আর্জেন্টিনার সোনালী প্রজন্ম বললে হয়তো বাড়াবাড়ি হবে না। যে প্রজন্ম টানা চারটি মেজর টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সর্বশেষ কোপা আমেরিকা দিয়ে। যার অগ্রভাগে নেতৃত্ব দিয়েছেন লিওনেল মেসি ও আনহেল ডি মারিয়া। প্রায় দেড়যুগ পর ডি মারিয়ার অবসরে এই দুজনের জুটি ভাঙছে। কলম্বিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলে জিতে রেকর্ড সর্বোচ্চ ১৬তম কোপা চ্যাম্পিয়ন হলো আর্জেন্টিনা। তাদের শিরোপা উৎসবের মঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘নম্বর এলেভেন’ আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলে দিলেন।

এমন বিদায়ই তিনি চেয়েছিলেন, যা ফাইনাল শেষে জানিয়েছেন নিজের প্রতিক্রিয়ায়। বিদায়ী ম্যাচের প্রায় পুরো সময়ই (১১৬ মিনিট) খেলেছেন ডি মারিয়া। সাম্প্রতিককালের কোনো ম্যাচে এত লম্বা সময় তার মাঠে থাকার ঘটনাও বিরল। তবে ফাইনাল এবং নিজের বিদায়ী ম্যাচে লিওনেল মেসির অনুপস্থিতি, সবমিলিয়ে আলবিসেলেস্তেদের নেতৃত্বভারটা যে তার কাঁধে উঠেছিল পুরোদমে। যা তিনি আক্রমণভাগের সামনে থেকে বেশকিছু সুযোগ তৈরি করে সুদে-আসলে পালন করেছেন। এরপর জিতেছেন ম্যান অব দ্য ফাইনাল পুরস্কারও। 

এর আগে ম্যাচের শুরুতে ডি মারিয়ার দুই কন্যা সন্তান ফাইনালের বল নিয়ে এসে বাবার হাতে তুলে দেন। সেই বল নিয়ে মাঝমাঠ থেকে গড়ায় আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়ার মহারণ। এমন বিজয়রাঙা বিদায়ের পর বাধভাঙা উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়ার কথা ডি মারিয়ার। জয়ের আনন্দ ও বিদায়ের অশ্রু মিলেমিশে ৩৬ বছর বয়সী এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার প্রতিক্রিয়া জানালেন এভাবে, ‘এটি (শিরোপা জয়) আগেই লিখা হয়েছিল এবং আমি এমনটাই চেয়েছিলাম। এমন মুহূর্ত পাওয়ার স্বপ্ন ছিল আমার এবং সেটি সতীর্থদেরও বলেছি। আমার মাঝে অনেক সুন্দর অনুভূতি কাজ করছে।’

ফাইনালের বল নিয়ে মাঠে ঢুকে বাবা ডি মারিয়ার হাতে তুলে দেন দুই সন্তান

কোপায় আর্জেন্টিনার রেকর্ড সর্বোচ্চ চ্যাম্পিয়নশিপ জয় নিয়ে এল ফিদেও বলেন, ‘মনে হয়েছিল এটি খুব সহজ, কিন্তু এই যাত্রা কঠিন ছিল। আমি নিজেকে একপাশে রাখছি, আরেকপাশে থাকা আর্জেন্টিনার এই প্রজন্মের কাছে আমি অনেক কৃতজ্ঞ, আমি যেমনটা চেয়েছিলাম সেটি পূরণে তারা নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে লড়েছে। দারুণ এই অর্জন নিয়েই আমি বিদায় নিচ্ছি। আমি আগের প্রজন্মের সঙ্গে বিশেষ কিছু জয়ের আশা করেছিলাম, যা তারা ডিজার্ভ করত।’

একসঙ্গে দেড়যুগ আর্জেন্টিনার জার্সিতে খেলেছেন ডি মারিয়া ও মেসি। যদিও তার শেষ ম্যাচে পুরো সময় দীর্ঘদিনের বন্ধুকে মাঠে পেলেন না চিরচেনা এই ১১ নম্বর জার্সিধারী। ৬৬ মিনিটে অ্যাঙ্কলের ইনজুরি নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন মেসি। তার কান্না যেন বাধ মানছিল না কিছুতেই। পরে সেই বন্ধু থেকে পাওয়া অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরেই কলম্বিয়ার কাছ থেকে চ্যাম্পিয়ন মুকুট এনে দিয়েছেন ডি মারিয়া। তবে মেসির জন্য তার কিছুটা আক্ষেপ শোনা গেল, ‘আমি খুশি নই, কারণ সে (মেসি) এভাবে মাঠ ছেড়েছে। ডানপায়ের অ্যাঙ্কলে চোট পেয়েছে সে। তবে জয় পেয়েছি এবং এটাই মেসির জন্য আনন্দের। এটি সত্যিই দারুণ এক রাত।’

এ নিয়ে তিন বছরে চারটি শিরোপা জিতলো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। এর মধ্যে এবারই প্রথম কোনো ফাইনাল শেষ হয়েছে, যেখানে ডি মারিয়া কোনো গোল পাননি। মারাকানায় ব্রাজিলের বিপক্ষে কোপা, ইতালির বিপক্ষে ফিনিলিসিমা এবং ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে ফ্রান্সের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের ফাইনালে গোল করেছিলেন ৩৬ বছর এই বয়সী তারকা। সবমিলিয়ে তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে খেলেছেন ১৪৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ।

ডি মারিয়া বিদায়বেলায় আর্জেন্টিনার হয়ে ষষ্ঠ কোনো মেজর টাইটেল জিতেছেন। ২০২২ বিশ্বকাপ, ২০২১ এবং ২০২৪ কোপা আমেরিকা, ২০২২ ফিনালিসিমা, অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ এবং ২০০৮ অলিম্পিকে গোল্ড মেডেল জিতেছেন আর্জেন্টিনার জার্সিতে।

এএইচএস