যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে শেষ হলো কোপা আমেরিকার প্রশ্নবিদ্ধ এক আসর। যেখানে আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়ার মধ্যকার ফাইনাল শুরুর আগে তৈরি হয় তুমুল হট্টগোল। কলম্বিয়ান দর্শকদের বড় একটি অংশ নাকি বিনা টিকিটেই স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়তে চেয়েছিল, এমনকি অনেকে নিরাপত্তা বেষ্টনি টপকে নানা জায়গা দিয়ে গ্যালারিতেও প্রবেশ করেন বলে শোনা যাচ্ছে। সে সময় আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়ার ডাগআউটেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যা নিয়ে ফাইনাল শেষে কথা বলেছেন দুই দলের কোচ।

জানা গেছে, ম্যাচ শুরুর আগে নির্ধারিত সময়ে গেট খুলে দেওয়ার পর স্টেডিয়ামে উচ্ছৃঙ্খল কলম্বিয়ান ভক্তদের তোপের মুখে পড়ে মায়ামির হার্ডরক স্টেডিয়ামের নিরাপত্তাকর্মীরা। কলম্বিয়ান অধ্যুষিত সেই অঞ্চলের অনেকেই ফাইনালের ভেন্যুতে প্রবেশের চেষ্টা চালান। ফলে তৈরি হয় এক বিশৃঙ্খল পরিবেশের। স্টেডিয়ামের নিরাপত্তাকর্মীরা বাধ্য হন টিকিটবিহীন কলম্বিয়ান ভক্তদের ওপর চড়াও হতে। অবশ্য পুরোপুরি প্রটোকল মানতে পারেননি হার্ডরক স্টেডিয়ামের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ। ফলে কলম্বিয়ান ভক্তদের অনেকেই ঢুকে পড়েছেন বিনা টিকিটে।

পুরো বিষয়টি নিয়েই সেখানে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়। অর্থাৎ ফাইনালকে কেন্দ্র করে বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েও বিতর্ক এড়াতে পারেনি কনমেবল। চরম বিপাকের মাঝে পড়ে আয়োজকরা তাৎক্ষণিকভাবে স্টেডিয়ামের গেট বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর হার্ড রক স্টেডিয়ামে ফাইনাল পিছিয়ে দেয়া হয় আধঘণ্টার জন্য। কিন্তু তাতেও অবস্থা স্বাভাবিক না হওয়ায় খেলা মাঠে গড়ায় প্রায় দেড়ঘণ্টা পর। যেখানে নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য ড্র হওয়ার পর, ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। ১১২তম মিনিটে লাউতারো মার্টিনেজের একমাত্র গোলে পরে ১-০ ব্যবধানে আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হয়।

আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়ার কোচ লিওনেল স্কালোনি ও নেস্তর লোরেঞ্জো

কিন্তু ম্যাচের আগে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সেটি সামাল দেওয়ার মতো মানসিক দৃঢ়তায় পৌঁছাতে পারছিল না দুই দলেরই ডাগআউট। ফলে পরিবারের সদস্যরা নিরাপদে আছে কি না তা নিয়ে খেলোয়াড়দের মাঝেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যা ফাইনালের মতো মহারণের দিনেও দুই দলকে তিক্ত এক অভিজ্ঞতার মুখে ফেলে দেয়।

পরবর্তীতে ম্যাচের আগে হওয়া বিশৃঙ্খলা নিয়ে কলম্বিয়ান কোচ নেস্তোর লোরেঞ্জো বলেন, ‘আমরা লকাররুমে ততক্ষণে ওয়ার্মআপ শুরু করে দেই, তখনই খবর আসে খেলা আধাঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর আধাঘণ্টা আরও সময় মিলিয়ে সোয়া এক ঘণ্টা, কল্পনা করা যায় না। আমরা তখন আমাদের পরিবার ও বন্ধুদের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা চালাতে থাকি। তারা কোনো সমস্যায় পড়েছে কি না আমরা জানতাম না। এটা পুরো পরিবেশ এলোমেলো করে দিয়েছিল, একেবারে বিশৃঙ্খল।’

এমন পরিস্থিতিতে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের মাঝেও বেশ চাপ তৈরি হয় বলে জানান শিরোপাজয়ী কোচ লিওনেল স্কালোনি। তিনি বলেন, ‘এটি ব্যাখ্যা করা কিংবা ওই সময়ে বোঝা কঠিন ছিল, ফুটবলাররা স্টেডিয়ামের বাইরে পুরো একঘণ্টা অপেক্ষায় ছিল, চিন্তা ছিল কখন পরিবারের সদস্যরা নিরাপদে আসবে। এই অবস্থায় আমরা ম্যাচ খেলতে গিয়েছি। সবাই যার যার পরিবারকে বার্তা পাঠাচ্ছিল, কিন্তু বেশিরভাগেরই উত্তর আসছিল না। পরে বাইরের ভিডিও দেখেছি, পুরো অবস্থা সম্পর্কে ততক্ষণে সবাই জেনে যাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় কলম্বিয়ান ফুটবলারদেরও একই অবস্থায় পড়তে হয়েছিল। আমরা আসলেই বুঝতে পারছিলাম না কী ঘটছে। এটি খুবই অদ্ভুত ও বিরক্তিকর পরিস্থিতি।’

এএইচএস