আরও একবার ইউরো থেকে খালি হাতে ফিরতে হলো কিলিয়ান এমবাপেকে। বিশ্বকাপের মঞ্চে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা এই ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ডকে মহাদেশীয় আসর বিদায় জানালো খালি হাতে। মিউনিখের মাঠে হতাশার নীলে ডুবলেন এমবাপ্পে আর তার পুরো দল। স্পেনের কাছে ২-১ গোলের হারে শেষ চার থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে তাদের। 

এমন ম্যাচে ফ্রান্সের বড় ভরসা ছিলেন অধিনায়ক এমবাপ্পে। কিন্তু সেখানে তার কাছ থেকে দেখা গেল না জাদুকরী কোনো মুহূর্ত। ২০২২ এর লুসাইলে কক্ষপথ হারানো ফ্রান্সকে ফিরিয়ে এনেছিলেন একাকী হাতে। কিন্তু স্পেনের বিপক্ষে এমবাপ্পে যেন মোমবাতির নিভু নিভু। ফ্রেঞ্চ তারকার এমন অবস্থা শুধু ইউরোর এক ম্যাচে নয়।

নিজ মহাদেশের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নয় ম্যাচ পার করেছেন এমবাপ্পে। কিন্তু তাতে করেছেন মোটে ১ গোল! প্রজন্মের সেরা এই স্ট্রাইকারের পাশে এমন রেকর্ড নিশ্চিতভাবেই বেমানান। এবারের ফ্রান্সের স্কোয়াডের অবস্থানই এমন। প্রথম দল হিসেবে তারা সেমিফাইনালে উঠেছে কোনো প্রকার ওপেন প্লে তে থেকে গোল না করেই। ৩ গোল পেয়েছে দলটি। যার মধ্যে দুটি এসেছিল আত্মঘাতী থেকে। আর অন্য গোল আসে পেনাল্টি সূত্রে। 

নিজের পরিস্থিতি উপলব্ধি করেই কিনা ইউরো শুরুর আগে এমবাপ্পে বলেছিলেন, ইউরো বিশ্বকাপ কিংবা কোপা আমেরিকার চেয়েও কঠিন। তবে এমন কিছু মানতে নারাজ লাতিন আমেরিকার দলগুলো। আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি সরাসরিই নাকচ করেছেন এমন দাবি। বরং কোপা আমেরিকার মান দেখতে ইউরোপের দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তাবটাও দিয়ে রেখেছেন তিনি। 

ইউরোতে গোল না পেলেও বিশ্বকাপে হরহামেশাই গোল পেয়েছেন ফ্রেঞ্চ এই সেনসেশন। দুই বিশ্বকাপ মিলিয়ে করেছেন ১২ গোল। বয়স মাত্র ২৫। সুযোগ আছে আরও দুই কিংবা তিন বিশ্বকাপের। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসা। সাবেক এই তারকার গোল ১৬টি। এমবাপে ক্লোসাকে ছাড়িয়ে যাবেন, এমন বাজি ধরা যেতেই পারে।

কিন্তু সেই এমবাপ্পেই কিনা ইউরোতে করেছেন মোটে ১ গোল। চলতি আসরে পোল্যান্ডের বিপক্ষে তার সেই গোলটাও এসেছে পেনাল্টি থেকেই। ওপেন প্লে থেকে কোনো গোল না পাওয়া এমবাপ্পে সেমফাইনালের দুই ঘণ্টা পার করেছেন হতাশায়। আগের আসরে তার পেনাল্টি মিসের কারণেই সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে বাদ পড়েছিল ফ্রান্স। 

ইউরোতে সামগ্রিকভাবেই গোল করা খানিকটা কঠিন এমন সত্য মেনে নেবেন থমাস মুলার নিজেও। বিশ্বকাপে জার্মানির জার্সিতে ১০ গোল করে ফেলা এই তারকা ইউরোতে কখনো গোলই করতে পারেননি! ১৭ ম্যাচ শেষেও রমডয়টার খ্যাত মুলারের ইউরো গোলের সংখ্যাটা আটকে রইল শূন্যতে। 

মূলত ইউরোতে প্রায় সমশক্তির দলগুলোর বিপক্ষেই খেলতে হয় দলগুলোকে। বিপরীতে বিশ্বকাপে গ্রুপিংয়ের সুবাদে এশিয়া, ওশেনিয়া কিংবা উত্তর আমেরিকার তুলনামূলক সহজ দেশগুলোর বিপক্ষে খেলার সুযোগ পান ইউরোপিয়ান তারকারা। যেখানে ট্যাকটিক্স ছাড়াও শারীরিকভাবে অনেক বেশি সুবিধা পাবেন ইউরোপের ফুটবলাররা। 

ফুটবল বাণিজ্য, প্রযুক্তি সব ব্যবহারই ইউরোপিয়ান ফুটবলকে এগিয়ে রেখেছে সবদিক থেকে। লাতিন আমেরিকায় ফুটবলের বিস্তৃতি যেখানে আর্জেন্টিনা ব্রাজিল কিংবা কিছুক্ষেত্রে উরুগুয়ে পর্যন্ত সীমাবদ্ধ, সেখানে ইউরোপ উপহার দিয়েছে একের পর এক প্রজন্মের সেরা স্কোয়াডগুলো। 

কিন্তু এমবাপ্পে, মুলার আর রোনালদোরা তো বৈশ্বিক তারকা। বিশ্বকাপের পাশাপাশি তাল মিলিয়ে রোনালদোও পেয়েছেন ইউরোতে গোল। ১৪ গোল আছে তার নামের পাশে। নেশন্স লিগেও সমশক্তির দলের বিপক্ষে এমবাপে করেছেন ৭ গোল। ইউরোতে গোল করতে না পারার পেছনে তাই শক্ত প্রতিপক্ষের অজুহাত হয়ত খুব একটা শক্ত নয় এমবাপে-মুলারদের জন্য। 

জেএ