বার্লিনে আর মাত্র একটি রাতের অপেক্ষা। রোববার যেখানে ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট দখলে নামবে ইংল্যান্ড ও স্পেন। তবে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের আগে আলোচনায় ইংল্যান্ডের ২২ বছর বয়সী অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার কোল পালমার। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমগুলো তাকে নিয়ে সতর্ক থাকার কথা জানিয়েছেন। হ্যারি কেইন, বুকায়ো সাকা, ফিল ফোডেন কিংবা জ্যুড বেলিংহামের মতো তারকারা থাকতেও, কেন পালমারের ওপর প্রতিপক্ষের নজর সেই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবে এসে যায়!

সেটাই স্পষ্ট করা যাক। দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোর ফাইনাল খেলতে যাচ্ছে ইংলিশরা। গত আসরে ইতালির কাছে হেরে তাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল। তবে প্রথমবারের মতো এবার থ্রি লায়ন্সরা ফাইনালে স্পেনের মোকাবিলা করবে। অথচ স্প্যানিশদের বিপক্ষে দ্বিতীয়বার ফাইনাল খেলতে নামবেন পালমার। চেলসির এই উইঙ্গার এর আগে গত বছর অনূর্ধ্ব-২১ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে স্পেনের বিপক্ষে খেলেছেন। যেখানে পালমারের ফ্রি-কিক থেকে দেওয়া দুর্দান্ত এক গোলেই ইংলিশরা শিরোপা উৎসবের পথে এগিয়ে গিয়েছিল। তাই ঘুরেফিরে তার প্রসঙ্গ আসছে ইংল্যান্ড-স্পেন ম্যাচের আগে।

সেই গোলের পর ইংলিশরা ম্যাচ জেতে ২-১ ব্যবধানে। গোলের পর উদ্দাম উল্লাসে মাতেন পালমার, যা আরও ক্ষেপিয়ে দিয়েছে স্প্যানিশ ‘লা রোহা’ শিবিরকে। এ ছাড়া সতীর্থদের সঙ্গে উদযাপনে যোগ দেওয়ার আগে তিনি উদ্দেশ্যমূলক অঙ্গভঙ্গি করেন স্প্যানিশ ডাগআউটের সামনে দাঁড়িয়ে। পালমারের উদ্ধত আচরণে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল পুরো স্পেন ডাগআউট, দুই দলের খেলোয়াড়রাও জড়িয়ে পড়েন হাতাহাতিতে। হাতাহাতিতে জড়িয়ে লাল কার্ড দেখেন স্পেনের ফিটনেস কোচ কার্লোস রিভেরা ও ইংল্যান্ডের সহকারী কোচ অ্যাশলে কোল।

পালমারের উল্লাসের পর উত্তপ্ত ইংল্যান্ড-স্পেনের অনূর্ধ্ব-২১ দল

এরপর হাফটাইমের বাঁশি বাজার পর ড্রেসিংরুমে যাওয়ার পথে টানেলে আবারও বিতর্কে জড়ায় দুই দলের খেলোয়াড়রা। যার রেশ দেখা দেখা যায় দ্বিতীয়ার্ধেও। যখন স্পেনের অ্যাবেল রুইজের নেওয়া পেনাল্টি শট ইংলিশ গোলরক্ষক জেমস ট্রাফোর্ড ঠেকিয়ে দেন, তখন আবারও বিবাদে জড়ান ইংল্যান্ডের মরগান গিবস-হোয়াইট ও স্পেনের অ্যান্তনিও ব্লাঙ্কো। ফরে দুজনকেই লাল কার্ড দেখান রেফারি।

যদিও ওই ম্যাচের পর উদ্দেশ্যমূলক কিছু করেননি বলেও মন্তব্য করেন পালমার, ‘এটি আমার জন্য বিশাল কিছু। কারণ আমরা এই মুহূর্তেল জন্য অনেক বছর অপেক্ষা করেছি, তাই আমি এভাবে উদযাপন করেছিলাম। হয়তো কিছুটা বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছিল, তবে (ম্যাচ জিতে) আমি খুশি।’ বিপরীতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান স্প্যানিশ ডিফেন্ডার সার্জিও গোমেজ, ‘এটি আমাকে অবাক করেছে। সে (পালমার) আমাদের কাছে ক্ষমা পর্যন্ত চায়নি, যা তার অন্য সতীর্থরা করেছে। আমরাও উদযাপন করেছি, তবে ভিন্নভাবে।’

অন্যদিকে, এবারের ফাইনালের আগে পালমারের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রদ্রিকে দেশটির সংবাদমাধ্যম এএস প্রশ্ন করেছিল, কাকে ম্যাচে সামনে পেতে চাইবেন না। সেই প্রসঙ্গ এড়িয়ে জবাবে রদ্রি বলেন, ‘তাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে। আমি ফিল ফোডেনকে ভালোবাসি, কারণ তাকে আমি ভালো করে চিনি। সে এমন একজন খেলোয়াড় যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, কারণ অল্প জায়গা পেলেও সে বিপদজনক হওয়ার মতো দক্ষতা আছে। আমি শুধু একজন খেলোয়াড়ের প্রতি ফোকাস করতে চাই না। আমি পুরো ইংল্যান্ড স্কোয়াড নিয়ে ভাবছি, আমরাও আমাদের অস্ত্র নিয়ে একের পর এক আক্রমণে যাব।’ তবে আরেক স্প্যানিশ ডিফেন্ডার মার্ক কুকুরেয়া হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমার মতে ভালো হবে যদি সে মাঠে না নামে, যেন বেঞ্চেই থাকে।‘

অন্যদিকে, পালমারও কথা বলেছেন আসন্ন ফাইনাল নিয়ে। তিনি বলেছেন, ‘এটি বড় ম্যাচ। আমরা তাদের সঙ্গে গত বছর অনূর্ধ্ব-২১ ইউরোর ফাইনালে খেলেছি, ইংল্যান্ড বনাম স্পেন। সেটি দারুণ এক লড়াই ছিল, তবুও আমি সেটি স্মরণ করতে পারছি না।’ হয়তো আগের বিতর্ক নতুন করে সামনে আনতে চাইছেন না এই চেলসি তারকা। তবে স্পেন-ইংল্যান্ড ম্যাচে তার প্রসঙ্গ আসতে পারে ঘুরেফিরে।

পালমার এবারের ইউরোতে শুরুর ম্যাচগুলোতে খেলার সুযোগ পাননি। তবে তিনি যে ইংলিশ কোচ গ্যারি সাউথগেটের দারুণ অস্ত্র, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। সর্বশেষ সেমিফাইনালেও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তার দারুণ এক অ্যাসিস্টে ইংল্যান্ডের একমাত্র গোলটি করেছেন ওলি ওয়াটকিন্স। এ ছাড়া ম্যাচজুড়েও বেশকিছু সুযোগ তৈরিতে অবদান ছিল পালমারের।

এএইচএস