি। কারণ আরও একটি অলিম্পিক ফাইনালে খেলতে ১৬ বছরের অপেক্ষা করতে হয়েছে। যা ব্রাজিলের কেউ বিশ্বাসও করেনি। এই পদক সেই গর্ব ফিরিয়ে এনেছে, দেখিয়েছে ব্রাজিলের মেয়েরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে জানে, প্রতিভা আছে এবং তার যথাযথ মূল্যায়ন দরকার।’

অবসর নিলেও, ফুটবল থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন না বলেও জানিয়েছেন মার্তা। তিনি বলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই অলিম্পিকে এটি আমার শেষ অংশগ্রহণ, এমনকি বিশ্বকাপ কিংবা কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিযোগিতায় আমাকে আর দেখা যাবে কি না সংশয় আছে। কিন্তু কখনই আমি ফুটবল থেকে দূরে থাকব না, এটি নিশ্চিত। আমি প্রথম ১৮ বছর বয়সে অলিম্পিকে খেলেছি। আর এখন আমি একঝাঁক তারুণ্যে ঘেরা এবং আশা করি আমার সমস্ত লড়াই-সংগ্রাম তাদের সহায়তা করেছে। আমি সেই দিনের দিকে তাকিয়ে যখন ১৪ বছর বয়সে ফুটবলের জন্য ঘর ছেড়েছি, এমন এক খেলার জন্য যা মেয়েদের জন্য উপযুক্ত মনে করা হতো না। এখন সেটি বদলেছে, বাড়তে জনপ্রিয়তাও।’

এএইচএস