মার্সেলো বিয়েলসা কোচ থাকাকালে অনেকটা জোর করেই নিজের স্কোয়াডে এনেছিলেন হাভিয়ের মাশ্চেরানো নামের আনকোরা এক কিশোরকে। পরবর্তীতে এই মাশ্চেরানোই হয়েছেন আর্জেন্টাইন ফুটবলের বড় কিংবদন্তি। লিওনেল মেসি যুগের আগে ছিলেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ড কিংবা সেন্টারব্যাক হিসেবে লম্বা সময় সার্ভিস দিয়েছেন আলবিসেলেস্তেদের। 

এবার হাভিয়ের মাশ্চেরানো নিজেই উঠিয়ে আনছেন আর্জেন্টিনা ফুটবলের নতুন প্রজন্মকে। অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপটা তার অধীনে খুব একটা ভালো করতে পারেনি আর্জেন্টিনার কিশোররা। চলতি অলিম্পিকেও দুই ম্যাচের মাঝে ১টায় হারতে হয়েছে আলবিসেলেস্তেদের। তবে এরমাঝেও দুর্দান্ত ছন্দে আছেন দলের অনেকেই। 

থিয়াগো আলমাদা, ইকি ফার্নান্দেজ, লুসিয়ানো গুন্দো, গুইলিমো সিমিওনে বা কেভিন জেননদের খেলা নিঃসন্দেহে মন ভরাবে আর্জেন্টিনার ফুটবল ভক্তদের। আর্জেন্টিনা ফুটবলের ভবিষ্যত ঠিক কতখানি শক্ত, তার একটা ছোট নমুনা হয়ত এবারের অলিম্পিক থেকেই পেয়ে যেতে পারেন ভক্তরা। 

থিয়াগো আলমাদা

আকাশী-সাদাদের অলিম্পিক স্কোয়াডের অধিনায়ক নিকোলাস ওতামেন্ডি। তবে এই সিনিয়র আসার আগে আর্মব্যান্ড ছিল থিয়াগো আলমাদার কাছে। ফুটবলের দুনিয়াতে আলমাদা নিজেকে জানান দিয়েছেন আরও বেশ কয়েক বছর আগেই। পাদপ্রদীপের আলো থেকে কিছুটা দূরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লিগে সময় পার করেছেন তিনি। জুলাই মাসেই যোগ দিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান লিগের ক্লাব বোটাফোগোতে। আটালান্টা ইউনাইটেডের ১০ নম্বর জার্সিতে অবশ্য নিজের জাতটা ঠিকই চিনিয়েছেন এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। 

আর্জেন্টাইন ফুটবলের মহাতারকা লিওনেল মেসি। সর্বকালের সেরাদের একজন বলা চলে অনায়াসে। ২৩ বছর বয়েসী আলমাদাকে মেসি পরবর্তী যুগে বড় দায়িত্বে দেখা গেলে খুব একটা অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সেন্ট্রাল মিডফিল্ড, রাইট মিডফিল্ড তো বটেই, দরকারে লেফট উইঙ্গার হিসেবেও খেলতে পারেন এই তারকা। এবারের অলিম্পিকের দুই ম্যাচে করেছেন দুই গোল। ২০২২ বিশ্বকাপে তাকে দলেও রেখেছিলেন কোচ স্কালোনি। 

ইজিকুয়েল ফার্নান্দেজ

ইরাকের বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচ যারা দেখেছেন তাদের কাছে নায়ক হয়ে গিয়েছেন ইজিকুয়েল ফার্নান্দেজ। মাঝমাঠে হাভিয়ের মাশ্চেরানোর দলের প্রাণভোমরা বলা যায় অনায়াসে। ইকি ফার্নান্দেজ নামেই বেশি পরিচিত ভক্তদের কাছে। ইংলিশ ক্লাব আর্সেনাল আর পর্তুগালের পোর্তো রীতিমতো লড়াইয়ে নেমেছে ২২ বছর বয়েসী এই মিডফিল্ডারের জন্য। 

খেলছেন দেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব বোকা জুনিয়র্সে। মূল পজিশন সেন্ট্রাল মিডফিল্ড। তবে আলমাদার মতো তারও বৈচিত্র্যতা দেখার মতোই। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে তো বটেই, দরকার অনুযায়ী অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবেও কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। ইরাকের বিপক্ষে ম্যাচে তার প্লে-মেকিং দলকে এনে দিয়েছে ৩ পয়েন্ট। নিজেও পেয়েছেন গোলের দেখা। 

কেভিন জেনন

কোপা আমেরিকার ফাইনাল দিয়ে আর্জেন্টিনার ক্যারিয়ার শেষ করেছেন আনহেল ডি মারিয়া। আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগের বামপ্রান্তে এখন বড় ভরসা অবশ্যই নিকোলাস গঞ্জালেস। রক্ষণ আর আক্রমণ দুইই দুর্দান্তভাবে সামাল দিতে সক্ষম ফিওরেন্তিনার এই উইঙ্গার। 

তবে ভবিষ্যতে এই পজিশনে দেখা যেতে পারে কেভিন জেনন নামের উদীয়মান এক তারকাকে। ইরাকের বিপক্ষে ম্যাচে মাঠে নেমেই বদলে দিয়েছিলেন ম্যাচের চিত্র। ছিল তার দুই অ্যাসিস্ট। দলের সবচেয়ে ভার্সেটাইল খেলোয়াড় বিবেচনা করা যেতেই পারে। এখন পর্যন্ত ৬টি ভিন্ন ভিন্ন পজিশনে খেলেছেন। মূলত লেফট মিডফিল্ডার। তবে থ্রি-ম্যান ব্যাকের বেলায় লেফট উইংব্যাক কিংবা প্রয়োজনে লেফট উইঙ্গার হিসেবেও খেলতে সক্ষম। 

রাইট উইং এবং অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার পজেশনে আর্জেন্টিনা দলে তারকার অভাব নেই। লিওনেল মেসিকে আদর্শ মেনে অনেকেই এসেছেন এই পজিশনে। কেভিন জেনন নিজেও তেমনই একজন। খেলতে পারেন ডিফেন্সিভ মিডেও। এই বছরই এসেছেন বোকা জুনিয়র্সে। ২৬ ম্যাচে পেয়েছেন ৪ গোল। অ্যাসিস্ট ৬টি। 

লুসিয়ানো গুন্দো

ঐতিহ্যগতভাবে আর্জেন্টিনায় দীর্ঘদেহী স্ট্রাইকারের অভাব চলছে অনেকটা দিন থেকে। আর্জেন্টিনা অবশ্য সবসময়ই স্ট্রাইকারদের স্বর্গরাজ্য। এদের মাঝে লুসিয়ানো গুন্দোকে আলাদাভাবে চেনা যায় তার উচ্চতার জন্য। ৬ ফুট ২ ইঞ্চির এই স্ট্রাইকার এরিয়ালে দুর্দান্ত। আর্জেন্টিনা জুনিয়র্সে ১৮ ম্যাচে ৫ গোল আর ৪ অ্যাসিস্ট তার। উচ্চতার সুবিধাটা বেশ ভালোই কাজে লাগিয়েছেন আগের ম্যাচে। 

এছাড়া মাশ্চেরানোর দলে আছেন ক্লদিও এচেভেরি। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে অসাধারণ এক হ্যাটট্রিক করে বিশ্বের নজর করেছেন এল দিয়াবলিতো খ্যাত এই কিশোর। এরইমাঝে তাকে দলে টেনেছে ইংলিশ জায়ান্ট ম্যানচেস্টার সিটি। জুটেছে জুনিয়র মেসি তকমা। উদীয়মান তারকায় ঠাসা এই দলটাকে আর্জেন্টিনা ফুটবলের পরের প্রজন্ম বলা চলে অনায়াসে। 

জেএ